বই বা গ্রন্থই হচ্ছে মানুষের পরম বন্ধু ।শুধু বন্ধু নয়, বই আমাদের সবার শ্রেষ্ঠ সম্পদ ।বই নামক এই সম্পদের সাথে পার্থিব সম্পদের কোনো তুলনাই হয়না ।আসলেই বই মানুষের জীবনে অমূল্য এবং অতুলনীয় সম্পদ ।পৃথিবীতে অর্থাৎ পার্থিব সব সম্পদ একদিন না একদিন বিনষ্ট হয়ে যাবে কিন্তু একটি ভালো বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান কখনো নিঃশেষ হবেনা ।বরং তা চিরকাল হৃদয়ে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে রাখবে ।তাছাড়া বই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে অসামান্য অবদান রাখে ।জ্ঞানীদের মতে, বই বা গ্রন্থপাঠে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয়, মস্তিষ্ক ভালো থাকে ।
নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস মানুষের মস্তিষ্কে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে যা কিনা মস্তিষ্ক সুস্থ থাকতে সাহায্য করে ।বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্নভাবে ।এধরণের মেন্টাল স্ট্রেস বা মানসিক চাপ দূর করতে বইয়ের ভূমিকা অপরিসীম ।এমনকী বইপাঠে মগ্ন থাকলে জাগতিক সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকা যায় ও দুশ্চিন্তা দূর হয় ।বিভিন্ন সময়ের বই প্রকাশিত হওয়ার পর লেখক অনুযায়ী যার যার রচিত বই একাগ্রতার সাথে পাঠের সময় মনে হয় যেন নির্দিষ্ট লেখক আমাদের খুব সন্নিকটে বসে আছেন ।
এর থেকে বুঝা যায় যে, বই-পুস্তক গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পায় ।অর্থাৎ, আমরা তখন অন্য এক জগতের বাসিন্দা হয়ে যাই যা কিনা অসম্ভব এক আনন্দের অনুভূতি !যখন আমরা বই পড়ি তখন বইটির ভেতর থাকা তথ্যাবলী মনে রাখতে সচেষ্ট হই ।যেমন- কোনো গল্প, তা যেকোনো বিষয়ের উপরই রচিত হোক না কেন তখন কিন্তু ঐ পঠিতব্য গল্পটির নাম, প্লট, ইতিহাস, স্থান, উদ্দেশ্য ইত্যাদি পুরোপুরি মনে রাখতে হয় ।এতে করে মেমোরী পাওয়ার (Memory Power) বৃদ্ধি পায় ।তাতে মনে রাখার ক্ষমতা বা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় ।
বই আমাদেরকে মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে ।আর যখন আমরা আমাদের পছন্দের বইগুলি পড়ি তখন আমাদের মনে অনেক প্রশান্তি নেমে আসে ।বিশেষত আধ্যাত্মিক বই পড়লে মন-মস্তিষ্ক আরো বেশী শীতল হয়ে যায় ।এছাড়াও এক গবেষণায় দেখা গেছে আধ্যাত্মিক বই পাঠে রক্তচাপ কমে যায় অনেকখানি ।দৈহিক ও মানসিক উপকারিতার পাশাপাশি বইয়ের রয়েছে সামাজিক উপকারিতা এবং প্রয়োজনীয়তা ।কেননা বই আমাদেরকে সমাজের কাছে কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ তা উত্তমরূপে দেখিয়ে দেয় ।ফলে আমাদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধের সৃষ্টি হয় ।
পরিশেষে আরেকটি উপকারিতার কথা বলতেই হয় যে, বই-পুস্তক অধ্যয়নে ঘুম ভালো হয় ।গবেষণায় উঠে এসেছে যে- সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে রাতে ঘুমানোর পূর্বে যদি একটি ভালো ও তৃপ্তিদায়ক বই পড়া যায়, তাহলে মস্তিষ্কের কোষগুলি শান্তভাবে কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করে, ফলে খুব দ্রুত ঘুম চলে আসে আর সেই ঘুমটি হয় অত্যন্ত গভীর ।তাহলে বুঝা গেল, মানবজীবনে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থতায় বইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম ।