বাংলাদেশে চালের বিভিন্ন ধরণের জাত হয়ে থাকে। এই সময় আমন ধানের চাহিদা ভোক্তাদের কাছে অত্যধিক থাকে। তবে নতুন এক ধরণের পুষ্টিসম্মত ধানের চাল চাষাবাদ করছে নাটোর জেলার কৃষকেরা। এই পুষ্টিসম্মত চালের নাম হচ্ছে ব্লাক রাইস। এই ব্লাক রাইস চাষ করা হচ্ছে বাংলাদেশের নাটোর জেলাতে। নাটোরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুরে চাষযোগ্য জমিতে এই নতুন জাতের ব্লাক রাইস চাষ করা হচ্ছে।
ব্লাক রাইস পুষ্টিসম্মত চাল যা দেখতে কালো রঙের হয়ে থাকে। এই বিশেষ ধরণের চাল খেতে অন্য জাতের চালের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ব্লাক রাইস পুষ্টিসম্মত একটি চাল এবং এতে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার আছে। কালো চাল বা ব্লাক রাইস অনেক রোগের ঔষুধ হিসেবে কাজে লেগে থাকে। ব্লাক রাইস ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্যজনিত রোগের বিশেষ প্রতিরোধক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরা বর্তমানে ব্লাক রাইসের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের ভৌগলিক পরিবেশে ব্লাক রাইস উৎপাদন করা খুবই কঠিনসাধ্য এবং কষ্টকর।
তবে নাটোর জেলাতে এই ব্লাক রাইস উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি বিভাগের মতে ব্লাক রাইস প্রধাণত চীনে চাষাবাদ হয়ে থাকে এবং চীনে চতুর্দশ শতক থেকে সপ্তদশ শতকের মিং যুগে এই ব্লাক রাইস বা কালো ধরণের চালের চাষাবাদ হতো। তবে এই ব্লাক রাইস বা কালো ধরণের চাল রাজা ও রাজপরিবার ব্যতিত অন্য কোথাও সরবারহ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে প্রজাদের জন্য এই চাল নিষিদ্ধ বা ফরবিডেন চাল হিসেবে গণ্য করা হত। পরবর্তীতে কালের বিবর্তনে চীনের পাশের দেশ জাপান ও মিয়ানমারে এই ব্লাক রাইস উৎপাদন করা শুরু হয়। জাপান ও মিয়নমারের পর থাইল্যান্ডেও এই চালের উৎপাদন করা শুরু হয়।
পরবর্তীতে দীর্ঘদিনপর বাংলাদেশে এই চালের উৎপাদন কাজ শুরু হয়েছে নাটোর জেলাতে। নাটোর জেলায় এই চাল উৎপাদনের আগে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ী অঞ্চলে এই চালের চাষাবাদ করা হত এবং পাহাড়ী অঞ্চলে এই চালের নাম পোড়া বিন্নি চাল বলেই পরিচিত। বর্তমানে নাটোরে ব্লাক রাইস বা কালো চাল উৎপাদনে নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হয়েছে এবং এই ব্লাক রাইস বা কালো চাল উৎপাদন করে উদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন। বাংলাদেশের নাটোর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদুল ফারুক ও নাটোরের কৃসিকর্মকর্তা মেহেদুল উসলাম বলেন, নাটোরের কৃষি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অর্গানিক পল্লী অ্যাগ্যো ফার্মস এবং নার্সারির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল কৃষি বিভাগের সহায়তাই ব্লাক রাইস বা কালো চালের চাষাবাদ করা শুরু করেন।
মোস্তিফিজুর রহমান টুটুল বলেন যে তিনি ময়মনসিংহ জেলা থেকে এই ব্লাক রাইস বা কালো চালের বীজ সংগ্রহ করেন এবং ব্যয় হয়েছে সর্বমোট ১৩,০০০ টাকা। ব্লাক রাইস অত্যন্ত পুষ্টিসম্মত একটি চাল যা বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক এবং এই চাল শরীর ও ত্বক ভালো রাখে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন