#নীলান্তিকা
-“তোকে খালামনি ডাকে। নিচে যা।”
মৃণী বান্ধবীদের সাথে গল্প করছিলো। হঠাৎ দিনেয এসে একথা বলায় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এভাবে তাকানো দেখে দিনেয আবার বললো-
-“খালামনি আমার দিকে তাকাইতে বলেনাই, তোরে নিচে যাইতে বলছে।”
-“ভাইয়া, একটু আগে মা এদিকে গেলো। তখন তো আমাকে বললো না। আর সবাই তো এখানে, নিচে একটা পোকা ও নাই। তাহলে মা নিচে কি করে?”
কথাটা শুনে থতমত খায় দিনেয। তারপর ধমক দিয়ে বলে-
-“ওই, এতো কথা কিসের? গেলে যা না গেলে থাক।”
-“আরে যাচ্ছি তো, রাগ করো কেনো।”
নীলান্তিকা এতক্ষণ চুপ করে ছিলো। মৃণী নিচে যাবার জন্যে উঠে দাড়াতেই সে বললো-
-“মৃ-মৃণী, আমিও যাই চল।”
বলে উঠে দাড়াতেই দিনেয অস্থির হয়ে বললো-
-“আরে না না, ওকে একা যেতে হবে।”
অবাক হয়ে তাকালো নীলান্তিকা। দিনেয আবার বললো-
-“না মানে, কু… মানে খালামনি বললো একা যেতে। কি যেনো ইম্পর্ট্যান্ট কথা। তাই…”
মৃণী বললো-
-“বাবারে, কি এমন বলবে যে এভাবে একা ডাকে। আচ্ছা নীলান্তিকা তোর আসতে হবেনা। থাক তুই। আমি দেখে আসি।”
বলেই মৃণী চলে গেলো। নীলান্তিকা আর কিছু না বলে ফাতিমা আর আরিফার দিকে তাকিয়ে হাসলো। দিনেয এখনও সেখানেই দাড়িয়ে আছে। একটু হেসে তার সামনে দাড়িয়ে তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বললো-
-“হাই লেডিস…”
নীলান্তিকা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আরিফা আর ফাতিমা তো “হাই লেডিস” বলতেই রীতিমত গল্প জুড়ে দিলো দিনেয এর সাথে। নীলান্তিকার কেমন যেনো ভালো লাগলোনা। তাই সে সেখানে থেকে চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো। হাঁটতে নিলেই দিনেয একটু চেঁচিয়ে বলে উঠলো-
-“এক মিনিট…”
আটকে গেলো নীলান্তিকার পা। পেছন ফিরে তাকালো সে। দিনেয নীলান্তিকার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো-
-“চকলেট আর মিষ্টির থালাটা তুমি সাজিয়েছো?”
চোখ কপালে উঠে গেলো নীলান্তিকার। লোকটা ওকে তুমি করে বলতেছে। প্রথম কথাতেই? কেনো আপনি বলতে পরেনা? হোক নীলান্তিকা ছোট, তবুও আপনি বলা উচিত। নীলান্তিকা হালকা তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখে বললো-
-“জ্বী, কোনো ভুল হয়েছে?”
-“আরে নাহ নাহ, অনেক সুন্দর হয়েছে সাজানো। আই লাইক ইট।”
-“আচ্ছা।”
বলেই আবার চলে যেতে লাগলো নীলান্তিকা।
-“বলছিলাম কি…”
দিনেয এর কথায় আবারো থমকে গেলো নীলান্তিকা। পেছন ফিরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। দুহাতের তালু ঘষতে ঘষতে বললো দিনেয-
-“তোমাকে তুমি বললাম বলে তুমি আবার কিছু মনে করলে না তো?”
