সাকিল এক দুরন্ত স্বভাবের ছেলে। তার সাথে দুষ্টুমিতে পারে এমন ছেলে গ্রামে পাওয়া যাবে না। কিন্তু ছেলেটা দুষ্ট হলেও বেশ শৃঙ্খল। বড়দের কথা মান্য করে।কেউ কোনো কাজ করে দিতে বললে সে তা করে দেয়। তার ভালো গুনের জন্য গ্রামের সবাই তাকে ভালোবাসে।
এতো কিছু সত্তেও দুষ্টুমিতে তার বিশেষ মনোযোগ। ওর দুষ্টুমির ভালো সঙ্গি ওর ছোট মামা। মামাবাড়ি ওর বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। তাই সারাদিন মামা বাড়িতেই তার সময় কাটে। তার মামার নাম ফারহান। এবার তিনি দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। লেখাপড়ায় তিনি খুব ভালো। ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের সেবা করবেন এটাই তার প্রত্যাশা। সাকিলের সাথে ভাব জমাতে তিনি সিদ্ধহস্ত। ওর হাসিখুশি হাবভাব, দুষ্টুমি, পাগলামি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্রের জন্য তিনি ওকে মি. হাসি বলে ডাকেন। সাকিলের সাথে ফারহানের গভীর ঘনিষ্ঠতায় তার আচরণ সম্পর্কে বেশ ভালোই আয়ত্ত করেছে সে। ওর বাড়িতে সাকিল কখন আসবে কখন যাবে সে সম্পর্কে তার জানা আছে।
সকালবেলা। ফারহান তার পড়ার টেবিলে হোমওয়ার্ক(নিয়ম ভঙ্গ হবে তাই ইংলিশে লিখতে পারলাম না)করছে। প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী সাকিল এখন তার বাড়িতে আসবে। ভাবতে ভাবতেই সাকিল এসে হাজির। একটা কথা তো বলাই হয়নি, সাকিল তার মামাকে “দুষ্টু” বলে ডাকে। কিন্তু আজ সেই নামে ডাকা হলো না। মামা, কি করছো” বলেই ফারহানের পাশে হাতটা টেবিলে রেখে মাথা গুজে এক চেয়ারে বসে পড়লো। সাকিলের মন খারাপ ফারহান খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। তার মন খারাপের কারণ জানার জন্য ওর দিকে ঘুরে বসলো।
– মন খারাপ?
– না
– তাহলে এমন দেখাচ্ছে কেন?
– কেমন?
– মি. হাসি থেকে মি. ঘোমরা হয়ে আছো।
কথাটা শুনে সাকিল মৃধু হাসলো, মন খারাপ বিধায় বেশিক্ষণ টিকতে পারলো না হাসিটা। সাকিল বলে উঠলো-
– বড় মাঠটায় কারা এসেছে মামা?
– তারা হলো পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।
– তারা কেন এখানে এসেছে?
– তোমাকে বলে কি হবে? তুমি এসব বুঝবে না।
– বলোনা মামা আমি শুনতা চাই।
– তাহলে শুন, তারা মূলত এদেশ দখল করতে এসেছে। আমাদের বড় মাঠের মতো দেশের বিভিন্ন জায়গায় তারা আস্তানা গেড়েছে। তারা সেখান থেকে দেশ দখলের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করছে।
– তাদেরকে বিতাড়িত করা যাবে না?
তার এমন প্রশ্নে ফারহান অবাক হয়। ছোট বাচ্চার মুখে এই প্রশ্ন আসলো কি করে।
– এর জন্য যুদ্ধ করতে হবে?
– যুদ্ধ?
– হুম যুদ্ধ। গতকাল শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধের জন্য দেশের সবাইকে প্রস্তুত হতে বলেছেন।
– তুমিও যুদ্ধ করবে মামা?
– অবশ্যই করতে হবে। আমাদের দেশকে বাচাতে হবে যে।
– আমিও যুদ্ধ করবো মামা।
সাকিলের কথা ফারহান শুনে মৃধু হাসলো। তার কথায় বুঝতে পারলো দেশের জন্য সেও জীবন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু আবেগ বিবেকের কাছে ধরা পড়ে। যুদ্ধের কথা সে বললেও সে তা করতে পারবে না।
(শেষ পর্ব আসছে ইনশাআল্লাহ বিজয়ের মাসেই…….)