একটি গবেষণায় দেখা গেছে আজকালকার দিনে বেশিরভাগ মানুষ সাধারণত যেসব সমস্যায় ভোগে তার মধ্যে ঘুম জনিত সমস্যা অন্যতম। আপনার যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হয় তবে সেই চাপটা সরাসরি আপনার মস্তিস্কে আঘাত করবে। শুধু তাই নয় অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে আপনার শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া সহ শরীরে নানা ধরণের রোগ বাসা বাঁধতে পারে আপনার অজান্তেই। আমাদের মধ্যে অনেকেই এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন পথ অবলম্বন করেন। যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজে দিলেও অনেক ক্ষেত্রেই তেমন কাজে আসে না।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেড থ্রেটসের গবেষক ঘুম না হওয়া ও মাঝ রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার ৭টি কারণ খুঁজে পেয়েছেন। সেগুলোই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি।
১. বেড রুমের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা
বিশেষজ্ঞরা ভাল ঘুমের জন্য বেড রুম অর্থাৎ শোবার ঘরের তাপমাত্রা ঠাণ্ডা রাখার পরামর্শ দেন। এজন্য ফ্যান অথবা এসি ব্যবহার করা যেতে পারে। বেড থ্রেটসের গবেষকদল জানিয়েছেন, ঘুমের জন্য বেড রুমের আদর্শ তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ওঠানামা করে থাকে। আমাদের ঘুমের সময়ও চক্রটি বজায় থাকে। রুমের তাপমাত্রা যদি অতিরিক্ত গরম ও অতিরিক্ত ঠাণ্ডা থাকে তাহলে ঘুমে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়। এজন্য ঘুমের সময় রুমের তাপমাত্রা আরামদায়ক রাখা প্রয়োজন।
২. মানসিক চাপ
ঘুমের সমস্যার মধ্যে এই সমস্যাটি অন্যতম। মানসিক চাপ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। প্রতিদিনের নানান কাজের চাপ সহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি সমস্যা আমাদের সবার জীবনেই থাকে। এসব চাপের ফলে সঠিকভাবে ঘুম হয়না। যার ফলস্বরূপ পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেও সারাদিন ঝিমাতে ঝিমাতেই কেটে যায়।
৩. অতিরিক্ত মদ্যপান
অনেকেই আছে যারা নিয়মিত মদ পান করে থাকে। যারা এই কাজটি করেন তারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন কেন আপনাদের ঘুম ঠিকমত হচ্ছে না কিংবা কেন মাঝ রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে। গবেষকরা বলেন, ঘুমাতে যাওয়ার আগে মদের গ্লাসে চুমুক দিলে রাতে আরামের ঘুম আপনার নষ্ট হবে। সুতরাং ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এই অভ্যাসটি এখনই ত্যাগ করুন।
৪. রুমে অতিরিক্ত আলো
অনেকেরই অভ্যাস আছে ঘুমের সময় রুমের আলো জ্বালিয়ে রাখা। কিন্তু এই কাজটি আপনার ঘুমের বারোটা বাজাতে ওস্তাদ। হয়তোবা আলো জ্বালিয়েও আপনি ঘুমাতে পারেন। কিন্তু আপনি আলো জ্বালিয়ে কখনই ঘুমের পরিপূর্ণ তৃপ্তি পাবেন না। আপনার ঘুমের ঘাটতি থেকেই যাবে। গবেষকরা বলেন, অন্ধকার পরিবেশ ভাল ঘুমের জন্য আদর্শ।
৫. ইনসোমনিয়া
ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা এক ধরনের অসুখ। এটি আপনার ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমিয়ে দেয়। যার ফলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ কম হওয়ার কারণে মাঝ রাত্রে আপনার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং পরে আর ঘুম আসতে চাই না। এ ধরনের সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬. বদহজম
এই সমস্যাটি ভাল ঘুমের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা। যাদের এই সমস্যাটি রয়েছে তারা ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দেড় দুই ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে নিন। আর যথাসম্ভব খাবার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। সব ঘুম গবেষকরা একমত যে, রাতে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা ঘুমে বাধা সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিখ্যাত পিরামিড নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ নিয়মে আপনি সকালে বেশি, দুপুরে তার চেয়ে কম ও রাতে তার চেয়েও কম খাবার গ্রহণ করবেন।
৭. রাতে মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার
সারাদিনের কাজ শেষে রাতে যখন বিছানায় ঘুমাতে যাবো তখন আমাদের বাধ্যতামূলক সঙ্গী মোবাইল। আমরা কি একবারও ভেবে দেখি যে মোবাইল আমাদের ঘুমের কতটা ক্ষতি করে। গবেষকরা বলেন, রাতে যতটা সম্ভব মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কিন্তু এই অভ্যাসটি ত্যাগ করা আমাদের কাছে যেন পাহাড় কাটার মত কঠিন কাজ বলে মনে হয়। বর্তমান লাইফস্টাইলে বেশির ভাগ মানুষেরই ঘুমের ঘাটতি দেখা দেয় মূলত এই অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব আজ থেকে এই অভ্যাসটি ত্যাগ করতে শুরু করুন।