শেষমেষ আবাসিক মসজিদের একজন হুজুরকে ডেকে ঘরে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছি। কয়েকদিন বন্ধ ছিল অথচ ইদানিং আবার জোর মাত্রায় চলছে।কি যে করা যায়?
বারো তলার বহুতল বাড়ি। বারো নম্বর তলাটা পরিত্যক্ত- একদম ছাদের কাছে হওয়ায় কেউ ফ্ল্যাটটা নেয় না। বর্ষা কিংবা বৃষ্টি-বাদলার মৌসুমে মধ্যবিত্ত দু’একটা পরিবার এসে উঠে আবার হুটহাট করেই চলে যায়। শহুরে পরিবেশ তাই কারো কোন মাথাব্যথা নেই- কে এলো আর কেই-বা চলে গলে?
সারারাত কানে বালিশ চেপে, লাইট জ্বালিয়ে আর রক গান চালিয়ে বৃথাই শব্দটা ভুলে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। এতদিন শুনেছি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক শব্দ ‘ব্লুপ’ অথচ এখন মনে হচ্ছে আমার ঘরের এই খুট-খাট শব্দই সবচেয়ে ভয়ানক শব্দ। রাত বাড়লে অনেকদিন ট্যাপের পানি পড়ার শব্দও অদ্ভুত জোড়ে শোনায়, সিলিং এর পাখাটা থেমে থেমে ঘুরছে। রান্নাঘরে প্রায়সময়ই উল্টোপাল্টা জিনিষ পড়ার শব্দ শোনা যায়। প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম একজনকে সাথে রাখবো তবে প্রাক্তন সময়ের কথা ভেবে মত পাল্টালাম। গত বছর ফয়েস লেক’র হামিদ সড়কে এক ভদ্রলোকের ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলাম আমি আর অচেনা একটা ছেলে, বলেছিল ছেলেটা স্টুডেন্ট- ইউ.এস.টি.সি’তে পড়ছে। ছেলেটা খুব ভালো আঁকতো- পুরো দেওয়ালজুড়ে একটা ডায়নোসরের ছবি এঁকেছিল, বাড়িওয়ালা দেখে তো আভিভূত। মাস কয়েক যাওয়ার পর থেকেই ছেলেটার স্বভাব কিছুটা সন্দেহজনক সন্দেহজনক মনে হতে থাকে। ঘুমাতো বেশি, কথা বলতো কম। চাকুরির সুবাদে বাইরে থাকায় প্রায়ই বাড়িওয়ালা থেকে যাচ্ছেতাই কথা শুনতাম- পুরোটাই আবিরের নামে। সকালের ফাঁকা সময়ে সে নাকি নিত্য নতুন মেয়ে নিয়ে ঘরে ঢুকতো- একসাথে প্রায় চার-পাঁচজন। বাড়িওয়ালা এ বিষয় বেজায় রুষ্ট। শেষমেষ ফ্ল্যাট সেটা ছাড়তে হলো সাথে আবাসিকের কমিটির কাছে হেনস্থাও হতে হল। তারপর থেকে রুম শেয়ার করার কথা কল্পনায়ও আনিনি।
প্রচন্ড বিতৃষ্ণায় সময় যাচ্ছে। সাড়ে চল্লিশ লাখ টাকার ফ্ল্যাট- ছেড়েও যেতে পারছিনা, বিক্রিও না। দেওয়ালে এত বিশাল ফাটল কে দেখে কিনবে? কর্পোরাল জীবন বলে গাঁ-য়ে তেমন লাগছেনা তবে ফ্যামিলি রাখার সময় হলে কি করবো? -সেটা ভেবেই শরীরে দেড়শ ডিগ্রীর জ্বর উঠে যাচ্ছে। রাতে খুট-খাট কোনকিছু ভাঙার শব্দ। মাঝে মাঝে গোঙ্গানির শব্দও পাওয়া যায়। জানালার বিশাল সাদা পর্দায় দু’একদিন দীর্ঘাকায় এক ছায়ামূর্তিও দেখেছি। পথচারীর ছায়া বলে নিজের মনকে মানিয়ে নিয়েছি অথচ বর্তমানে সহ্যগুণ ছাড়িয়ে গেছে। রাত জেগে শব্দটার উতপত্তিস্থল খোঁজার চেষ্টা চালালাম। দক্ষিণমুখী দেওয়ালে ফাটলের চিহ্ন অথচ খুট-খাট শব্দ আসছে বারো তলার ফ্ল্যাট থেকে; ভাবলাম- ভৌতিক কোন সিনেমার সিক্যুয়াল নয় তো?