নীলান্তিকা দুই সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলো দিনেয এর দিকে। চোখের মধ্যে অদ্ভুত কিছু আছে লোকটার। বেশিক্ষণ তাকানো যায়না, ঘোর লেগে যায়। তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে বললো-
-“কিছু মনে করিনি।”
-“তাহলে গুড গার্ল।”
আরিফা আর ফাতিমা এতক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলো সব। কিছু বলছিলো না। এবার ফাতিমা বলে উঠলো-
-“আরে ও হচ্ছে উদার মনের মানুষ। কিছুতেই কিছু মনে করেনা। কিরে আরিফা বল।”
বলেই কনুই দিয়ে একটা গুতো দিলো আরিফাকে ফাতিমা। সাথেসাথে আরিফাও হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে বললো-
-“হ্যাঁ হ্যাঁ, আমাদের বান্ধবী খুবই ভালো আর সুন্দরী।”
সাথেসাথেই নীলান্তিকা একটা রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো দুই বান্ধবীর দিকে। সাথেসাথে চুপসে গেলো দুজনেই। দিনেয নীলান্তিকার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বললো-
-“আসলেই সুন্দরী…”
ঝট করে ফিরে তাকালো নীলান্তিকা। দিনেয ভাবলো হয়তো শুনে ফেলেছে শেষের কথাটা মেয়েটা। তাই ঠোঁটের হাসিটা প্রশস্ত করে বললো-
-“এনিওয়ে, আমার সাথে একটু ওদিকে আসবে? ওই থালাগুলো নিয়ে কিছু দরকার ছিলো। কাম…”
বলেই নীলান্তিকার উত্তরের অপেক্ষা না করে হাঁটা ধরলো দিনেয। দিনেয একটু দূরে যেতেই আরিফা বললো-
-“যাও যাও, থালার দরকারে ডাকে না মালার দরকারে ডাকে দেখে আসো।”
নীলান্তিকা দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-“ফালতু কথা না বলে চুপ কর।”
সাথেসাথেই আরিফা আর ফাতিমা ঠোঁটে আঙ্গুল দিলো। নীলান্তিকা হনহন করে দিনেয এর পিছু পিছু হাটতে লাগলো। পেছন থেকে ফাতিমা আর আরিফা হাসতে লাগলো।
.
.
.
ঘরের মধ্যে পিনপতন নিরবতা। একটা মানুষ ও নেই। মা-ই বা কোথায় গেলো? পুরো ঘর খুঁজেও তো পাওয়া গেলোনা। ভাবতে ভাবতে তূর্যের রুমের দিকে এগোলো মৃণী। ঐ একটা ঘরই খোঁজার বাকি রয়েছে। সেখানেও যদি না পায় তাহলে গিয়ে দিনেয কে আচ্ছা করে কটা দিবে।
দরজা খুলে উকি দিতেই হাতে টান পড়লো মৃণীর। টাল সামলাতে না পেরে করো ওপর গিয়ে পড়লো সে। সাথেসাথে দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। ঘরটা অন্ধকার, কেউ দেয়ালের সাথে চেপে ধরেছে তাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় চিৎকার করার জন্য গলা দিয়ে স্বর বেরুচ্ছেনা মৃণীর। কোনরকমে থেমে থেমে বললো-
-“ক… ক… কে?”
দেয়ালের সুইচ বোর্ডে টুস করে একটা শব্দ হলো। রুমের লাইট জ্বলে উঠলো। মৃণী তাকিয়ে দেখে কুঞ্জন তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে দাড়িয়ে আছে। ঠোঁটে তার দুষ্টুমি ভরা হাসি। রাগী রাগী চোখ করে বললো মৃণী-
-“এখন যদি আমি হার্ট এ্যাটাক করে মারা যেতাম তাহলে কি হতো?”
-“আরেকটা প্রেম করতাম।”
-“কি খারাপ লোক গো তুমি!”
-“সেটাতো শুধু তোমার জন্য। আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির জন্যতো আমি খুব ভালো আর ভদ্র।”
-“সরো।”
বলেই ধাক্কাতে লাগলো মৃণী কুঞ্জন কে। কুঞ্জন মৃণীর দুহাত দেয়ালের ওপর দুদিকে চেপে ধরে বললো-
-“আরে আরে, প্রেম করবো শুনে রাগ করলে নাকি। আচ্ছা তাহলে প্রেম করবোনা।”
-“তাহলে কি করবে শুনি?”
-“কাঁদবো।”
-“কি বলে কাঁদবে?”
কুঞ্জন গলার স্বর কিছুটা কাঁদো কাঁদো করে বললো-
-“আমার ফুপাতো বোন মৃণী খুব ভালো ছিলোরে ইশ, আমার বোন টা আমাদের ছেড়ে চলে গেলো ইশ।”
মৃণী জোর করে নিজের হাত ছাড়িয়ে কুঞ্জন এর বুকে একটা কিল বসালো। কিল খেয়ে কুঞ্জন আবার মৃণীর হাত দুটো চেপে ধরলো। তারপর সুর করে বললো-
-“এতো যে নিঠুর তুমি জানা ছিলোনা…”
-“এবার ছেড়ে না দিলে জোরে চিৎকার দিবো।”
-“দাওনা। গান বাজছে শুনতেছ? গানের সাথে তোমার চিৎকার মিলে মিউজিক হয়ে যাবে।”
-“সত্যি দিবো কিন্তু।”
-“হ্যাঁ সত্যিই দাও।”
-“আ……….”
