আজ একজন অল রাউন্ডারের জন্মদিন।আজ একজন মায়ের জন্মদিন।আজকের এই দিনেই আল্লাহ তায়ালা উনাকে আমাদের প্রিয়জন হওয়ার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন ।আসুন উনার সাথে আপনাদের সংক্ষেপে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক।সংক্ষেপে বলছি কারণ আমার মা এমনই একজন মানুষ যার সম্পর্কে লিখতে গেলে গুগল এর সুবিশাল ডাটা সেন্টারও যথেষ্ট নয়।
একজন মানুষ সবদিক থেকে কখনোই পারফেক্ট হতে পারে না -এই চিরায়ত সত্য কথাটি আমার মায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।মাঝে মাঝে আমারই ভাবতে অবাক লাগে,একজন মানুষের এতগুলো গুণ কিভাবে থাকতে পারে? আমার মা একজন ভালো মা, একজন ভালো মেয়ে, একজন ভালো স্ত্রী সর্বোপরি একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ বটে।আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমার মায়ের সবচেয়ে বড় সফলতা কি? আমি বলব তিনি আমাদের সবাইকে পাগলের মতো ভালোবাসেন।তাহলে কি আমার মায়ের কোন ব্যর্থতা নেই? অবশ্যই আছে।সেটা কি রকম?আমার মা আমাদের পাগলের মতো ভালোবাসেন।হ্যাঁ,এটাই আমার মায়ের একমাত্র ব্যর্থতা।
‘মা’ শব্দটি আমার জীবনের একটি অংশই নয় শুধু বরংচ আমার জীবন।একদম ছোট্ট থেকে আমার মা আমাকে যেভাবে মানুষ করেছেন, যেভাবে আগলে রেখেছেন সেটাকে শব্দে প্রকাশ করার মতো শব্দ এখনো লিপিবদ্ধ হয় নি পৃথিবীর কোন অভিধানে-এই কথা আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি।
একটু আগে আমার মাকে অল-রাউন্ডার কেন বলছিলাম,জানেন?আমার হলো সেই বৃক্ষ যে তাঁর সারাটা জীবন শুধু অন্যের জন্যই কাজ করে যায়।নিজের ঢালপালা বিস্তার করে-অন্যদের জন্য,অক্সিজেন ত্যাগ করে- অন্যদের জন্য,এমনকি মৃত্যুর পরেও নিজের জীবাশ্ম দিয়ে অন্যদের উপকার করে যায়!আমার মাও ঠিক এমনই।জীবন্ত এক নি:স্বার্থ বৃক্ষ যেন!ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, খেলার সাথী থেকে শুরু করে শিক্ষক আমার জীবনে সবকিছু ওই একজনই!
আমার লেখাপড়ার হাতেখড়িও হয়েছিল মায়ের হাত ধরেই।আমি লক্ষ্য করে দেখেছি সেই ছোট্টবেলা থেকেই আমার লেখাপড়ার প্রতি মা কেমন যেন বাড়বাড়ি রকমের যত্নবান ছিলেন।বর্ণমালার কোন অক্ষরটা কেমন করে লিখলে আরো বেশী মোহনীয় হয়ে উঠবে আমার পরীক্ষার খাতা, সেটা যে আমাকে কতবার কতভাবে বুঝিয়েছে আমার মা, বলে শেষ করা যাবে না!খাতার সাইডে কতটুকু গ্যাপ রাখলে মার্জিন রুচিসম্মত হয়,দুটো শব্দের মাঝে ঠিক কতখানি ফাঁক রাখা প্রয়োজন ইত্যাদি ইত্যাদি…।
আমার মা পেশায় একজন শিক্ষক।তাঁর হাত ধরে কত ছেলে-মেয়েরা যে মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে উঠেছে তার হিসেব রাখতে চাওয়াটা বোকামি ছাড়া কিছু নয়।অবশ্য এর প্রতিদান দিতেও ভুলে নি তারা।আম্মুর ছেলে-মেয়েরা যে তাকে কতটুকু ভালোবাসে সেটা লিখিত আকারে প্রকাশ করার দু:সাহস আমি নাই বা করলাম আজ।
ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা।অন্য সব গার্ডিয়েনদের মতো আমার মা আমাকে কখনোই বলেনে না যে,তোমাকে ডাক্তার হতে হবে,ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, এই হতে হবে…সেই হতে হবে-তিনি শুধু আমাকে একজন সত্যিকারের মানুষ, একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নাগরিক হওয়ার জন্য তাগাদা দেন সবসময়।
সবশেষে শুধু একটা কথাই বলতে চাই,মায়েদের কোন জন্মদিন হয় না- মায়েরা প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে নতুনভাবে জন্মগ্রহণ করেন।তবে আজ এই পৃথিবীতে আমার মায়ের দৈহিক আগমণ ঘটেছিল,সেই উপলক্ষ্যে তাকে জানাতে চায়, ‘শুভ জন্মদিন, মা।একদিন আমি তোমার মনের মতো হয়ে দেখাবো, ইনশাল্লাহ্।’
মহান আল্লাহ তায়ালা আমার মাকে নে হায়াত দান করুন,আমিন।
-নাফিস ইসতিয়াক ইমন