সকালবেলা। জানালা দিয়ে রৌদ্রেরঝাঁজ এসে ঘরে ঢুকছে। সূর্য বেশিখানিকটা হেলেও পড়েছে। মেঝেতে উবুঁ হয়ে পড়ে আছি, বামহাতে চার-পাঁচটা স্পষ্ট আঁচড়ের দাগ। তাজা রক্তের দাগগুলো এখনও জমে আছে, আঁচড়গুলো অসম্ভব বিচিত্র রকমের। কোন প্রাণীর আঁচড় হলে আঁচড়ের শেষ অংশে কিছুটা ক্ষত হয়ে যাওয়ার কথা অথচ মানুষের আঁচড়ের মতই মনে হচ্ছে, তবে নখগুলো যে বেশ বড় বড় সেটা টের পাওয়া যাচ্ছে। দরজা বন্ধ। নতুন বুয়াটা কাজ করে চলে গেছে নিশ্চয়; এই বুয়াটাও যে কখন আসে আর কখন যে যায় ঠিক নেই। তবে রান্নাটা বেশ সুস্বাদু হয়। এদিকে অজানা এক আসন্ন ভয়ে পুরো শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। কাছেই এক টুকরো কাগজ পড়ে থাকতে দেখলাম। ধবধবে সাদা কাগজ, দু’ভাগে ভাঁজ করা; মনে হচ্ছে- খানিক কিছু আগেই কে যেন ভাঁজ করে রেখে গেছে?
সোজা বাথরুমে চলে গেলাম। কিছুটা ফ্রেশ হওয়া অতি প্রয়োজন। কাগজটা নিয়ে মনে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন জমে আছে। প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা প্রথম কাজ তারপর কাগজটা খোলার দায়। কাগজটা এলো কোথা থেকে? কেই-বা রেখে গেল? রাতে দরজা খোলা ছিল না তবে কে ঢুকতে পারে?আর, অদ্ভুত মসৃণ এমন কোন কাগজই ঘরে নেই তবে!
আজ আর অফিসে যাওয়া হলোনা। গরম গরম এক কাপ চা বানাতে গেলাম- রান্নাঘরে। ঝকঝকে,পরিষ্কার আর ঝিমঝাম রান্নাঘর। প্রয়োজনের উর্ধ্বে অতি প্রয়োজন অর্থাৎ,যে জিনিষগুলো না হলে একদমই চলে না এমন কয়েকটা জিনিষ এ ঘরে ঠাঁই পেয়েছে। ফ্ল্যাট বাসায় ইঁদুর থাকে বলে জানতাম,তবে- এত পরিমাণে পিঁপড়েও যে থাকতে পারে তা ধারণা ছিল না। পিঁপড়াগুলো স্বাভাবিক পিঁপড়ার আকার থেকে অনেক বড় বড়; চিনির বয়ামে এত্তগুলো পিঁপড়া দেখে মন একদম দমে গেল। বাড়ি থেকে সোজা সামনের গলির টং এর দোকানে চলে গেলাম। মাঝবয়সী দোকানী, ঝিপঝিপে দেহ আর কপালের ডানদিকে একটা ছোট কাঁটা দাগ। আমার একটা বদ অভ্যেস আছে- কোথাও গেলে প্রথম দেখাতেই চারপাশটা একদম ভালো করে দেখে নিই তবে দুঃখজনক ব্যাপার এটাই- খানিক পড়ে সবকিছুই ভুলে যাই। ঊনিশ বছর বয়সী ছেলেটাকে এক কাপ চায়ের সাথে একটা সিগারেট দিতে বললাম; আনমনেই হঠাৎ আমার ফ্ল্যাটটায় চোখ চলে যায়। কোয়ার্টজ কাচের খোলা জানালা দিয়ে দেখা গেল, কে যেন হাঁটা-হাঁটি করছে রুমের ভেতর?