মৃণী চিৎকার দিতে নিলেই হঠাৎ তার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। চেপে ধরেছে ঠোঁট কুঞ্জন। হাত দিয়ে নয়, অন্যভাবে। অজানা কোনো অনুভূতিতে ডুব দিলো দুজনে।
.
.
.
-“তুমি মিষ্টির থালাটা নাও, আমি চকলেটের থালাটা নিচ্ছি।”
ভ্রু কুঁচকে তাকালো নীলান্তিকা। এভাবে তাকানো দেখে দিনেয একটু ভাব নিয়ে বললো-
-“এভাবে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতে হইবেনা ললনা, আমি জানি আমাকে সুন্দর লাগিতেছে। আপাতত আপনি মিষ্টির থালাটা লইয়া আসেন, সবাইকে সার্ভ করিবো।”
বলেই আগে আগে হাঁটা ধরলো। দিনেয যেতেই ফিক করে হেসে দিলো নীলান্তিকা। ঠোঁট চেপে হাসি আটকে মিষ্টির থালাটা হাতে নিয়ে দিনেয এর পেছন পেছন যেতে যেতে বললো-
-“ভাইয়া আমরা এসব কাজ কেনো করছি? আরো তো আছে…”
ঝট করে পেছন ফিরলো দিনেয। হঠাৎ এভাবে পেছন ফেরায় নীলান্তিকার সাথে ধাক্কা লেগে ও লাগেনি। মুখে অসহায় ভাব এনে বললো দিনেয-
-“মেরে ফেলবে আমাকে?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো নীলান্তিকা-
-“আমি কি করলাম?”
-“এতো জোরে কেউ ভাইয়া বলে ডাকে? একটু আস্তে ডাকবেনা? আমার কান যদি ফেটে যেতো?”
নীলান্তিকা মুখ কাঁচুমাচু করে বললো-
-“আমিতো আস্তেই বললাম…”
দিনেয আবার হাঁটা ধরলো। হাটতে হাটতে বিড়বিড় করে বললো-
-“ভাগ্যিস হার্ট এ্যাটাক করিনি।”
.
.
.
ফাতিমা আর আরিফার সামনে এসে চকলেটের থালাটা এগিয়ে দিয়ে দিনেয বললো-
-“লেডিস, তোমাদের জন্য তোমাদের মতই সুইট সুইট চকলেট।”
-“থ্যাংক ইউ ভাইয়া।”
বলেই দুজনে একটা করে চকলেট নিলো। পাশেই নীলান্তিকা দাড়িয়ে আছে মিষ্টির থালা নিয়ে। দুজনে চকলেট খাচ্ছে আর নীলান্তিকার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। দিনেয সামনে থাকায় অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করা ছাড়া কিছুই করতে পারছেনা নীলান্তিকা।
হঠাৎ কোথা থেকে তানজির আর আবির এসেই চেঁচিয়ে সালাম দেয় একসাথে-
-“আসসালামুআলাইকুম অল।”
সবাই একসাথে সালামের উত্তর নেয়। আবির দিনেয এর কাঁধে ভর দিয়ে চকলেট খেতে খেতে বলে-
-“আপনারা মৃণী ভাবীর বান্ধবী তাইনা?”
আরিফা একটু অবাক হয়ে বলে-
-“ভাবী…”
আবির হেসে বলে-
-“আমরা তূর্যের বন্ধু, মানে আমরা কুঞ্জন এর বন্ধু, মানে দিনেয এর। মানে আমরা সবাই একসাথে পড়েছি আরকি। কুঞ্জন এর বন্ধু হিসেবে মৃণী ভাবীই হলো তাইনা…”
আরিফা জোর পূর্বক একটা হাসি হেসে বললো-
-“ওহ আচ্ছা আচ্ছা।”
তানজির কিছু বলছেনা। শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে। নীলান্তিকার দিকে তাকিয়ে আবির বলে উঠলো-
-“এইযে মিষ্টি…”
সাথেসাথে দিনেয প্রায় অনেক জোরেই হাসতে হাসতে একটা কিল দেয় আবিরের পিঠে, যেনো মশকরা করে মারলো। আবির হেসে বললো-
-“মানে, মিষ্টি… একটা মিষ্টি নিবো আপু।”
নীলান্তিকা ওহ বলে এগিয়ে দিলো থালাটা। ফাতিমা অনেকক্ষন থেকে চুপ। আরিফা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো-
-“কিরে, এভাবে চুপচাপ আছিস ক্যান?”
-“নাহ্, কিছুনা।”
বলেই তানজির এর দিকে তাকালো ফাতিমা। ওই তাকানো তে কিছু একটা ছিলো। তানজির ফাতিমার দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলো। বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছে খুব।
- ভালবাসা কখনো শেষ হয় না। বেচে থাকে হাজার বছর তাই ভালবাসা এত মধুর।।#শুধু_একবার_বলো ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_25 & Last
..
