শীতের সবজি খেয়ে সুস্থ্য থাকুনঃ
ষড়ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতির মধ্যেও আসে নানা পরিবর্তন। আর এই প্রকৃতির পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের দেহের অভ্যন্তরেও কিছু পরিবর্তন হয়। ফলে মানুষের দেহে কিছু খাদ্য ও ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। স্রষ্টা আবার এই ঘাটতি পুরনের জন্য সিজোনাল শাক সবজি ও ফল মুলের ব্যবস্থা করেছেন। তাই আমরা যদি সিজোনাল শাক সবজি ও ফল মুল নিয়মিত খেতে পারি তাহলে অনেক রোগ-বালাই থেকেই মুক্তি পেতে পারি।
ঋতু পরিক্রমায় বর্তমানে আমাদের সামনে শীত উপস্থিত। শীতকাল হলো হরেক রকম শাকসবজি ও ফলমুলের ঋতু। আজ আমরা কিছু শাকসবজির পুষ্টিগুন নিয়ে আলোচনা করব। কারণ শাকসবজির গুনাগুন সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ থাকার কারণে এগুলোকে অবহেলা করি এবং খেতে চাই না।
পালংশাক
বলা হয় শাকের রাজা পালং। এই শাকের বিভিন্ন গুনের জন্য এ কথা বলা হয়। পালংশাক অনেক রোগ সারায়। কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর জমলে পালংশাক তা গলিয়ে বের করে দিতে সক্ষম। ফুসফুসের রোগ সারাতেও পালংশাক অনন্য। নানাবিধ পেটের অসুখে পালংশাক ধন্বন্তরী। পালংশাক শক্তিবর্ধক, কারণ এতে রয়েছে লোহা ও তামা। এই শাক রক্ত বৃদ্ধি করে এবং তা পরিশোধনও করে থাকে। এটি হাড় মজবুত করে। জন্ডিস রোগেও পালংশাক উপকারী। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তাদের জন্য এই শাক উপকারী। পিত্ত ও কফের জন্যও পালংশাক উপকারী। এটি পেট পরিষ্কার করে। অন্ত্রের মধ্যে জমে থাকা মল বের করে দেয়। পালংশাকে প্রস্রাব বাড়ে। প্রস্রাবের সাথে বহু রোগ বেরিয়ে যায়। যারা শিশুকে দুধ খাওয়াতে পারেন না তারা পালংশাক দিয়ে ভাত খাওয়াবেন, উপকার পাবেন।
পালংশাকে রয়েছে ভিটামিন এ,বি,সি ও ই। রয়েছে প্রোটিন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন ও লোহা। আরো রয়েছে অ্যামিনো এসিড।
লাল শাক
দেখতে লাল এবং রান্নার পর ভাতের সাথে মাখালে ভাতও লাল হয়ে যায়। তাই এটাকে লালশাক বলা হয়। অত্যন্ত সহজলভ্য এই লালশাক। যে লালশাক বেশি লাল তার উপকারীতাও বেশী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান হিমোগ্লোবিন। মেয়েদের মাসিকে প্রচুর রক্ত যায় তাই নিয়মিত লালশাক খেলে ঐ ঘাটতি বহুলাংশে পূরণ হয়ে যায়। যাদের অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা আছে তাদের প্রতিদিন লালশাক খাওয়া উচিত। এতে রয়েছে আয়রন। কিডনি ফাংশনগুলো ভালো ও পরিষ্কার রাখতে লালশাক খাওয়া ভালো। লালশাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। চুলের স্বাস্থ্যের জন্যেও লালশাক ভালো, এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং মিনারেল ও পুষ্টি জোগায়। লালশাক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এর বিটা ক্যারোটিন হ্রদরোগের ঝুঁকি কমায়।
মুলাশাক
কচি মুলার পাতাকে মুলাশাক বলা হয়। মুলাশাক সহজে হজম হয়। এটি বায়ূ, পিত্ত ও কফ এই ত্রিদোষনাশক। কিন্তু মুলাশাক ভালো করে সেদ্ধ করে খেতে হবে। অন্যথায় উপকারের পরিবর্তে অপকার হবে। ভালো করে সেদ্ধ করে না খেলে যে ত্রিদোষ নাশ করে, সেই তিনটিই আবার আক্রমন করে।
সর্ষেশাক
সর্ষেশাক আমরা অনেকে খুব মজ করে খাই। কিন্তু এই সর্ষেশাক আমাদের শরীরের জন্য খুব একটা ভালো না। এটি মলমূত্র বৃদ্ধি করে, শরীর গরম করে। কারো কারো শরীরে জ্বালাযন্ত্রনাও হয়। আয়ুর্বেদমতে, সর্ষেশাক ক্ষতিকর। ঠিক একইভাবে মটরশাকও ভালো নয়। তাই এই দুটো শাক না খাওয়াই ভালো।
ফুলকপি:বাঁধাকপি:ওলকপি
শীতের আরেক আকর্ষণীয় সবজি হলো ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ওলকপি। পাতাকপিকে বলা হয় বাধাকপি। আর ওলকপিকে কোন কোন এলাকায় শালগমও বলে। ফুলকপি মায়েদের স্তনে দুধ বাড়ায়, বীর্যবর্ধক, পিত্ত ও কফ নাশক। তবে ঘন ঘন খেলে বাতরোগীদের ব্যথা বাড়তে পারে। বাঁধাকপি হার্টের জন্য ভালো, মূত্রবর্ধক কিন্তু বাতকারক। পিত্তের প্রকোপ কমায়। লিভারের জন্য হিতকর। এটি প্রোটিন ও আমিষ সমৃদ্ধ। ওলকপি সুস্বাদু, রসে মধুর। এটি পেট পরিষ্কার করে। প্রস্রাব বাড়ায়। এটি কফনাশক, শ্বাসকষ্টরোধক ও কাশিতে উপকারী। ওলকপি কৃমিনাশক ও বল বীর্যবর্ধক। তিন প্রকার কপিতেই প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লোহা আছে। ভিটামিন এ, বি ও সি রয়েছে। রয়েছে পটাশিয়াম ও আয়োডিন।
শিম
শিম এর গুনাগুন নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এটা গরম এবং হজমে দেরী হয়। হজমে দেরী হয় বলে পেটে গোলমাল দেখা দেয়। কিন্তু কবিরাজ বলেন, শিম রান্নার সময় যদি রসুন ফোড়ন দেয়া হয় তাহলে কোন অসুবিধা হয় না। আবার হেকিমরা বলেন, শিম গরম নয় বরং ঠান্ডা। এটি বলদায়ক, বায়ু ও পিত্ত ঠান্ডা করে। তবে আয়ুর্বেদ মতে, শিম গুরুপাক, কফ বৃদ্ধি করে। বাত ব্যথা হতে পারে। শৃক্র উৎপাদন হ্রাস করে। তবে শিমের বিচিতে প্রচুর আমিষ রয়েছে। পুষ্টিবিদরা বলেন, শিমে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশয়াম ও লোহা রয়েছে।
গাজর
অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি সবজি হচ্ছে গাজর। এটি কাঁচা, রান্না ও সালাদ করে খাওয়া যায়। নানা গুনে সমৃদ্ধ এই গাজর। গাজরের শাকও মুলাশাকের মত রান্না ও ভাজি করে খাওয়া যায়। গাজরের পায়েস ও হালুয়াও সুস্বাদু। ইহা ক্ষিধে বাড়ায়। অর্শ ও পেটের অসুখ ভালো করে। এটা খেলে শক্তি বাড়ে। হার্টের জন্য উপকারী। ক্ষয়রোগ ভালো করে। মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। শিশুদের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য কাঁচা গাজর খাওয়ানো যায়। প্রস্রাবে জ্বালা, গ্যাস্ট্রিক ও আলসার ভালো হয়। গাজর খেলে রং ফর্সা হয়। তবে গর্ভবতীরা অধিক খেলে গর্ভপাত হতে পারে। গাজরে প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন ও ফসফরাস রয়েছে।
এ ছাড়াও আরো অনেক শাক রয়েছে এবং সকল শাকই পুষ্টিসমৃদ্ধ। আমরা এখানে শুধু শীতের কিছু সবজির আলোচনা করলাম। যা বেশী বেশী খেয়ে আমরা শীতকালের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি।
এই মুহূর্ত থেকেই নিয়ন্ত্রণ করুন আপনার রাগকে
রাগ এমন এক অনুভূতির নাম হয়তো এই অনুভূতিটি কারো মধ্যে কম অথবা কারো মধ্যে খুব বেশি লক্ষ্য করা যায় |...