ঘাড়ের উপর গরম নিঃশ্বাসে হকচকিয়ে উঠলাম-
স্যার, আপনের চা। কি দেখতাছেন, অইদিকে?
কিছু না, ক্যানো! যাও গিয়ে তোমার কাজ করো। খারাপ বাড়ি ওটা। তাঁকায়েন না- খারাপ!
খারাপ? খারাপ ক্যানো?
বাড়ি বানানোর পর থিকাই বাড়িটার উপরের ফ্ল্যাট দুইটায় কেউ থাকেনা। কত ভাড়াটিয়া দেখলাম, অল্প কয়েকদিন থাকে তারপর চলে যায়। আর কথা না বাড়িয়ে বিল মিটিয়ে চলে এলাম দোকান থেকে; বাইরে প্রচন্ড রোদ। গা বেঁয়ে দরদর করে ঘাম পড়ছে। বাইরে থাকার চেয়ে ঘরে সময় কাটানো-টাই শ্রেয় মনে করলাম। দরজার কবাট ঠেলে রুমের ভেতরে প্রবেশ করতেই দমকা একটা বাতাস বাইরে বেরিয়ে গেল। দিন-দুপুরে বাতাসহীন এই গ্রীষ্মকালে দমকা বাতাসটা আমার কাছে বেশ অদ্ভুতই ঠেকলো। বাইরে যেখানে একটা পাতা পর্যন্ত নড়ছেনা সেখানে এমন দমকা বাতাস! ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতেই হিমশীতলতা অনুভব হতে লাগলো অথচ বিরাণ এই ফ্ল্যাটে এখনও এ.সি লাগানো হয়নি। ভর দুপুরেও প্রচন্ড ভয় হতে লাগলো অথচ আমি খুব অসহায়। বিশাল এই উঁচু বাড়িতে কেউ এসে আমাকে মেরে ফেললেও আমার কিছু করার নেই। নিঃস্তব্দতায় ভরা শহুরে এক বাড়ি। পাশের বাড়িটা মাত্র আটতলা পর্যন্ত হয়েছে তাই কারো কাছ থেকে সাহায্য পাওয়াটাও নিরর্থক।তাই চুপচাপ ঘুমিয়েই দিন কাটানোর ইচ্ছে পোষণ করলাম।
শেষমেষ পড়ন্ত বিকেলে বাড়িওয়ালার সাথে সাক্ষাত করলাম। শালীনতার সহিত জানতে চাইলাম, বারো তলার ফ্ল্যাটটা কি সত্যিই পরিত্যক্ত? তিনি স্মিত হাসলেন। ভদ্রলোকের চেহেরায় সবসময়ই হাসি ফুঁটে থাকে তাই কতটুকু হাসলেন তা আমার দৃষ্টি পেরিয়ে গেল না। আমি একই প্রশ্ন আবার জিজ্ঞাসা করলাম; তার মুখে এবার দুঃশ্চিন্তার ঘোর অমানিশা। ভদ্রলোকের মুখায়বব আমাকে অগ্রিম কিছু জানিয়ে দিল তাই তৃতীয়বার প্রস্ন করার দুঃসাহস হয়ে উঠেনি। চোখ-মুখ তার আতঙ্কে জ্বলজ্বল করছে। একবার ভেবেছিলাম কেটে পড়বো কিন্তু পারলাম না। নিষিদ্ধ কাজের নেশা আমার মাথায় চেপে বসলো। হুট করে চেয়ে বসলাম- বারো তলা ফ্ল্যাটের একটা চাবি চাই। তিনি হতাশার ছায়ায় হঠাৎ আচ্ছন্ন হয়ে গেলেন; চুপচাপ চাবিটা বের করে- চলে গেলেন উল্টোদিকে। তিনি যেন জানতেন যে, আমি বার তলার চাবিটাই চাইবো!
মহল্লার মসজিদে মাগরিবের আযান শোনা গেল। কাছের অন্য একটা দোকানে নাস্তা শেষ করে উপরে উঠে গেলাম। ফ্ল্যাটের সিঁড়িঘরে এখনো লাইট জ্বালিয়ে দেয়া হয়নি; আবছা আলোয় মোবাইল আলো জ্বালিয়ে ধাপে ধাপে উপরে উঠছি। হঠাৎ হালকা সুগন্ধে পুরো জায়গা মৌ মৌ করে উঠলো,গন্ধটা বেশ লাগলো বটে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ঘ্রাণটা ভালো করে শুঁকতে লাগলাম। এমন সময়েই পিছন থেকে কি যেন ছুঁটে দ্রুত উপরে উঠে গেল। হৃদপিন্ডটা ধড়াম করে উঠলো,সাথে সাথে বারান্দায় লাইটও চলে আসলো। এরপর, হাজার খুঁজেও সে গন্ধটা আর পেলাম না। ইদানিং সব কিছুতেই ভয় জন্মে গেছে আমার। অন্য কোন উপায়ও নেই হচ্ছে এমনই, প্রতিক্ষণ।
কাঁপা কাঁপা হাতে বারো তলার ফ্ল্যাটটা চাবি দিয়ে খুললাম। দরজার নবে হাত রাখতেই হাঁটুতে জোর হারিয়ে ফেললাম। কেমন যেন কৌতুহূল আর ভয়ের মিলনমেলায় পড়ে আছি আমি! অনেকটা সাহস জড়ো করে দরজাটা ভিতরের দিকে ঠেলে দিলাম; সিঁড়িঘরের সুগন্ধটা বেশ গাঢ় হয়ে আছে এই ঘরে। সাধারণ আগে জানতাম পুরোনো ঘর থেকে সোদা সোদা গন্ধ আর ভ্যাপসা গরম বাতাস বের হয় অথচ এক্ষেত্রে পুরো উল্টো। অন্ধকারের আবছায়ায় খালি ফ্ল্যাটের ভেতর আমার দেহের ছায়া বিশাল এক দীর্ঘাকায় ছায়ামূর্তির সৃষ্টি করেছে- আঁৎকে উঠলাম। ঘরে তেমন কিছু নেই- পুরোনো একটা বিশাল আয়না, সটান হয়ে পড়ে থাকা কিছু লোহার বাট আর স্যাঁতসেঁতে কয়েকটা ভেজা ন্যাকড়া। তন্নতন্ন করে ঘরটার প্রতিটা কোন দেখতে লাগলাম, শব্দের উৎপত্তিস্থল আমায় বের করতে হবে। অথচ দক্ষিণের বিল্ডিং-এ তেমন কোন ফাঁটলের দাগই নেই এখানটায় তবে বেশ মশার উৎপাত আছে এ রূমে।
সময় গড়িয়ে রাত বারোটার কাঁটায় গিয়ে থামলো। ক্লান্ত শরীরে কখন যে আবার চোখ লেগে গেছে খেয়াল নেই। ঘসঘস শব্দটা দেখলাম এবার বেশ পাস থেকেই আসছে। ঘুমাতুর চোখে হুড়মুড়িয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। মোবাইলের লাইটটা জ্বালানোর চেষ্টা করলাম, জ্বলছে না- বোধহয় চার্জ শেষ। একটু অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটার বদৌলতে বিশাল আয়নাটা খানিক উল্টে গেল; কিছু জায়গায় ফেঁটেও গেল। আয়নাটা হাত দিয়ে তোলার চেষ্টা করতেই চমকে উঠলাম; যেটাকে বিশাল আয়না ভেবেছিলাম সেটা কোন আয়না নয়- কারো বাঁধাই করা ছবি। ঘসঘস সাথে সেই পুরোনো খুট-খাট শব্দ। দক্ষিণের দেওয়ালে হাত রাখতেই প্রচন্ড বিদঘুটে একটা গন্ধ নাকে লাগলো অথচ সন্ধ্যার সময়টাতেই একটা মন ভালো করে দেওয়ার মত ঘ্রাণ ছিল এখানটায়। শব্দটা যেন আস্তে আস্তে বাড়ছে, বাড়ছে চারপাশের নীরবতাও।
পুরো রুমটা মনে হচ্ছে রহস্যের চাদরে ঢাকা। দেখার মত চোখ থাকলে অনেক কিছুই দেখা যায়; বোঝার মত বুদ্ধি থাকলেও অনেক কিছু বোঝা যায়। একটা ঘসঘসে কর্কশ কণ্ঠস্বর কোথা থেকে যেন ভেসে এল। চলে যাও! চলে যাও এখান থেকে। বিদঘুটে গন্ধটা মনে হচ্ছে খুব কাছ থেকেই আসছে। সিলিং এর দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম- বেশ কয়েকটা চেনা মুখ ঝুলে আছে। ভয় আর ক্ষুধায় জীবন অসহ্য হয়ে উঠলো। বাতাসের দাপট চারপাশজুড়ে অনুভব করছি। পায়ের শব্দও হৃদয়ে বিঁধছে। মনে হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমি পড়ে যাচ্ছি কোন গভীর কূপে!