তমা, অথৈ আরও কয়েকজন মিলে দিশাকে পার্লারে নিয়ে গেছে কিছুক্ষন আগে। বরের বাড়ি থেকে সাজসজ্জার সবকিছুই আগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো কিছুর ত্রুটি রাখেনি ওরা। পার্লারে একটা জ্যান্ত লাশ বসে আছে, আর সেই লাশটাকেই যেনো সাজিয়ে গুছিয়ে তার মধ্যে প্রান দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। তমা আর অথৈ পুরোপুরি স্বাভাবিক। দিশা কিছুতেই বুঝতে পারছে না সবটা জানার পরেও ওরা কিভাবে এটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছে? মাথাটা ঝিমঝিম করছে দিশার। কিছুই ভাবতে পারছে না সে।
..
.
বাসায় মেহমান ভর্তি। রুমে বসে আছে দিশা। আশেপাশে আরো অনেকেই আছে। কিছুক্ষন আগে পার্লার থেকে বাসায় এসেছে সে। তমা আর অথৈ নানান কাজে ব্যস্ত। দিশার হুশ নেই কোনো দিকে। বসে থেকে শুধু চোখের পানি ফেলছে সে। আরিয়ানের কথা খুব মনে পরছে ওর। আজ থেকে সে চিরতরে হারিয়ে যাবে আরিয়ানের জীবন থেকে। ভাবতেই বুকটা হাহাকার করে উঠছে তার। ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু না ভেবেই আরিয়ানের নাম্বারে ডায়াল করলো দিশা। ফোন ওয়েটিং। কেটে দিলো সে। চোখ দিয়ে পানি পরছে অহরহ। কয়েক সেকেন্ড পরেই ফোনটা বেজে উঠলো দিশার। আরিয়ান কল করেছে। কাপা কাপা হাতে রিসিভ করে কানে ধরলো সে। কিছুই বলছে না। ওইদিকে আরিয়ান বার বার হ্যলো হ্যালো করেই যাচ্ছে। দিশা কিছু বলতে যাবে তখনই আরিয়ান বললো..
– কথা যখন বলবেই না তাহলে কল দেওয়ার মানেটা কি?
– তু তুমি আসবেনা আমার বিয়েতে? কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল দিশা।
– কাদছিস কেন দিশা?
– কাদছিনাতো…
– হুম কাদিস না, আজ থেকে তোর নতুন জীবন শুরু। হাসিখুশি থাক, দেখবি তোর সারাজীবন হাসিখুশিতেই কাটবে।
.
আরিয়ানের কথায় দিশা হাউমাউ করে কেদে দিলো। আরিয়ান অস্থির হয়ে বলতে লাগলো..
– আরে কি হলো, আবারও কান্নাকাটি শুরু করে দিলি। এইরকম পাগলামি করলে হয়? আজ না তোর বিয়ে.. তাহলে এইরকম মরাকান্না করছিস কেন?
– তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না আরিয়ান। প্লিজ আমাকে তুমি নিয়ে যাও। এখনও সময় আছে।
দিশার কথায় এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেলো আরিয়ান। কিছুক্ষন নিরব থেকে বললো..
– আমার অনেক কাজ আছে দিশা, আমি রাখছি।
দিশা চোখের পানি মুছে নিলো আরিয়ানের কথায়। বললো..
– আজ আসবে না আমার বিয়েতে?
– ব্যস্ত আছিতো, সময় পেলে আসবো।
– হুম এসো, তা নাহলে হয়তো আর কখনো আমাকে দেখতে পাবেনা। চোখের শেষ দেখাটা দেখে যেও আমাকে। আজ যে চিরবিদায় নিবো আমি।
দিশার এই কথায় বেশ অবাক হয়ে বললো..
– কি বলছিস এইসব দিশা? শেষ দেখা মানে? আর চিরবিদায় নিবি মানেটা কি?
– নাহ মানে, আজ তো আমার বিয়ে, এই বাড়ি থেকে সারাজীবনের জন্য চলে যাবো। তাই বললাম আরকি।
– ওহ তাই বল..
– আচ্ছা রাখছি।
– দিশা শোন
– বলো..
– আজ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে বুঝলি..
দিশা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। বললো..
