যৌতুক আমাদের সমাজে একটি সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে | আমাদের সমাজবাবস্থা যতই শিক্ষিত হোক না কেন এই ব্যাধি থেকে কেউ যেন এখনো মুক্ত নয়| শিক্ষিত অশিক্ষিত সমাজ সকলেই যেন এই ব্যাধিতে আটকে আছে |
শিক্ষিত সমাজ এক প্রকার উপঢৌকন হিসেবেই যৌতুককে গ্রহণ করছে | মেয়ের বাড়িতে উপঢৌকন পাঠাবার নাম করে বাবা মা পাঠিয়ে দিচ্ছে যৌতুক | কবে এই অভিশাপ থেকে সমাজ মুক্ত হবে আদৌ কভু হবে কিনা এই নিয়ে সংশয় থেকেই যায় মনে |
শিক্ষিত সমাজে মেয়েরা যতই শিক্ষিত হোক না কেন মেয়েদের শশুর বাড়ি পাঠানোর চিন্তা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই প্রতিটি মেয়ের অভিবভাবকের মাথায় যেন এই দুশ্চিন্তাও শুরু হয়ে যায় মেয়েকে কি কি দেয়া লাগবে বিয়েতে | এমনকি আমাদের দেশের কিছু কিছু জেলায় যৌতুক একটি প্রথা হয়ে গেছে | এই প্রথাকে ছেলের পরিবার অন্তর্ভুক্ত করেছে সামাজিক রীতিনীতি হিসেবে | আর মেয়েপক্ষও ছেলেপক্ষের এই ধরণের অবাধ রীতিনীতিকে অগ্রাহ্য না করে সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে | যার কারণে ছেলেপক্ষের এই অবাধ রীতিনীতি দিন দিন বেড়েই চলেছে | শিক্ষিত পরিবারগুলোতে যেন এই রীতিনীতি আরো বেশি চোখে পড়ছে দিন দিন |
অপরদিকে গ্রামে মেয়ে জন্ম নিলেই যেন বাবা মায়ের শুরু হয়ে যায় মেয়েকে মোটা অংকের টাকা খরচ করে বিয়ে দেবার টেনশন | দরিদ্র বাবা মা নিজেদের শেষ সম্বল বিক্রি করে মেয়ের বিয়েতে প্রস্তুত করে মোটা অংকের টাকা, পূরণ করছে তাদের মেয়ের হবু জামাইর পরিবারের পক্ষ থেকে অনৈতিক চাওয়া পাওয়াগুলো | তারপর সেই চাওয়া পাওয়া থেকে উনিশ থেকে বিষ হলেই হলেই বিয়ের পর বাড়ির বৌটিকে শুনতে হয় কটু কথা | এমনকি বাড়ির বৌ এর উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন | লাল শাড়ি,লাল চুড়ি পড়ে যেই মেয়েটি এক সময় সংসার করার স্বপ্ন দেখতো সেই মেয়েটির স্বপ্ন যেন এক নিমিষে নিঃশেষ হয়ে যায় | তার জীবনে যেন নেমে আসে কালো নিকষ অন্ধকার | কোনো কোনো সময় মেয়েটি তার পরিবারকে কিছু না বলতে পেরে বেঁচে নেয় আত্মহত্যার পথ | এই
আত্মহত্যাতেই যেন মিলে তার মুক্তি | জীবনের শেষ সম্বল দিয়ে যেই বাবা মা কিনতে চেয়েছিলো তাদের মেয়ের মুখের হাসি বিনিময়ে গ্রহণ করতে হয় তাদের আদরের মেয়ের লাশ |আর অর্থলোভী ছেলের পরিবার খুঁজতে শুরু করে যৌতুকের দায়ে নিঃশেষ করার জন্য আরেকটি নতুন প্রস্ফুটিত জীবন |
হাজার হাজার রঙিন শাড়ি চুড়ি পড়ে সংসার করার স্বপ্ন চোখে মেয়েগুলি যায় শশুরবাড়ি| আর মেয়েগুলির স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায় যৌতুকের চাপে | মুখ থুবড়ে যায় তাদের স্বপ্নগুলো | কেউ হয়তো এই যুদ্ধে টিকতে না পেরে নিজেকেই বিলীন করে দেয়| কিন্তু বিচার হয়না স্বার্থলোভী মানুষগুলোর | স্বার্থলোভী মানুষগুলোর স্বার্থ কোনোদিন শেষ হয়না | শেষ হয়না তাদের চাওয়া পাওয়া | একের পর এক জীবন নিঃশেষ হতে থাকে তাদের হাতে| আর অপরদিকে জিনিস দিতে দিতে ক্ষান্ত হয়না মেয়েদের পরিবারগুলো | আরো কত জীবন,কত স্বপ্ন হারিয়ে গেলে মিলবে যৌতুকের থেকে মুক্তি ? আর কতকাল যৌতুকের দায়ে মেয়েরা অভিশাপ নামে চিহ্ণিত হবে এই সমাজে | এই হিসাব খুঁজে পাওয়া যেন আসলেই দুস্কর |