বিশ্বের কোন দেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় একজন ব্যক্তি যেমন তার প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে না তেমনি কোন অঞ্চল তাদের পক্ষেও তার প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়না।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলতে দুই বা ততোধিক সর্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে দ্রব্য সামগ্রী ও সেবা কর্মের আদান-প্রদানকে বোঝায়। বিশ্বের কোন একটি দেশের সাথে অন্য এক বা একাধিক দেশের যে বাণিজ্য চলে তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে। অন্যভাবে বলা যায় বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্রব্য ও সম্পদের বিনিময় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে।
একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যে বাণিজ্য চলে তাকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে যেমন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কুমিল্লা ,চট্টগ্রাম ,সিলেট ,ঢাকা থেকে অন্য অঞ্চলে যেমন বগুড়া ,রাজশাহী ,রংপুর এর মধ্যে যে বাণিজ্য সংগঠিত হয় তাকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে।
একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখন্ড অতিক্রম করে একটি দেশের সাথে বাণিজ্য সংঘটিত হয় তখন তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য একটি দেশকে শিল্পায়িত করে গড়ে তোলে তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে।
অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অথবা গ্রহণ করা উচিত সে সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। তবে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদদের মতে বৈদেশিক বাণিজ্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক সাহায্য থেকে।
১.সাহায্যর গুরুত্ব:
সনাতনী ধারণায় যে দেশ যে পণ্য উৎপাদনের বিশেষভাবে উৎপাদন এ পারদর্শী সে দেশের পণ্য উৎপাদন করতে এবং যে পণ্য উৎপাদনের পারদর্শী নয় তা সে বিদেশ থেকে আমদানি করে নিজের চাহিদা মিটাবে ।এভাবেই আসবে তুলনামূলক সুবিধা।
২. বাণিজ্যের প্রসার:
বৈদেশিক বাণিজ্যের ফলে দেশী পণ্যের বিদেশে চাহিদা হয়। এরূপ চাহিদা বৃদ্ধি বাজার সম্প্রসারণ ঘটে উৎপাদন বৃদ্ধি করে। ফলে বাজারের প্রসার অধিকতর শ্রমবিভাগ ঘটিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করে।
৩. অব্যবহৃত সম্পদের ব্যবহার:
বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের শক্তি সম্পদ ও উদ্ভাবন সম্পর্কে যে জ্ঞান অভিজ্ঞতা লাভ করে এর সাহায্যে দেশীয় সম্পূর্ণ ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যায়।
৪. দুষ্ট চক্রের ভঙ্গন:
বৈদেশিক বাণিজ্যের ফলে উন্নয়নশীল দেশের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ার ফলে আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় ।বিশেষ বিশেষ শিল্পের মজুরি ও শ্রমিকদের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয় ফলে উন্নয়নশীল দেশ দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভাঙার শক্তি অর্জন করে।
৫. সঞ্চয় বৃদ্ধি ও মূলধন গঠনের সহায়ক:
বাণিজ্য হার অনুকূলে থাকলে মূলধন গঠনে সহায়তা পাওয়া যায়। এর মতে কোন দেশে বিশ্ববাজারে উন্মুক্ত হলে এর কতগুলো প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় ।যেমন ,বাণিজ্যের ফলে প্রকৃত আয় বাড়ে, প্রকৃত প্রকৃত ঘটনা সহায়তা করে ,আমদানি বিকল্প এর প্রেক্ষিতে ভোগ্য দ্রব্য উৎপাদনে স্থানান্তরিত হয় এবং ও আপেক্ষিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
বৈদেশিক বাণিজ্যের উপযুক্ত সুবিধা থাকলেও অনেকে উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নে এর বাধাদানকারী ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। উপযুক্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে দেখা যায় যে বাংলাদেশের বিভিন্ন কারণে বিদেশি সাহায্যের গ্রহণের গুরুত্ব রয়েছে ।কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন যে দীর্ঘ সময় ধরে বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করে উন্নত দেশের নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন বিদেশি সাহায্য গ্রহণে দেশে আয় বন্টন অসম হয়। ধনীরা ধনী হয় এবং গরিবদের অবস্থা আরো খারাপ হয় ।ভোগ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি ব্যয় মেটাতে ঋণ ও অনুদান সাহায্য ব্যয় হলে বাণিজ্যিক ভারসাম্য প্রতিকূলতার দাতা দেশগুলোর গ্রহীতা দেশগুলোর ওপর প্রভাব ক্রমাগত সাহায্য উন্নত দেশগুলোর পরনির্ভরতা বাড়ে, নিম্নমানের পণ্য চড়া দামে ক্রয় এবং অধিক অর্থের বিনিময়ে পরামর্শ সেবা গ্রহণ করতে হয়।
আধুনিক অর্থনীতিবিদের অভিমত হচ্ছে, অনুন্নত দরিদ্র দেশের পুঁজি সমাবেশ ও বিনিয়োগ ধারা গড়ে তুলতে প্রাথমিক পর্যায়ে বিদেশি সাহায্য কাজে আসে। বিশেষ করে নতুন নতুন শিল্প স্থাপন, প্রযুক্তির বিকাশ ,দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এবং যে কারো সহজলভ্য শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন করার সুযোগ পাওয়া যায়। বিদেশি সাহায্য গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্ত সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের একটি নির্দিষ্ট স্থান পৌঁছানোর পর বৈদেশিক সাহায্যের লিপ্ত হওয়া যেতে পারে। পরিশেষে বলা যায় বৈদেশিক সাহায্যের থেকে বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নত, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।