– তার চেয়ে বড় সারপ্রাইজ আজ তোমাদের সবার জন্য অপেক্ষা করছে।
ফোনটা রেখে দিলো দিশা। চোখের পানিগুলো বাধ মানছে না আজ। চারিদিকে একবার চোখ বুলালো দিশা। সবাই যে যার মতো কাজ, হাসি তামাশা নিয়ে ব্যস্ত। তখনই দিশার মা এলো ওর কাছে। পাশে বসে মেয়েকে বললেন..
– আজ থেকে তোর নতুন জীবন শুরু মা,প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে তোর, কিন্তু তুই সুখীই হবি।
মায়ের এই কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো মাকে জিজ্ঞাসা করলো..
– বড়মা আসেনি মা?
– নাহ, ওর বাসায় ও আজ আয়োজন চলছে। তাই আসতে পারেনি।
– কিসের আয়োজন?
– আরিয়ানের বিয়ের বোধহয় .. কথাটা বলেই মা চলে গেলো। দিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ের যাওয়ার দিকে। কিছুক্ষন আগেই তো আরিয়ানের সাথে কথা হলো ওর। কই কিছু বললো নাতো। তাহলে কি এটার কথাই বলেছিলো, যে সারপ্রাইজ আছে? ভাবতে পারছে না দিশা।
..
সবাইকে খুব করে দেখছে দিশা। ওদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছেনা ওর। বাড়ির চারপাশটায় ভালো করে চোখ বুলালো। এই বাড়িটা যে ওর আত্মার সাথে মিশে আছে। কিভাবে পারবে ও সবাইকে ছেড়ে সারাজীবনের জন্য চলে যেতে? কিন্তু যেতে যে হবেই। যা ডিসিশন নেওয়ার নিয়ে নিয়েছে ও।
.
বরযাত্রী এসেছে কিছুক্ষন আগে। একা ঘরে দিশা বসে আছে। লাল টুকটুকে বেনারসিতে একদম পুতুল বউ এর মতো লাগছে দিশাকে। কিছুক্ষন পর স্টেজে নেওয়া হলো দিশাকে। বর আর কনেকে আলাদা আলাদা স্টেজে বসানো হয়েছে। কাজী সাহেব বিয়ের কাজ করায় বসে পরলেন। অনেক ধরনের ফর্মালিটি কম্প্লিট করে বউ এর মুখ থেকে কবুল বলাতে গেলেন কাজী সাহেব। দিশা নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। মাথাটা ঘুরছে ওর। শরীর কাঁপছে প্রচন্ডভাবে। অনেক কষ্টে দুইবার কবুল বলে যখন আরেকবার বলতে যাবে তখনই বসা থেকে সেন্স হারিয়ে পরে গেলো দিশা। হুলস্থুল লেগে গেলো তখনই। অথৈ একটা চিৎকার দিয়ে উটলো। হাউমাউ করে কেদে দিলো সে। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো..
– আরিয়ান ভাইয়া, দিশা বিষ খেয়ে নিয়েছে .. বলেই সেন্স হারালো অথৈ.. । দিশা পরে যাওয়ার সাথে সাথেই হাত থেকে বিষের শিশিটা পরে যায় নিচে। আর সেটা অথৈ এর নজরে আসে সর্বপ্রথম।
.
আরিয়ান গলার মালা ছিরে ফেলে মাথার মুকুট ফেলে পাগলের মতো ছুটে আসে দিশার কাছে। সবাই কাঁদছে। আরিয়ান কেদে দিয়ে চিৎকার করর বললো..
– ওকে এক্ষুনি ডক্টরের কাছে নিতে হবে। তারাতাড়ি গাড়ি বের করুন প্লিজ…
দিশার বাবা পাগলের মতো ছুটলো গাড়ি বের করতে। পিছনেই গাড়ির ড্রাইভার দৌড়ে গেলো। আরিয়ান দিশাকে পাজাকোলে করে ছুটলো গাড়ির দিকে। দিশার মা কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। বিয়ে বাড়ির হাসি আনন্দ নিমিষেই কান্নার বন্নায় পরিনত হলো।
.
হসপিটালে পৌছানোর সাথে সাথেই দিশাকে ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হলো। OT এর সামনে পায়চারি করছে সবাই। পাশের একটা বেঞ্চে মাথায় হাত দিয়ে বসে কাঁদছে দিশার বাবা। একপাশে মা সেন্সলেসের মতো পরে আছে। আরিয়ানের বাবা দিশার বাবাকে মানানোর চেষ্টায় আছে। আরিয়ানের মা কাঁদছে আর দিশার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সোহেল, তমা আর অথৈ সমানে পায়চারি করেই যাচ্ছে। তাদের চোখভর্তি পানিতে। অথৈ খেয়াল করলো হাসপাতালের করিডোরের এক কোনায় অস্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে আরিয়ান। চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে ওর। অথৈ আস্তে আস্তে আরিয়ানের পাশে গিয়ে দাড়ালো। মনের বিরুদ্ধে বললো..
– সব ঠিক হয়ে যাবে ভাইয়া। কাদবেন না প্লিজ।
– ওর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না অথৈ..
.
– কিচ্ছু হবেনা ওর। প্লিজ আপনি শান্ত হোন।
– শান্ত হবো আমি? শান্ত হবো? কি করে শান্ত হবো আমি? কি করে? আজ দুপুরেও ও আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে আমাকে ভালোবাসে। অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবেনা ও। তারপরও আমি কিভাবে পারলাম ওর কাছ থেকে সব লুকাতে? কেন আমি বললাম না, আমি তোমাকেই ভালোবাসি? কেন আমি বললাম না, আমার সাথেই তোমার বিয়েটা হচ্ছে? কেন এতো বড় কষ্ট দিলাম ওকে? যদি তখনই সবটা বলে দিতাম তাহলে এখন ওকে এতো কষ্ট পেতে হতো না। চিৎকার করে বলে উঠলো আরিয়ান। আবারও শান্ত হয়ে কান্না করে দিয়ে বলতে লাগলো..
– কিভাবে পারলাম আমি ওর সাথে এমন করতে? আমার কারণেই আজ এমন হয়েছে। কেন খেলতে গিয়েছিলাম এই গেইমটা. কাঁদতে লাগলো আরিয়ান। সাথে অথৈ ও কাঁদছে। ওরাওঁ যে দিশার থেকে সবটা লুকিয়েছে। সেদিন দিশার বাবাকে সবটা বলে ওরাই দিশার আগের বিয়টা আটকিয়ে আরিয়ানের সাথে এরেঞ্জড করেছে। দিশাকে কিছুই বলেনি ওরা ভেবেছিলো সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু ভাগ্য, আজ নিজেরাই সারপ্রাইজ হয়ে গেলো। কিন্তু এইরকম সারপ্রাইজ তো হতে চায়নি কেউ..
.
প্রায় এক ঘন্টা পর OT থেকে ডক্টর বেরিয়ে এলো। দিশার বাবা আর আরিয়ান সাথে সাথে ডাক্তারের সামনে গিয়ে দাড়ালো। চোখেমুখে তাদের ভয়ের ছাপ। ডাক্তারের মুখটাও খুব মলিন দেখাচ্ছে। ডাক্তারের এরুপ চেহারা দেখে আরও ঘাবড়ে যায় ওরা। আরিয়ান অনেক কষ্টে বলল.
– কি হয়েছে ডক্টর? ওর কিছু হয়নি তো? সব ঠিক আছে তো? ততোক্ষনে আরিয়ানের মা বাবা আর দিশার মাও এসে দাড়ালো। কিন্তু ডক্টর তখনও নিশ্চুপ। কিছু বলছে না। আরিয়ান আবারও বললো..
– চুপ থাকবেন না, বলুন আমার দিশার কিছু হয়নি তো?
– (—নিশ্চুপ —-)
– কি হয়েছে? কথা বলছেন না কেন? আমার মেয়ে ঠিক আছে তো? চেচিয়ে বললো দিশার বাবা।
অনেকটা ইতস্তত করে ডাক্তার বললো..
– দেখুন উত্তেজিত হবেন না। নিজেকে সামলাম। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু …
– কিন্তু কি ডাক্তার? আরো কয়েকগুন উত্তেজনা বেড়ে গেলো আরিয়ানের।
– পেশেন্ট যখন বিষ পান করেছে তখন উনার পেট সম্পুর্ন খালি ছিলো। আই মীন, উনি মনে হয় দুদিন ধরে কিছুই খায়নি..
– হ্যাঁ, আমার মেয়েটা দুদিন ধরেই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, অনেক চেষ্টা করেও কিছু খাওয়াতে পারিনি। কাঁদতে কাঁদতে পাশ থেকে বলে উঠলো দিশার মা।
– দুদিন ধরে কিছু খায়নি? কিন্তু কেন? অবাক হয়ে বললো আরিয়ান …
– সারাক্ষন শুধু কাদতো, জোর করেও খাওয়াতে পারিনি ওকে ..
আরিয়ানের চোখ জোড়া ভিজে চপচপ হয়ে গেছে। আজ শুধু ওর কারণেই দিশার এই অবস্থা।
ডাক্তার আবারও বলতে লাগলো..
