বীণার প্রতি অমিতের এমন আচরণ দেখে গ্রুপের এক নারী সদস্য বলে, “আমাদের এখন কি করা উচিৎ?”
“ভুলে যান। বীণাও একটা গাধা” দেবার্শীষ বলল।
“বেচারা বীণা, করুণা হয় উনাকে দখলে।” সদ্য বিবাহিত গ্রুপের আরেক মহিলা বলল।
“উনি একজন নৃশংস পাষন্ড ছাড়া আর কিছু নন।” রোজি বললো।
তারপর সকলে নিজ নিজ তাঁবুতে বসে তাস, লুডু, দাবা যে যার মতো খেলতে লাগলো, বাকীরা বিশ্রাম করতে লাগলো।
বৃষ্টি আরো জোরে নামতে শুরু করেছে।
“ঐ ক্যাপ্টেনের বউকে দেখছো? গাধা মহিলা আমি কি করবো না করবো তাই বলার চেষ্টা করছিল।” পিচ্ছিল কাদাময় পাহাড়ের রাস্তার উঠতে উঠতে অমিত বলল।
বীণা পিছন থেকে তাকে অনুসরণ করছিল, প্রার্থনা করছিল যেন কোন অঘটন না ঘটে। ওদের দুজনরই কোমরে দড়ি বাঁধা ছিল যাতে কোন বিপদ না ঘটে।
মনে মনে বীণা শপথ করে যে এরপরে আর কখনো এই রকম দুঃসাহসিক পাহাড় ভ্রমনে সে আসবে না। সে নীচে তাকিয়ে যা দেখলো তাতে খুব ভয় পেল। ঝিরঝির বৃষ্টি তখনও পড়ছিল। তারপর হঠাৎ আবার তা থেমেও গেল।
“একবার আমরা পাহাড় বেয়ে ঐ সুন্দর মন্দিরে পৌঁছাই, তখন ঐ গাধাদের দেখাবো কিভাবে পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে হয়।” অমিত বলল।
বীণা কিছু বলল না। সে শুধু ভয়ে ভয়ে তার স্বামীর পিছু পিছু হাঁটতে লাগলো।
দড়ি টেনে অমিত বলল “এই তাড়াতাড়ি কর; তুমি এখানে বাসার বাগানে হাঁটছো না বুঝলে। এটা পাহাড়। তাড়াতাড়ি এসো।”
“আহ!” হোঁচট খেয়ে বীণার মুখ দিয়ে অস্ফুট আওয়াজ বের হলো।
“অমিত ঘুরে দেখলো বীণা হোঁচট খেয়ে তার হাত, প্যান্ট সবকিছু কাদায় মাখামাখি করে ফেলেছে। এই দেখে অমিত রেগে গেলো,“গাধা কোথাকার, চোখের মাথা খেয়েছো? ঠিকমতো দেখতেও পাওনা নাকি? ফালতু কোথাকার!”
বীণা আস্তে করে উঠে দাড়ালো। সে তার কাদামাখা হাত প্যান্টের উপর দিয়ে মুছে কোমরের দড়ি শক্ত করে ধরে তার স্বামীকে অনুসরণ করে আবার পাহাড়ে উঠতে লাগলো।
দুজনে হাঁটতে হাঁটতে মন্দিরের কাছা-কাছি আসতেই অমিত আরও দ্রুত হাঁটতে লাগলো। “অমিত, প্লিজ আস্তে হাঁটো। সাবধানে যাও।”বীণা বলল।
“আরে নাহ! ভয় পেয়ো না। আমি জানি কিভাবে যেতে হবে।” একটু পর সে তার পেছন ফিরে দেখল, তার এবং বীণার মাঝে একটা গ্যাপ তৈরি হয়ে গেছে।
একটু পরেই ঘটে গেল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা। অমিত পা পিছলে নিচে পড়ে গেল, চিৎকার করে সে ছোট একটা পাহাড়ি বুনো মোটা ঘাস ধরল, আরও কিছু একটা ধরে লটকে থাকার জন্য খুঁজতে লাগলো।
“হায় খোদা! অমিত! অমিত!” বলে বীণা চিৎকার করে উঠলো। সে হতভম্ব হয়ে গেল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না কি করবে এই মূহুর্তে।
“হেল্প! বীণা প্লিজ আমাকে হেল্প করো। আমাকে উপরে টেনে তুলো।” অমিত ঝরঝর করে কেঁদেই ফেললো।
“হ্যাঁ, হ্যাঁ অতিম, দাড়াও দাড়াও। শুধু ধরে রাখো। হায় খোদা এখন আমি কি করি!” চারিদিকে কিছু একটা খুঁজতে লাগলো।
বীণা দেখলো কিছু আলগা বড় বড় পাথর পড়ে আছে ধারে কাছে। আর ঠিক সেই সময় অঝরে বৃষ্টি শরু হলো। এতে সব কিছু আরো ভিজে যাচ্ছিল আর সবকিছু আরও পিচ্ছিল হয়ে পড়ছিল।
“বীণা, আরে বোক মহিলা, কি করছো কি? আমাকে টেনে উপরে তুলো!” তুমুল বৃষ্টির মাঝে অমিত চিৎকার করে বলছিল।
অমিতের চিৎকার শুনে বীণা আস্তে আস্তে অমিতের দিকে এগিয়ে আসলো। সে দেখলো, একটু দুরে একটি ভারী বিশাল বড় পাথর। দ্রুত সে তার দড়ির প্রান্ত পাথরের চারপাশ বেঁধে আবার ধীরে ধীরে তার স্বামীর দিকে এগিয়ে গেল।
বীণা দেখলো তার স্বামী ঘামছে, পাথর আর ঘাস ধরে রাখার আপ্রান চেষ্টা করছে আর হাত থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
ভালোবাসা বঞ্চিত, স্বামীর অবজ্ঞার পাত্রী বীণা এরপর যা করলো তা কোনও স্ত্রী কখনও করতে পারে বলে মনে হয়না। বীণা তার হাতের দড়িটা শক্ত করে ধরল, তার হাত-ব্যাগের সাইড পকেট থেকে একটা ছোট ছুরি বের করল।
“বীণা, তুমি কি করছো?” শংকিতভাবে অমিত বলল আর তখনই তার চোখে ভয়ের ছাপ দেখা গেল। সে দেখলো মৃত্যু তার সামনে দাড়িয়ে।
বীণা দড়ির মাঝখানে কেটে দিল। বৃষ্টির আওয়াজ আর হু হু করা বাতাস অমিতের কান্নাকে বীণার কান পর্যন্ত পৌঁছাতে দিলো না। পাহাড় থেকে অমিতের পতন দেখার অপেক্ষা না করে বীণা ধীরে ধীরে নীচে নেমে গলো সাথীদের তাঁবুতে।
শেষ।