রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর,সাতক্ষীরা: বিশ্বব্যাপী নগরায়ন বেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্রাম গঞ্জও পিছিয়ে নেই। প্রত্যন্ত এলাকা গুলিতেও নগরায়ানের ছাপ পড়েছে। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে সবুজায়ন। বাড়তি নগরের সাথে যুক্ত হচ্ছে সবুজ বৃক্ষ বনায়ন। বায়ু দূষণ থেকে রক্ষা পেতে একদিকে সবুজ পৃথিবী গড়ার প্রচেষ্টা চলছে যেমন অপরদিকে একই সাথে সবুজ পৃথিবী গড়ার অংশে চলছে শৌখিন সবুজ বাগান তৈরী। সেটি তৈরী হচ্ছে নিচের অংশে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে তৈরী হচ্ছে উপরী অংশে।
শৌখিন বাগানের সাথে যুক্ত হচ্ছে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে সবজি বাগান। যেটি নগরায়নের ফলে মাটির নিচের অংশে স্থান সংকুলান না থাকায় বাড়ীর ছাদ অংশে করা হচ্ছে শখের বশে অথবা শৌখিনভাবে। ঠিক এমনিপরিবেশে শখের বশে বা শৌখিন ভাবে বাড়ীর ছাদকে ফেলে না রেখে পুষ্টির চাহিদা মিটাতে মৌসুম ভিত্তিক শীতকালিন সবজির মনোমুগদ্ধকর ছাদ বাগান তৈরী করেছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বাদঘাটা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা সড়কের পাশে অবস্থিত প্রকৌশলী শেখ আফজালুর রহমান।
তার নিজ বাড়ীর ১৩শত স্কয়ারফিটের ছাদে বাগদা চিংড়ী মাছের পোনা বহনকারী ককসিটের মধ্যে জৈব প্রযুক্তির নির্ভর রাসায়নিক কীটনাশক মুক্ত শীতকালিন সবজি টমোটো,বাঁধাকপি,ফুলকপি, ওলকপি, ঝাল, পেয়াজ, রসুন, কলমীশাক, লালশাক, বীটকপি সহ ১৬ জাতের সবজি চাষ করেছেন। এছাড়াও রয়েছে ড্রাগন ফুল, কমলা, আমলকি, বরুই, মাল্টা ,পুতিনাপাতা সহ অন্যান্য ফলগাছ। সারি বদ্ধভাবে সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে ছাদকে ক্ষতিনা করে ককসিটের নিচে ফাঁকা রেখে বৃষ্টির পানি সরানোর ব্যবস্থা রেখে গোবরমাটি, কেঁচোকম্পোষ্ট ব্যাবহার করে সবজি চাষ করা হয়েছে। সবুজে সবুজে ভরা চেহারা যুক্ত স্বাস্থ্যবান গাছগুলি দেখলে মন ভরে যাওয়ারই অবস্থা।
প্রকেীশলী সাংবাদিক শেখ আফজালুর রহমান বলেন তার এই ছাদ বাগানের সবজির স্বাদ অতুলনীয়। কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন জৈব প্রযুক্তিতে তৈরী সকল সবজি। কোন কোন গাছে কোন সময় পোকার আক্রমণ ঘটলে নিমপাতা,ছাই, মেহগনি ফলের রস এসব স্প্রে করে থাকেন। বর্তমানে তার তিনটি কন্যা সন্তান ও স্বামী স্ত্রী সহ ৫ সদস্যের পরিবারে পুষ্টির চাহিদা সম্পূর্ণভাবে না মিটলেও একবারে কম চাহিদা মিটছেনা বলে মতপ্রকাশ করেন।
বাড়ীর ছাদে সরজমিনে দেখা যায় বারো মাস মৌসুম ভিত্তিক সবজি চাষ করার জন্য ছাদের সাথে কাম দিয়ে বাঁশের মাাঁচা করেছেন শিম বরবটি ,পুইশাক সহ অন্যান্য লতানো সবজি চাষের জন্য। ছাদ বাগানের প্রথম ও প্রধান উপকরণ সেচ ব্যবস্থা। সেটি তিনি ছাদের উপর ড্রাম সেট করে পাইপের মাধ্যমে চাহিদা ভিত্তিক সেচ দিয়ে থাকেন। দেখা যায় ছাদের বেলকুনিতেও ককসিট পাশাপাশি স্থাপন করে বিভিন্ন প্রকার সবজি লাগিয়েছেন। তিনি বলেন বাড়ীর নিচের অংশের পাশাপাশি উপরি অংশে এক ইঞ্চিও জায়গা ফেলে রাখার কোন যুক্তি নাই সবটাই এখন কাজে লাগিয়ে ভাল ফসল ফলানো সম্ভব।
অভিজ্ঞদের মতে, বর্তমানে শহরে ছাদ বাগান আর গ্রাম পর্যায়ের ছাদ বাগানের মধ্যে কিছুটা হলেও পার্থক্য রয়েছে। মাটির অস্থিত্ব দিন দিন কমে যাচ্ছে ফলে ছাদ বাগান ছাদের বেলকুনিতেও শখের বশে বা শৌখিনভাবে অনেকে সবজি চাষ, ফুলের চাষ করছেন। এক্ষেত্রে ছাদ বাগানে মৌসুমভিত্তিক সবজি চাষ করা হলে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিক রাখবে বলে অভিজ্ঞরা মতামত প্রকাশ করেন।
কৃষিবিদ বিশেজ্ঞদের মতে ছাদ বাগান তৈরীর ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি দিক লক্ষ্য রাখার কথা বলেন যেমন ছাদ টি মজবুত কিনা , ওজন বহন করার মত ছাদের সক্ষমতা রয়েছে কিনা। সেচ দেওয়া পানির ব্যবস্থা রয়েছে কিনা এবং পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা রয়েছে কিনা। ছাদ বাগান তৈরীর জন্য দৃঢ় মনোবল দরকার ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এবং ভাল উৎপাদনের জন্য সঠিক পরিকল্পনার দরকার।
ছাদ বাগান নতুন কোন বিষয় নয়। বহু আগে থেকে এটি চলে আসছে। তাই পরিকল্পিতভাবে ছাদ বাগান করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ব্যানিজ্যিকভাবেও ছাদ বাগানের মাধ্যমে লাভবান হওয়া যায় বলে অনেকে মতামত প্রকাশ করেন।
ছবি- শ্যামনগর উপজেলার বাদঘাটা গ্রামে প্রকেীশলী শেখ আফজালুর রহমানের ছাদ বাগান।
রনজিৎ বর্মন
মোবা-০১৭১২৪৪৮৯৬০
তাং-১১.২.২২