বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ।বাংলার স্বাস্থ্য, সুখ- সমৃদ্ধি,আনন্দ,বেদনা সব নদনদীকে ঘিরে ই। বাংলাদেশে অসংখ্য নদনদী রয়েছে।বাংলাদেশকে এঁকেবেঁকে অসংখ্য নদনদী বয়ে চলেছে।বাংলাদেশে প্রায় ৭০০ টিরও বেশি ছোট বড় নদনদী রয়েছে।বাংলাদেশের প্রধান নদনদীগুলো হলোঃ পদ্মা,মেঘনা,যমুনা,ব্রহ্মপুত্র,আড়িয়ালখা,গোমতী, নাফ,তিস্তা,বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, মধুমতী, কর্নফুলী ইত্যাদি।বাংলাদেশের বেশিরভাগ নদীগুলোর উৎপত্তি ভারতের বিভিন্ন হিমালয় পর্বতে এবং নদীগুলো অবশেষে গিয়ে মিশেছে বঙোপসাগরে।
নদীগুলো বাংলাদেশের মানুষের সম্পদের প্রধান উৎস।বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ।বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভর করে।আর কৃষিকাজের সফলতা সম্পুর্নভাবে আমাদের দেশের নদনদীগুলোর উপর নির্ভর করে।নদনদীগুলো আমাদের দেশের মাটিকে উর্বরতা দান করে।নদনদীগুলো বিভিন্ন স্থান থেকে পলিমাটি বয়ে আনে৷ এবং তার সাথে সাথে অনেক পুষ্টি উপাদান বয়ে আনে যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আর উর্বর জমি ই কৃষিকাজের উপযোগী। এবং বাংলার এই উর্বর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলে। যেমনঃ ধান,পাট,আলু,গম,চা ইত্যাদিসহ অনেক সবজি ইত্যাদি। এসব ফসল বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করে বাংলাদেশ অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে যার ফলে দেশের অর্থনীতি অনেক সমৃদ্ধি লাভ করছে।
আমাদের দেশের নদীগুলো মাছে ভরপুর। মাছ আমাদের দেশের অমূল্য সম্পদ।আমাদের দেশের জেলেরা বিভিন্ন নদনদী থেকে প্রচুর পরিমাণ মাছ ধরেন যেগুলো আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়।এতে করেও অর্থনৈতিক উন্নতি হয়।একইসাথে মাছ আমাদের প্রধান খাদ্যের মধ্যে একটি।বাঙালী মাছ খেতে খুব ই ভালবাসে। বাঙালীর নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ থাকে ই।মাছ ছাড়া বাঙালির খাদ্যতালিকা অসম্পূর্ণ।
বাংলাদেশের নদনদীতে পাওয়া যায় এমন কতগুলো মাছ হলোঃ ইলিশ,রুই,কাতলা,বোয়াল,পাঙ্কাশ,পুটি,রুপচাঁদা, চিংড়ি ইত্যাদি। বাংলাদেশের নদনদীগুলো যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। নৌকা,লঞ্চ,স্টিমার,জাহাজ ইত্যাদি সারা বছর ই নদনদী গুলোতে ঘুরে বেড়ায়। এগুলোর মাধ্যমে মানুষসহ বিভিন্ন পণ্যও বহন করে এক শহর থেকে অন্য শহর, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনা নেয়া করা হয়। শুধুমাত্র নদনদী গুলোর জন্য ই যাতায়াত অনেক সহজ হয়েছে।আমাদের নদনদী গুলো আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। নদনদী গুলোর মাধ্যমেই বেশিরভাগ পণ্য আনা নেয়া করা হয়।
ব্যবসা-বাণিজ্যও দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর এই নদনদী গুলো বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম। বেশিরভাগ শহর,নগর,হাট-বাজার,বানিজ্যিক কেন্দ্র, শিল্পকারখানা, বিভিন্ন নদনদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ই গড়ে উঠে।নদনদীর মাধ্যমে বিভিন্ন কলকারখানা,শিল্পকারখানার বিভিন্ন পণ্য সহজে ই বিভিন্ন স্থানে আনা নেয়া করা হয়।এভাবে নদনদী গুলো আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, ট্রেড এবং শিল্পেও সহায়তা করে।কিছু কিছু নদনদী শক্তিরও উৎস। কিছু কিছু নদী আছে যেগুলো ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।সেই বিদ্যুৎ দ্বারা বিভিন্ন মিল,ফেক্টরী ও শিল্পকারখানা চালানো হয়।যেসব নদী গুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় তা হলো কর্নফুলী ও গোয়ালপারা।এর মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করা হয়।আমাদের দেশের মানুষের মন,আমাদের দেশের মানুষের সংস্কৃতিতে নদনদীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা আছে।আমরা আমাদের নদীগুলোকে ভালবাসি।নদনদীর পানি এবং নদীর কুলকুল ধ্বনিও ভালবাসি আমরা।নদনদী গুলো আমাদের অনেক আবেগি করে তুলে।আমাদের বেশিরভাগ সুখ,আনন্দ নদনদী গুলোর উপরেই নির্ভর করে।আমাদের দেশের কবি,সাহিত্যিকরা নদনদী গুলো থেকে অনেক অনুপ্রানিত ও উৎসাহিত হয়।রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জসিমউদদীন সহ আরো অনেক কবির কবিতায় বাংলার নদনদীর প্রশংসা করা হয়েছে।কিছু কিছু বাঙালী উপন্যাসের নামকরণও নদীর নামে করা হয়েছে। যেমনঃ পদ্মা নদীর মাঝি এবং পদ্মা প্রমথা।জয়নুল আবেদিনের মত আর্টিস্ট এবং চিত্রশিল্পীরা আমাদের দেশের নদনদী গুলোর দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়েছেন।তাদের অনেক শিল্পকর্ম নদনদীকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে।সারি,ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, জারি ইত্যাদি হলো আমাদের গ্রাম বাংলার লোকসংগীত যা নদনদী থেকে উৎসাহিত হয়ে ই সৃষ্টি হয়েছে। এইসব ই আমাদের নদনদী গুলোর প্রতি আমাদের ভালবাসা প্রকাশ করে।কখনো কখনো আমাদের জীবন এবং সম্পদের অনেক ক্ষতিসাধন করে।বর্ষাকালে আমাদের দেশের নদনদীগুলো ফুলেফেঁপে উঠে আর ভাঙন সৃষ্টি করে যার ফলে জীবন এবং জানমালের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়।অনেক মানুষ সব হারিয়ে নিস্ব হয়ে পড়ে।বন্যা,প্লাবন এগুলোর ফলে৷ অব্যক্ত সমস্যার সম্মুখীন হয় সবাই।কিছু ক্ষতির কারণ নদীগুলো হলেও নদনদীগুলোর অবদান অনস্বীকার্য।
প্রাচীনকাল থেকে ই মানুষ নদনদী গুলো কে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।প্রাচীনকালে বেশিরভাগ সভ্যতা নদনদীর তীরেই গড়ে উঠেছিলো। নদনদী গুলো ই আমাদের দেশের উন্নতির কারণ।
সম্পর্কের বাঁধন আরো মজবুত হোক বিশ্বাস দিয়ে
বিশ্বাস এমন একটি শব্দ যেটি কোনো সম্পর্কের মাঝে না থাকলে সম্পর্কটি বেশিদিন টিকে না | হোক সেটি ছেলেমেয়ের প্রতি বাবা...