কিভাবে ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করা যায়?
বর্তমানে অনলাইন থেকে আয়ের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে লাখ লাখ তরুন-তরুনী মাসে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করছেন। সোশ্যাল মিডিয়া গুলোর মধ্যে ফেসবুক একটি জনপ্রিয় সাইট বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করেন না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। এখন সব বয়সের মানুষই প্রায় ফেসবুক ব্যবহার করে।
সারা বিশ্বের প্রায় মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে এবং আপনি এটা জেনে অবাক হবেন যে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে প্রায় পাঁচটি নতুন ফেসবুক একাউন্ট খোলা হয় এবং এটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফেসবুকের ৪৪৪৯২ জন স্পেশালিস্ট প্রতিদিন কাজ করে থাকে।
[সূত্র:উইকিপিডিয়া]
তবে এদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ লোকই জানেন না যে কিভাবে ফেসবুক থেকে ইনকাম করা যায়। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলো ফেসবুক। ইউটিউব চ্যানেলে বানিয়ে আয়ের কথা বর্তমানে অনেকেই জানলেও ফেসবুক থেকে ইনকামের কথা বর্তমানে অনেকেরই অজানা। অনেকেই জানেন না যে ইউটিউব মতো ফেসবুক কর্তৃপক্ষও নিয়ে এসেছে ফেসবুক থেকে আয় করার সুযোগ। ফেসবুক থেকে ইনকামের অনেক গুলো পদ্ধতি রয়েছে ।
আপনি চাইলে আপনার হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়েও ফেসবুক থেকে ইনকাম করতে পারবেন । আমি আজকের আর্টিকল ফেসবুক থেকে ইনকামের পদ্ধতি বলবো তো চলুন শুরু করা যাক।
ফেসবুক পেজ থেকে ইনকাম
আমরা সাধারণত ফেসবুকে যে আইডিগুলো ব্যবহার করি আপনি সেই আইডি গুলো দিয়ে ফেসবুক থেকে ইনকাম করতে পারবেন না। ফেসবুক থেকে ইনকাম করতে হলে আপনার দরকার পড়বে একটি ফেসবুক পেজের। এবং সেটি অবশ্যই ফ্যান পেজ বা লাইক পেজ হতে হবে। ফেসবুক প্রোফাইলে বন্ধু বাড়ানোর জন্য যেমন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে হয় বা একসেপ্ট করতে হয় ফেসবুক পেজের ক্ষেত্রে এমনটি করতে হয়না। যদি আপনি সব নিয়ম কানুন মেনে একটি ফেসবুক পেজ খুলবেন এবং নিয়মিত ভালো মানের মান সম্মত কনটেন্ট আপলোড করেন, তাহলে আপনার পেজের লাইক ফলোয়ার বাড়তে থাকবে আসাতে আস্তে।
আপনার পেজের ত্রিশ হাজার এর বেশি লাইক এবং ফলোয়ার হলেই আপনি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার পেটে মনিটাইজ করার জন্য আবেদন করতে পারেন। ইউটিউবে গুগল এডসেন্স ব্যবহার করে টাকা ইনকাম করা যায় আর ফেসবুক থেকে ইউটিউবের মতো ইনকাম করতে চাইলে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে এড চয়েজের। যদি আপনি আপনার পেজের ফ্যান ফলোয়ার বাড়াতে পারেন তবে আরো অনেক উপায় আছে ফেসবুক পেজ থেকে ইনকাম করার।
যেমন ধরুন আপনি ফেসবুকে যে টপিকে কনটেন্ট আপলোড করেছেন সেই কনটেন্ট রিলেটেড অনেক কোম্পানি আপনার থেকে Sponsorship নিয়ে তাদের প্রডাক্ট প্রমোট করতে চাইবে। তাই পেজে কোন টপিকের উপর কনটেন্ট দিবেন সেটা নির্ধারণ করা জরুরি। সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যেন একটা নির্দিষ্ট টপিকের উপরেই কনটেন্ট আপলোড করতে হবে।এলোমেলো টপিকে কনটেন্ট আপলোড করলে পেজের মান নষ্ট হবে। যেমন ধরুন আপনি ফুড রিলেটেড কনটেন্ট আপনার পেজের আপলোড দেন এর মাঝে যদি আবার ট্রাভেল রিলেটেড কনটেন্ট আপলোড করেন তাহলেতো সব হিজিবিজি হয়ে যাবে। এইগুলো পেজে খোলার আগেই সব প্ল্যান করে নিতে হয়। আপনার যদি একাধিক পেজ থাকে আর যদি সেগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে লাইক এবং ফলোয়ার থাকে তবে সেই সেগুলো বিক্রি করেও আপনি টাকা আয় করতে পারবেন।
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস থেকে আয়
মার্কেটপ্লেস ফেসবুকে এমন একটি সার্ভিস যদি আপনি এটির সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে মাসে হাজার হাজার টাকা এখান থেকে ইনকাম করতে পারবেন। মার্কেটপ্লেসে মূলত নিজের বা অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয় করতে পারবেন। গুগল প্লে-স্টোরে রিসেলিং লিখে সার্চ দিলে এমন অনেক এপ পাবেন। পছন্দনুসারে এপ সিলেক্ট করে ইনস্টল করে সব ডিটেইলস দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিন।
এখানে রেজিস্ট্রেশন করতে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও দেওয়া লাগবে কারণ আপনার আয়কৃত অর্থ আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই জমা হবে।
তবে যেকোনো এপ ডাউনলোড করার আগে অবশ্যই এপের রিভিউ গুলো ভালোভাবে পড়ে নিবেন।
রিসেলিং এপে বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট পেয়ে যাবেন।
আপনি যে প্রোডাক্ট গুলোর ছবি ডাউনলোড করে ফেসবুকে মার্কেটপ্লেসে লিস্ট করে নিজের প্রাইসনুসারে প্রাইস লিখে দিন।
এখন ধরুন আপনি রিসেলিং এপ থেকে একটা শার্ট কিনলেন ৫০০ টাকা দিয়ে আর ফেসবুকে এর দাম ঠিক করে দিলেন ৭৫০ টাকা এখন শার্টটি বিক্রি হলে আপনি ২৫০ লাভ করবেন।
মার্কেটপ্লেসে আপনার প্রোডাক্টের ছবি দেখে যখন কেউ আপনাকে মেসেজ দেবে তখন আপনি তার এড্রেসটা দিয়ে দিবেন রিসেলিং এপে।তারা প্রোডাক্ট ডেলিভারি করবে আপনার নামে।
প্রোডাক্ট সেল হওয়ার জন্য আপনার একাউন্টে কিছু কমিশন জমা হবে।
ফেসবুকে অ্যাফিলেয়েট মার্কেটিং করে আয়
অ্যাফিলেয়েট মার্কেটিং করার জন্য অনেক ওয়েবসাইট আছে। আপনাকে তাদের পণ্য বিক্রি করতে হবে আর তার বিনিময় আপনাকে তারা কমিশন।
বর্তমানে অনেক লোক আছে যারা কোনো কোম্পানির ডিলারশীপ নিয়ে তাদের প্রোডাক্টগুলো অনলাইনে সেলার নিয়োগ দিয়ে বিক্রি করে।
আপনি চাইলে এদের সাথে কাজ করতে পারেন।আবার ফেসবুকেও এমন অনেক বড় বড় পেজ আছে যারা রিসেলার নিয়োগ দিয়ে থাকে।
ফেসবুকে এড দেওয়ার মাধ্যমে আয়
আপনি যদি ফেসবুকে কিছু টাকা ইনভেস্ট করতে পারেন তবে এখান থেকে দ্রুত এবং সহজে আয় করতে পারবেন।
এখান থেকে টাকা পেতে আপনাকে টাকা দিতে হবে কিন্তু যদি মন দিয়ে এবং কৌশল দিয়ে কাজ করতে পারেন তবে ইনভেস্ট করা টাকার চার-পাঁচ গুণ ফেরত পাবেন অর্থাৎ আয় করতে পারবেন।
আসলে ফেসবুক হলো বিশাল ট্রাফিক সোর্স এখানে সর্বক্ষণ লাখ লাখ একটিভ ট্রাফিক থাকে।
এখন ধরুন আপনি অ্যাফিলেয়েট মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছেন, আপনার কাছে কিছু প্রোডাক্ট আছে।
এখন আপনি প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য প্রোডাক্টের ছবি ও ডিটেইলস আপনার ফেসবুক পেজে বা গ্রুপে অথবা আপনার ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ার করলেন।
এরকম করলে দেখা যাবে অল্প কয়েকজনই আপনার প্রোডাক্টগুলোর উপর ইন্টারেস্ট হলো এবং কিনতে বা কিনলো।এতে আপনার কিছু প্রোডাক্ট সেল হলো।
কিন্তু আপনি যদি ফেসবুক বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে লাখ লাখ ব্যক্তির কাছে আপনার প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দিতে পারেন তবে আপনার প্রোডাক্ট বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে।
এবার হয়তো বুঝতে পেরেছেন কিভাবে ইনভেস্ট করা টাকা থেকে আপনি কিভাবে আয় করতে পারবেন।
একটু কৌশল খাটিয়ে ঠিকমতো প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দিতে পারলেই বেশি বেশি আয় করতে পারবেন এখান থেকে।
ফেসবুক মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে আয়
আপনি যদি ফেসবুক মার্কেটিং টা ভালোভাবে শিখতে পারেন এবং করতে পারেন তবে আপনি ফেসবুক মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে পারেন।
বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ফেসবুক পেজ ম্যানেজমেন্ট করার জন্য ফেসবুক মার্কেটিং ম্যানেজার নিয়োগ দিয়ে থাকে।
তাছাড়া আপনি ফ্রিল্যান্সিং করেও আয় করতে পারবেন ফেসবুক মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে।