ইবাদত আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো চূড়ান্তভাবে দীনতা-হীনতা ও বিনয় প্রকাশ করা এবং নমনীয় হওয়া। আরও ইসলামি পরিভাষায় দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ-কর্মে আল্লাহ তায়ালার বিধি-বিধান মেনে চলাকে ইবাদত বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করে এ পৃথিবীতে সহজভাবে জীবনযাপন করার জন্য অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন।
আমরা আল্লাহর বান্দা। তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
অর্থ : “জিন ও মানবজাতিকে আমি (আল্লাহ) আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।” ( সূরা আয্-যারিয়াত,আয়াত ৫৬)
আমরা পৃথিবীতে যত ইবাদতই করি না কেন, সকল ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যই হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আরও এ ইবাদাত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য না হলে আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন – ” তারাতো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে।” ( সূরা আাল-বাইয়্যিনা,আয়াত ০৫)
কীভাবে ইবাদাত করলে ও জীবনযাপন করলে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হবেন, তার শেখানোর জন্য নবি-রাসুলগণ প্রেরিত হয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের অনুসরণ করতে পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, “(হে নবিশ!) আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করে, যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তো কাফির দের পছন্দ করেন না।” (সূরা আলে- ইমরান, আয়াত ৩২)
উক্ত আয়াত থেকে আমরা বুঝলাম আল্লাহ ও তার রাসুল কর্তৃক নির্দেশিত পথে ও মতো অনুসরণ করার নাম ইবাদাত। সুতরাং তাদের নির্দেশিত কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পাদন করতে পারলে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হব।
ইবাদতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো বিবেক -বুদ্ধি ও জ্ঞানের। যদি মানুষ সে বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর ইবাদাত করতে না পারে তার হলে সে চতুষ্পদ জন্তু কিংবা তার চেয়েও অধম হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ” তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না।তাদের চক্ষু আছে তার দ্বারা দেখেনা, তাদের কর্ণ আছে তার দ্বারা শুনে না; এরা পশুর ন্যায়। বরং অধিক নিকৃষ্ট (পশু হতে); তারা হলো অচেতন।” (সূরা আল-আরাফ, আয়াত ১৭৯)। অতএব ইবাদত বলতে শুধু উপাসনা কেই বুঝায় না। বরং আল্লাহর খলিফা (প্রতিনিধি) হিসেবে কার্য আল্লাহর বিধানমতো করাই হলো ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা বলেন –
অর্থ : “সালাত আদায় করার পরে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়বে। আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে ব্যাপৃত হবে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে।যাতে তোমরা সফলকাম হও।”( সূরা আল- জুমুআ, আয়াত ১০)
এ আয়াতের মর্ম থেকে বুঝা যায় যে,আল্লাহর আদিষ্ট কাজগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করে ব্যবসা-বাণিজ্য,চাকরি ও কৃষিকাজ করা এবং বৈধ পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও দুনিয়ার অন্যান্য সকল ভালো কাজ করা ইবাদত। এমনিভাবে আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ভালোবাসা, তার রহমতের আশা,শাস্তির ভয়, ইখলাস,সবর, শোকর,তাওয়াক্কুল ইত্যাদি সবই ইবাদতের শামিল।
আমরা আল্লাহ ও তার রাসুল (স:) – এর প্রদর্শিত পন্হা যথাযথভাবে অনুসরণ করলে পরকালে আল্লাহ আমাদের পুরষ্কৃত করবেন। ফলে দুনিয়া ও আমিরাতে আমরা শান্তি পাব।