খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) ঘোষিত ইঞ্জিন রিকসা নিষিদ্ধের পর প্রথম দিনে খুলনা নগরীতে কোনো ইঞ্জিন চালিত রিকসা বের হতে বা চলতে দেখা যায়নি। এত দিন যারা রিকসায় ব্যাটারি চালিত ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে, তাদের অনেকেই মরণঘাতী সেই ইঞ্জিন খুলে ফেলেছে। নগরীর সড়কে ফিরে এসেছে প্যাডেল চালিত সেই পুরানো রিকসা।
এদিকে ইঞ্জিন রিকসার দৌরাত্ম্য না থাকায় নগরীর সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে কমে গেছে যানজট। সড়কে বেপরোয়া গতির এই যান না থাকায় স্বস্তি দেখা গেছে নগরবাসীর মাঝে। তবে এখনও অনেক চালক রিকসা থেকে ইঞ্জিন অপসারণ করতে না পারায় নগরীতে রিকসার সংখ্যা ছিলো তুলনামূলক কম। এই সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া হাকার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। দু’এক দিনের মধ্যে অন্য প্যাডেল চালিত রিকসা খুলনা নগরীর সড়কে নামলে এই সমস্যা কেটে যাবে।
অপরদিকে ইঞ্জিন চালিত রিকসা বন্ধের বিরুদ্ধে নিরীহ রিকসা চালক ও মালিকদের উস্কানি দিচ্ছে একটি চক্র। তারা নানাভাবে রিক্সা চালকদের উস্কানি দিয়ে কেসিসির এই উদ্যোগ ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। এর সঙ্গে রিকসা মালিকদের একটি অংশ এবং কিছু শ্রমিক নেতা জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিটি মেয়রের কাছে দাবি জানিয়েছেন সাধারণ রিকসা চালকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ প্যাডেল চালিত রিকসা প্রতিদিন ৬০/৮০ টাকা করে ভাড়া দেন মালিকরা। অন্যদিকে ইঞ্জিন রিকসার ক্ষেত্রে দৈনিক এই ভাড়া ২৫০ টাকা। রিকসা মালিককে ২৫০ টাকা পরিশোধ করে নিজেদের দৈনিক খরচ ও মুনাফা উত্তোলনের জন্য এতোদিন বেপরোয়া গতিতে রিকসা চালায় চালকরা। এখন ইঞ্জিন খুলে ফেলায় মালিকদের ভাড়াও কমে গেছে। এতে সহজেই রিকসার ভাড়া পরিশোধ করে দৈনন্দিন খরচসহ মুনাফা করতে পারছেন চালকরা।
সূত্রটি জানায়, অতিরিক্ত ব্যবসার আশায় রিকসা মালিকরা ইঞ্জিন খুলতে চাইছেন না। তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে কিছু শ্রমিক নেতাও তাদের পক্ষে যোগ দিয়েছেন। এতে সাধারণ চালকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সাধারণ চালকদের বক্তব্য, সারদিন ইঞ্জিন রিকসা চালিয়ে যে উপার্জন হয় তার অর্ধেকই মালিকের ভাড়া পরিশোধে ব্যয় হয়। সেই তুলনায় প্যাডেলে আয় কম হলেও তাদের লাভ হয় বেশি।
কেসিসি ভারপ্রাপ্ত মেয়র আমিনুল ইসলাম মুন্না পূর্বাঞ্চলকে বলেন, সাধারণ চালক ও মালিকদের কথা বিবেচনা করে সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক প্রথমে ৩ মাস এবং পরে আরও ১৫ দিন সময় বাড়িয়েছেন। এজন্য নতুন করে আর সময় বাড়ানো হবে না। বুধবার থেকে নগরীতে কোনো ইঞ্জিন রিকসা চলতে দেওয়া হয়নি।
ইঞ্জিন চালিত রিকসা চালকদের বুঝিয়ে রিকসা থেকে ইঞ্জিন অপসারণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা স্ব স্ব ওয়ার্ডে ক্যাম্পেইন করছেন। ইতোমধ্যে অনেক মালিক রিকসা থেকে ইঞ্জিন খুলে ফেলেছেন। সিটি মেয়র সার্বিক কার্যক্রম মনিটর্রিং করেছেন এবং আমাদের নির্দেশনা প্রদান করছেন।
ভারপ্রাপ্ত মেয়র জানান, একই সঙ্গে অবৈধ রিকসা চার্জিং পয়েন্টের বিরুদ্ধে কেসিসির অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত ১৫টি ওয়ার্ডে অভিযান চালিয়ে অনেকগুলো চার্র্জিং পয়েন্টের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতোদিন চুরি করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সরকারের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে তারা। এই অভিযান চলছে। পাশাপাশি প্যাডেল রিকসার বিষয়ে ক্যাম্পেইন চলবে। পরিচ্ছন্ন, যানজটমুক্ত নগরী গড়ে তুলতে নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন সিটি মেয়র।