অটিজম কোনো রোগ নয়। এটি স্নায়ু বিকাশ জনিত সমস্যার একটি বিস্তৃত রূপ যা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার নামে পরিচিত। এখানে স্নায়ু শব্দটি স্নায়ুতন্ত্র বা মস্তিষ্কের সাথে স্নায়ুর সম্পর্ক বোঝায়। বিকাশজনিত শব্দটির মাধ্যমে শিশুর বিকাশ প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে। প্রাকশৈশব কাল থেকে এই সমস্যাটি শুরু হয়, যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। সাধারণত শিশুর জন্মের দেড় বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে অটিজমের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। সামাজিক সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং আচরণের ভিন্নতাই এই সমস্যাটির প্রধান বিষয়। এছাড়াও অটিজম রয়েছে এমন শিশুর শারীরিক ও বুদ্ধি ভিত্তিক, শিক্ষণ প্রক্রিয়া ও ইন্দ্রিয়ানুভূতি সংক্রান্ত সমস্যাও বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়।
এটা মনে রাখা জরুরি যে, সব অটিস্টিক শিশুই এক রকম নয়। যেমন – অটিজমের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সব অটিস্টিক শিশুর মধ্যেই কম – বেশি পরিলক্ষিত হয় আবার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে প্রতিটি শিশুর জন্য আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। অটিজম স্পেকট্রামে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অটিজম লক্ষ করা যায়। অটিজম স্পেকট্রামকে একটি রংধনুর সাথে তুলনা করা যায়। রংধনুতে যেমন অনেক রং থাকে, অটিজম স্পেকট্রামেও তেমনি বিভিন্ন ধরনের অটিজম থাকে। এগুলোর মধ্যে একটি হলো অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম।
অটিজমের মূল বৈশিষ্ট্য সমূহ :
অটিজমের বৈশিষ্ট্য ও মাত্রা প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রে আলাদা। মূল শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো – সামাজিক মেলামেশা, যোগাযোগ ও পুনরাবৃত্তি মূলক আচরণ। এই তিনটি বৈশিষ্ট্যই অটিজমের মূল লক্ষণ হিসেবে পরিচিত। অটিজমের কারনে ইন্দ্রিয়ানুভূতি, অপরের সাথে যোগাযোগ করার কৌশল এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়া প্রক্রিয়া গুলো বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে তাদের মধ্যে একই ধরনের আচরণ অথবা অসামঞ্জস্য পূর্ণ আচরণের উৎসাহ দেখা যায়। এটা জানা জরুরি যে, অটিজমের লক্ষণ গুলো স্নায়বিক কারণে হয় এবং একজনের সাথে আরেক জনের হুবহু মিল নেই।
অটিজম আছে এমন শিশুদের সাধারণ কিছু আচরণ :
১. চোখে চোখ না রাখা বা কম রাখা
২. ডাকলে সাড়া না দেওয়া
৩. বিকাশ জনিত দক্ষতার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা
৪. প্রাত্যহিক রুটিন পরিবর্তনে বাধা দান
৫. অতিরিক্ত চঞ্চলতা বা উত্তেজনা
৬. আবেগ প্রকাশে অসুবিধা
৭. অস্বাভাবিক শারীরিক অঙ্গভঙ্গি
৮. সত্যিকার বিপদে ভয় না পাওয়া, অন্যদিকে তেমন বিপজ্জনক নয় এমন অবস্থা বা পরিবেশে অস্বাভাবিক ভয় পাওয়া
৯. অসংগতি পূর্ণ হাসি – কান্না
১০. কোনো কিছুর প্রতি অস্বাভাবিক আকর্ষণ
১১. খাওয়া, ঘুম, খেলাধুলা ও অন্যান্য কাজে অস্বাভাবিকতা
১২. নিজের বা অপরের জন্য বিপজ্জনক বা ক্ষতিকর ব্যবহার
১৩. অখাদ্য খাওয়া এবং কোনো কিছু না বুঝে রেগে যাওয়া।
অটিজম আছে এমন শিশুদের কিছু সবল দিক হলো :
১. সুনিপুণ ভাবে দেখার ক্ষমতা
২. সুশৃঙ্খল নিয়ম নীতি ধারণা, সিকোয়েন্স (ধারাবাহিকতা), প্যাটার্ন ইত্যাদি বিষয় গুলো বুঝতে ও মনে রাখতে পারে
৩. বিস্তারিত ও মুখস্থ করার মতো বিষয় ( গণিত, ট্রেনের সময়সূচি, খেলার স্কোর) মনে রাখতে পারে
৪. দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি
৫. কম্পিউটার ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা
৬. সংগীত ও বাদ্য যন্ত্রের প্রতি আগ্রহ
৭. বিশেষ পছন্দনীয় বিষয়ের প্রতি মনোযোগ
৮. শৈল্পিক দক্ষতা
৯. অল্প বয়সে লিখিত ভাষা পড়তে পারা (বুঝতে পারুক বা না পারুক)
১০. বানান মনে রাখা
১১. সততা
১২. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বা চেষ্টা করা।