আমেরিকার ফ্লোরিডার উপকূল থেকে পুয়ের্তোরিকো হয়ে বারমুডা দ্বীপ পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগরের ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এলাকায় যে ত্রিভুজাকৃতির অশান্ত জলরাশির রহস্যময় ক্ষেত্র, সেই রহস্যময় জায়গাটাই বারমুডার আশ্চর্যজনক ট্রায়াঙ্গেল। শত শত বছর ধরে যেখানে বড়ো বড়ো সামুদ্রিক জাহাজসহ বিশালাকার উড়োজাহাজ পর্যন্ত ডুবে হারিয়ে যায়।
এজন্য অনেকে বারমুডার এই ট্রায়াঙ্গেলকে শয়তানের ত্রিভুজ বা ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেলও বলে। সামুদ্রিক জাহাজসহ বিশালাকার উড়োজাহাজ ডুবে যাওয়ার পেছনে শয়তানের কারসাজি বা ধোঁকা আছে বলে মনে করেন অনেকেই। কেননা, ঐ এলাকায় বিশালাকার জাহাজ দিকভ্রান্ত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের অতল জলরাশির রহস্যময় ক্ষেত্রে ডুবে চিরদিনের মতো হারিয়ে যায়। পরে যার হদিস পাওয়া যায় না আর কোনোকালেই।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যময়তার কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ভেতর জাহাজ ঢুকলেই কম্পাসের কাঁটা উল্টোপালটাভাবে ঘুরতে থাকে। আবহাওয়ার আচরণও সেখানে রহস্যময়। সাগরের স্রোতও বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ভেতর উল্টোপালটাভাবে ঘুরতে থাকে। প্রচন্ডভাবে সারাক্ষণ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের এলাকায়।
সবমিলিয়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ভেতর সবসময় একটা রহস্যময় ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করে। কম্পাসের কাঁটার দিগভ্রান্ত আচরণ, প্রচন্ড সামুদ্রিক স্রোত, বৈরী বাতাসের আবহাওয়ায় সৃষ্ট সাগরের তীব্র ঘূর্ণি বড়ো বড়ো সামুদ্রিক জাহাজ এবং বিশালাকার উড়োজাহাজকে বিপর্যস্ত করে সাগরে ডুবিয়ে দেয়।
বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষ এবং আধুনিক যুগেও বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যময়তার এখনো কোনো কূলকিনারা হয়নি। এখনো এর অনেক রহস্যময়তাই আজও রহস্য রয়ে গেছে। যদিও বিজ্ঞানীরা অনেক ধরনের তত্ত্ব দিয়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যময়তার নানারকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তবুও অনেক রহস্যের এখনো কূলকিনারা হয়নি। বরং অনেক রহস্যও আরও বেশি ঘনীভূত হয়েছে।
কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলেছেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের সাগরের তলদেশে চুম্বকের পাহাড় আছে। আর চুম্বকের প্রচন্ড ম্যাগনেটিক ফিল্ডের আকর্ষণে জাহাজ সেখানে তলিয়ে যায়। আবার অনেক গবেষক ও বিজ্ঞানীরা মনে করেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের সাগরের তলদেশে বিশাল বিশাল গিরিখাত এবং গর্ত রয়েছে, সেসব গিরিখাত ও গর্ত থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। আর এই মিথেন গ্যাস পানিকে হালকা করে। যার কারণে বড় বড় জাহাজ এখানে ডুবে যায় অবলীলায়।
বিজ্ঞানীরা যতই তত্ত্ব দিক না কেনো, বিজ্ঞানের যতই উৎকর্ষ হোক না কেনো, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যময়তা এখনো পুরোপুরি উন্মোচন হয়নি। তবে উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এখন সম্ভাব্য দুর্ঘটনা খুব সাবধানতার সাথে এড়িয়ে যাওয়া হয়। বিশেষ করে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ঐ ত্রিভুজ এলাকা সবসময়ই এড়িয়ে যায় বড়ো বড়ো সামুদ্রিক জাহাজ এবং উড়োজাহাজগুলো।
ফলে অনেক দুর্ঘটনাই এখন মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। তবে অসতর্ক হলেই মুশকিল। একটুখানি অসতর্কতাই মারাত্মক পরিণত ডেকে আনতে পারে। সেজন্যই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যময় এলাকায় এখনো অনেক সতর্ক থাকে জাহাজের ক্যাপ্টেন ও নাবিকেরা। যার কারণে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। তারপরও বারমুডার ট্রায়াঙ্গেল আজও তার রহস্যময়তা নিয়ে ঘিরে আছে আটলান্টিক মহাসাগরের সেই আশ্চর্য বিস্ময়কর ত্রিভুজ এলাকায়।
সাইফুল হক : লেখক, সম্পাদক, গবেষক।
রহস্য, বারমুডা, আশ্চর্য, জাহাজ, ট্রায়াঙ্গেল