– খালি পেটে বিষ পান করায় এটা খুব রিস্কি হয়ে গেছে। যদিও আমরা সবটা বিষ ওয়াস করে দিয়েছি, তবুও আমরা রোগীকে নিয়ে কোনো আশা করতে পারছিনা। অবস্থা খুবই সিরিয়াস.. পেশেন্ট কে আমরা কেবিনে শিফট করে দিয়েছি। আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন। তবে হ্যাঁ, খুবই সাবধানে ..
এতটুকু বলেই ডাক্তার চলে গেলো।
..
দিশার বাবা মা সহ বাকিরা কান্নায় ভেঙ্গে পরলো.. আরিয়ান এক জায়গায় দাড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে পানি পরছে ওর।।
এক এক করে সবাই দিশার সাথে দেখা করতে কেবিনে গেলো। দিশাকে অক্সিজেন মাস্ক পরানো হয়েছে। দিশার বাবা আর মা কেদে কেদে বার বার ডাকছে।
– মারে, একবার তাকা আমাদের দিকে। আমরা যে খুবই অপরাধী। তোর কিছু হয়ে গেলে কিভাবে থাকবো আমরা। একবার চোখ খোল মা… কাঁদতে কাঁদতে বললো দিশার বাবা।
পিটপিট করে তাকালো দিশা। চোখ থেকে পানি বেয়ে পরছে। বাবা বললো..
– মারে, তোর কিচ্ছু হবে না। তুই কোনো চিন্তা করিস না। ডাক্তার বলেছে তুই ঠিক আছিস। রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবি। মিথ্যা শান্তনা দিলেও নিজে শান্ত হতে পারছে না দিশার বাবা।
দিশা কিছু বলতে পারছে না। শুধু তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। মা বললো..
– তুই আগে কেন বলিসনি আরিয়ানের কথা? আর কেন এমন করতে গেলি? আজ তো আরিয়ানের সাথেই তোর বিয়ে হচ্ছিলো। সবাই তোকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলো রে মা।
দিশা কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।
অনেক্ষণ কথা বললো তারা। তারপর বাইরে চলে গেলো।
সবাই এসেছে দিশার সাথে দেখা করতে। অথৈ, তমা, সোহেল, আরিয়ানের বাবা মা, সবাই দেখা করে গেছে দিশার সাথে। দিশার অবস্থা খুব ক্রিটিকাল, সেটা কারোরই বুঝতে বাকি নেই। আরিয়ান বাইরে দাড়ানো। দিশার সামনে যাওয়ার সাহস হচ্ছেনা তার। একা একা নিরবে কাঁদছে। অথৈ আর তমা এসে পাশে দাড়ালো আরিয়ানের। কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো..
– ভাইয়া, আপনি যাবেন না দিশাকে দেখতে? ওর সাথে একটু কথা বলবেন না?
আরিয়ান অসহায়ের মতো তাকালো ওদের দিকে। বললো.
– কিভাবে দেখাবো এই মুখটা ওকে? কিভাবে বলবো আমি ওকে ভালোবাসি?
– প্লিজ কাদবেন না ভাইয়া.। দিশার অবস্থা খুব খারাপ। যেকোনো সময় কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। প্লিজ, একবার দেখা করে আসুন।
– কি বাজে কথা বলছো তোমরা? কিছু হবেনা ওর। কিচ্ছু হবেনা আমার দিশার। কাঁদতে কাঁদতে দিশার কেবিনে দিকে ছুটলো আরিয়ান।
কেবিনে ঢুকলো সে। প্রাইভেসির জন্য সবাই কেবিন থেকে কিছুটা দুরে গিয়ে দাড়ালো। আরিয়ান ছলছল চোখে দিশার মাথার কাছে বসলো। আস্তে আস্তে ওর হাত দুটো নিজের মুঠোবন্দি করলো সে। কিছুটা কেঁপে উঠলো সে। আস্তে আস্তে আরিয়ানের দিকে তাকালো সে। দুজনেই কাঁদতে লাগলো। দিশা কিছু বলতে চাচ্ছে আরিয়ানকে। কিন্তু মাস্ক এর কারণে কিছুই বুঝতে পারছেনা আরিয়ান। আচমকাই মাস্কটা খুলে ফেললো দিশা। আরিয়ান অস্থির হয়ে বলতে লাগলো..
– কি করছো কি দিশা, এইরকম করনা। বিপদ হতে পারে।
– দিশা কেদে দিলো। অনেক কষ্ট করে বললো..
– আমি বাঁচতে চাই আরিয়ান। আমি তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই।
– তোমার কিছু হবেনা দিশা। সব ঠিক হয়ে যাবে। এইসব কথা বলোনা প্লিজ।
দিশা একটু হাসলো। বললো..