কতক্ষণ জ্ঞান হারিয়ে সেখানে পড়ে ছিলাম মনে নেই। জ্ঞান ফিরতেই অভিশপ্ত ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে আসলাম। পুরো দেহজুড়ে আজ আচড়ের চিহ্ন। দরজাটা বন্ধ করার পূর্বে আবার সেই সুগন্ধীটা নাকে লাগলো। পুরো শরীর জুড়ে ব্যথা আর ব্যথা। বুয়া আসলো। এত তাড়াতাড়ি বুয়া কোথা থেকে আসলো ভেবে পেলাম না। বুয়ার সাথে সাথে দেখলাম সুগন্ধীটাও ঘরে ঢুকছে। খালি ফ্ল্যাটজুড়ে দম বন্ধ করা সেই গন্ধ। গতকাল রাতের স্বপ্নটার কথা মনে পড়লো। ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে, বিকৃত চেহারার এক বৃহদাকার ছায়ামূর্তি আমার উপর আক্রমণ করে বসেছে। দোয়া-দুরূদ সব পড়ছি, লাভ হচ্ছে না। লিকলিকে ছায়ামূর্তিটা ঘড়ঘড় শব্দ করতে করতে আমার কাছে আসছে। আমার শরীরে রক্তে অ্যাডোলিনের পরিমাণও বেড়ে চলেছে। কি করবো বুঝতে পারছিনা!
জানালার পর্দা দিয়ে বাইরের বাতাস ঢুকছে। কাউকে যে ডাকবো এমন কাউকে খুঁজেও পেলাম না। অবশেষে ঝাঁপিয়ে পড়লাম রেলিং থেকে। এরপর আর কিছু মনে নেই!
সকাল হলো। মেঝেতে লাল শার্ট পড়া অচেনা ছেলেটাকে দেখে সবাই ভাবছে, ছেলেটা কোথা থেকে এলো?বাড়িওয়ালা খবর পেতেই ছুটে এলেন, তার মুখে মৃদু হাসি। বারো তলার ফ্ল্যাট থেকে তিনটে হাসি হাসি মুখ নিচের দিকের তামাসা দেখছে, আর নিচের সবাই অবাক হয়ে মৃতদেহের উপর আঁচড়গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। আঁচড়গুলো খুবই অপাশবিক। বারোতলার ফ্ল্যাটের পাশাপাশি এখন এগারো তলার ফ্ল্যাটটাও পরিত্যক্ত হয়ে উঠেছে। এগারো তলার ফ্ল্যাটে শুধু একটাই বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়, এখানে কাজের বুয়া পেতে কোন কষ্ট হয়না। বর্তমানে আবার নতুন দু’জন ব্যাচেলর উঠেছে এগারোতলার বিশাল ফ্ল্যাটে; পুরোনো বুয়াটা আবারও এসেছে নতুন ভাড়াটিয়ার কাজ করে দিতে। কেউ যাকে কখনো কোথাও দেখেনি; যার অস্তিত্ব সত্যিই আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ সব্বার কাছে। বুয়াটা আবার এসেছে কেন? নতুন কোন মতলব? না- এবারের পর নিজেদের বাসস্থলের জায়গাটা পাকাপোক্ত করেই নিয়ে নিতে চায় অশরীরি গোষ্ঠিরা!
(সমাপ্ত)