রাগ এমন এক অনুভূতির নাম হয়তো এই অনুভূতিটি কারো মধ্যে কম অথবা কারো মধ্যে খুব বেশি লক্ষ্য করা যায় | রাগ এমন এক অনুভূতি যেটি মানুষকে পশুর মতো হিংস্র করে তুলে | আমরা খেয়াল করবো যাদের রাগ বেশি তারা রেগে গেলে হিতাহিত জ্ঞান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে |
অনেকেই আছে যারা রেগে গেলে জিনিসপত্র ভাঙচুর না করা পর্যন্ত অথবা কাউকে আঘাত না করা পর্যন্ত তাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা | এই জিনিসটি শিশুদের মাঝেও অনেকসময় লক্ষ্য করা যায় | যেটি তাদের শারীরিক এবং মানুষিক দিক দিয়ে চরমভাবে বিপর্যস্ত করে |
রাগ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাটা একটি শিশুর ছোটবেলা থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে | একবার যদি এটা অভ্যাসে পরিণত হয় তখন এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পরে | ছোট থেকেই কিছু শিশু রেগে গেলে দেখা যায় মাঝে মাঝে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে অথবা খেলতে গেলে রেগে গেলে তার সমবয়সী অন্য শিশুদের গায়ে হাত তোলে | আবার অনেক সময় দেখা যায় তাকে কেউ শাসন করলে অথবা সে যেটি চাচ্ছে সেটি না দেয়া হলেও অনেক সময় সে অতিরিক্ত ক্ষিপ্ত হয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে | হয়তো পরিবারের সদস্যরা তাকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করে তার রাগটাকে স্বাভাবিকভাবেই নেয় | অথবা ভাবে যে বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু মূলত দেখা যায় ছোট শিশুদের এই অভ্যাসটিই সে যত বড় হতে থাকে ততই তার মাঝে জেঁকে বসে | এবং তখন এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিনতর হয়ে পড়ে |তাই ছোট থেকেই একটি বাচ্চার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে | তাকে ছোট থেকেই বোঝাতে হবে রাগের কারণে তার কি কি ক্ষতিসাধন হতে পারে |
রেগে গেলে মানুষ তার বুদ্ধি বিবেচনা সব হারিয়ে ফেলে এজন্য দেখা যায় সে তার খুব কাছের মানুষ এমনকি বাবা মাকেও কষ্ট দিয়ে ফেলে | অনেক সময় রাগ থেকে বড় ধরণের শারীরিক আঘাত ও সে মানুষকে করে বসে |কিন্তু একটা পর্যায়ে রাগ কমার পর সে তার কৃতকর্মের জন্য আফসোস করতে থাকে| রাজি মানুষ অপর একটি মানুষকে মানুষিকভাবে যে বিপর্যস্ত করে এতে তার মনের ক্ষত সে কখনোই মুছতে পারেনা |
রাগ নিয়ে একটি ছোট গল্প ও আছে একটি ছেলে রেগে গেলে প্রায় এ সে মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করত | তার এই রাগ দূরীকরণের জন্য তার বাবা তাকে একটি কাঠের বেড়া দেখিয়ে বললো “তোমার যতবার রাগ হবে তুমি এই বেড়াতে ততগুলো পেরেক মারবে |”ছেলেটি তার বাবার কথা মতো যখনি রাগ উঠতো সে বেড়াটিতে পেরেক মারতে থাকতো এবং এতে তার প্রচুর শারীরিক পরিশ্রমও করতে হতো | এমন করতে করতে ছেলেটির রাগ একসময় নিয়ন্ত্রণ এ চলে আসলো | তখন তার বাবা তাকে বললো এবার “একটি একটি করে তুমি পেরেক বেড়া থেকে খুলো |” ছেলেটি বাবার কথামতো একটি একটি করে পেরেক বেড়া থেকে খুলতে লাগলো এবং একসময় সবগুলো পেরেক খোলা হয়ে গেলো | তখন তার বাবা তাকে বললো “বেড়াটির দিকে দেখো তোমার যখনই রাগ উঠতো তুমি পেরেক দিয়ে বেড়াটিকে আঘাত করতে যার কারণে তুমি পেরেকগুলো উঠানোর পর ও বেড়াটির গায়ে অসংখ ক্ষত সৃস্টি হয়েছে ঠিক একইভাবে তুমি যখন রাগ করে মানুষকে কথা দিয়ে আঘাত করো তখন তার মনে ঠিক একইভাবে ক্ষতের সৃষ্টি হয় যেটি কখনো মুছে যাবার নয় |” তখন ছেলেটি তার ভুল বুঝতে পেরে বাবার কাছে ক্ষমা চাইলো এবং বললো যে সে আর কখনোই অতিরিক্ত রাগ করবেনা |
এই ছোট্ট গল্পটি দিয়ে আমরাও বুঝতে পারছি যে রাগ মানুষ কে শারীরিক এবং মানুষিক দিক দিয়ে কতটা ভয়াবহ ভাবে আঘাত করে |এবং মানুষের মনে আঘাত দেয়ার ফলে তাদের সাথে আমাদের সম্পর্কে দুরুত্ব সৃস্টি হয়| আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) অসম্ভব ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন | উনার ভিতর রাগ বলতে কিছুই ছিলোনা | কাফেররা উনাকে কতভাবে আঘাত করেছিল কিন্তু উনি কখনো রাগ হয়ে তাদেরকে অভিসম্পাত ও করেননি | আমাদের সকলেরই উচিত রাগ হলে নিজের জিহ্ববাকে সংবরণ করা এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ করে নিজের মনকে স্থির করা |