– আমি জানি আমি বাচবোনা। আমি খুব বুঝতে পারছি তোমার সাথে এটাই আমার শেষ দেখা।
– একদম বাজে কথা বলবে না বলে দিলাম। খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু। কেদে কেদে বললো আরিয়ান।
– কাদবে না আরিয়ান। তোমার কান্না আমি সইতে পারিনা।
আরিয়ান চোখের পানিগুলো মুছে নিলো। বললো..
– কই কাদছিনা তো, কে বলছে কাদছি? কিন্তু তুমি এইসব অলুক্ষনে কথা বলবেনা বলে দিলাম।
– আরিয়ান, আমার একটা কথা রাখবে?
– সব কথা রাখবো। আগে তুমি সুস্থ হও..
– নাহ, এখন আমাকে কথা দাও, পরে হয়তো আর সুযোগ পাবোনা।
– আবারও এইসব বলছো..?
– আর বলবোনা। এখন বলো আমার কথাটা রাখবে…
– কি কথা বলো, তুমি যা বলবে আমি তাই করবো…
– প্রমিস করো..
– ok, বলো
– আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি একটুও কাদবেনা কিন্তু। কাদলে আমি মরেও শান্তি পাবোনা আরিয়ান।
– কি পাগলের মতো কথা বলছো দিশা। তোমার কিচ্ছু হবেনা তো। আমি তোমাকে কিছু হতে দিবোনা। অঝোরে কাঁদতে লাগলো আরিয়ান। সাথে দিশাও কাঁদছে।
দিশা হাসলো। হটাৎ ই দিশার বুকে ব্যথা শুরু হলো। নিজেকে সামলে বললো..
– একবার বলবে আরিয়ান ..
– কি বলবো বলো..
– যেটা তোমার কাছ থেকে অনেকবার শুনতে চেয়েছি।
– একবার কেন , অনেকবার বলবো। আগে সুস্থ হও।
– প্লিজ এখন বলো। শুধু_একবার_বলো….
আরিয়ান কেদে দিলো। কেদে কেদে বললো..
– ভালোবাসি দিশা। অসম্ভব ভালোবাসি তোমাকে। আমার জীবনের থেকেও বেশি।
দিশা একটা শান্তির হাসি দিয়ে বললো..
– একবার জরিয়ে ধরোনা আমাকে আরু,
আরিয়ান পাগল হয়ে গেলো দিশার কথায়। টেনে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো দিশাকে। বুকের সাথে চেপে ধরে কাঁদতে লাগলো সে। বললো.
– সবসময় তোমাকে এই বুকেই জড়িয়ে রাখবো দিশা। কখনও দুরে সরাবো না। অসম্ভব ভালোবাসবো তোমায়।
..
কয়েক মিনিট কেটে গেলো। দিশার কোনো সাড়া পাচ্ছেনা আরিয়ান। দিশা দিশা বলে ডাকতে ডাকতে দিশার মাথাটা তুলে দেখলো দিশা চোখ বন্ধ করে আছে, শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ। নার্ভ চেক করে দেখলো সেটাও বন্ধ। প্রচন্ড জোরে ডাক্তারকে ডাক দিলো আরিয়ান। ডাক্তার সহ বাকি সবাই ছুটে এলো আরিয়ানের চিতকারে। ডাক্তার নার্ভ চেক করে সবার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো..
– I am sorry, She is no more…
সবার মাথায় বাজ পরলো।
আরিয়ান পাথর হয়ে গেলো ডাক্তারের কথা শুনে। কথা বলতে ভুলে গেছে ও। বাকি সবাই কান্নাকাটি করতে লাগলো। একটা জ্যান্ত কবরস্থানে পরিণত হলো হসপিটাল টা।
..
.
৫ বছর পর,
কবরের পাশে বসে আছে উস্কখুস্ক আরিয়ান। পাগলের মতো প্রলাপ বকছে..
– ছলনা করে আমার কাছ থেকে ভালোবাসার কথাটা বলিয়ে নিলে। তুমিত একবারও আমাকে বললে না।
কি কথা বলছো না কেন? আমাকে ভালোবাসার কথা না বলেই কেন চলে গেলে তুমি? বলোনা একবার। প্লিজ দিশা.. বলে যাও আমায়। শুধু_একবার_বলো…
.
দুরে দাড়িয়ে আছে তমা সোহেল, অথৈ আকাশ। চোখে পানি টলমল করছে ওদের। সেদিনের পর থেকে আরিয়ান কাঁদতে ভুলে গেছে। কিন্তু সারাক্ষণ দিশার কবরের পাশে পরে থাকে ও। ওর ধারণা, দিশা এসে একবার হলেও বলবে ভালোবাসি….
.
সমাপ্ত 🙂