আজ ৫ই আগষ্ট। আজ বিকেলে তিথিদের উপরের তলার এক বৃদ্ধ মারা যান।বৃদ্ধের হঠাৎ মৃত্যুতে তিথি আচমকিত হয়।যেই মানুষটার সাথে তার ভোরবেলা দেখা হয়েছিল ছাদে সে বিকেলে আর নেই।ভোরে যখন দেখা হয়েছিল তখন বেশ সুস্থই দেখাচ্ছিল উনাকে।
হঠাৎ বিকেলে শুনে তিনি মারা গেছেন।সারা বিল্ডিং এ যেন নিরবতা ও ভয়।তিথি সাধারণত ভয় পায় না।সে যথেষ্ট সাহসী।তবে আজকের ব্যপারটা আলাদা।বৃদ্ধের সাথে তার ভালই বন্ধুত্ব ছিল। প্রায় সময় তিথি ছাদ এ যাওয়ার সময় তার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে যেত।বৃদ্ধও তাকে বেশ স্নেহ করতেন।দুজন মিলে ছাদে চা খাওয়ার সময় বৃদ্ধ তার শৈশবের নানান গল্প করতেন।এছাড়াও তার বড় ভাই এর যুদ্ধে যাওয়ার গল্প।তিথির মনে বারবার ভেসে উঠে বৃদ্ধের মুখ।ধবধবে সাদা চামড়া,সাদা চুল,আর পরোনে সাদা পাঞ্জাবি। মৃত্যুর পর সে দেখতে যেতে চেয়ে ছিল, কিন্তু মা তাকে কিছুতেই যেতে দেয় না।সপ্নে নাকি খারাপ কিছু দেখে ভয় পাবে।
রাতে খাবার খেয়ে ঘুমাতে এলে কেমন যেন লাগে ওর।বৃদ্ধের রুমের ঠিক নিচেই তিথির রুম।বরাবর রুম হয়ার কারনে রাতে বৃদ্ধের কাশি শব্দ তিথির রুম পযর্ন্ত শোনা যেত।আজ সেই মানুষটি নেই।রাতে ঘুমাতে ভয় পেলেও প্রকাশ না করে নিঃশব্দে শুয়ে পড়ল বিছানায়।বৃদ্ধের কথা চিন্তা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে ও।
ঘড়িতে প্রায় ৩ টা বাজে,উপর থেকে বৃদ্ধের কাশির শব্দ শুনতে পায় ও।কিন্তু কিভাবে?ভুল শুনছে না তো সে,না এত পরিষ্কার।হঠাৎ শিউরে উঠে ও।আম্মুর রুমের সামনে আসে ও কিন্তু আম্মু তো ঘুমাচ্ছে, ডেকে তোলা কি ঠিক হবে?চিন্তা করতে থাকে,পরে কৌতুহল ও সাহসিকতা নিয়ে রওনা হয় উপরের তলার দিকে।
তাদের ঘরে কেউ নেই, কেননা বৃদ্ধের মৃত্যুর পর সবাই তাকে কবর দিতে বাড়ি নিয়ে যায়। বাড়ি তাই সম্পূর্ণ ফাঁকা ও ঘরে তালা দেয়া ছিল।কিন্তু তিথি যখন উপরে উঠে তখন সে দরজা খুলা দেখতে পায়।অবাক হয়ে যায় তিথি।রাতে হয়ত কেউ ফিরেছে। নিজের অজান্তেই ও ঘরের ভিতরে ঢুকে যায়।
ডাইনিং রুমে তাকিয়ে দেখে বৃদ্ধ কাপে চা ঢালছে,তাকে দেখে বলে ‘তিথি চা টা কেমন হয়েছে দেখ তো,আমি বানিয়েছি।’স্তম্ভিত হয়ে যায় তিথি।সে কি ঠিক দেখছে কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়।লোকটি মারা গিয়েছে। হঠাৎ করে চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠে ও।শরীর থরথর করে কাঁপছে এবং ঘেমে একাকার ও।এটা কি তাহলে স্বপ্ন ছিল? নিজেই প্রশ্ন করে নিজেকে।যেন স্বপ্ন নয় বাস্তবে ঘটেছে এমন।
আসলে সেটা ছিল তিথির দুঃস্বপ্ন।মানুষ মূলত যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা নিজ জীবনে ঘটে যাওয়া যেকোনো অনির্ণে য় জটিলতাগুলো ঝড়ের প্রতিরূপ হিসেবেই দুঃস্বপ্নে দেখে থাকে।তিথির ক্ষেত্রে ও তাই।ঘুমানোর পূর্বে সে সেই বৃদ্ধের কথা ভাবতে থাকে।এবং তার এই অবচেতন মনই স্বপ্নে তাকে কাল্পনিক ভৌতিক জগতে নিয়ে যায়, যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই।