করোনার সংকটকালে বাংলাদেশে বাড়ছে বেকারত্ব
সারাবিশ্বে করোনার এই সংকটকালে অন্যান দেশের মতই আমাদের এই বাংলাদেশেও বাড়ছে বেকারত্ব । এ বছর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে সবকিছু বন্ধ করে দিলেও কিছু দিন পরে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার কথা ভেবে কিছুটা শিথিলতার পথ বেছে নিতে হয়েছে সরকারকে । তবু দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপকভাবে চালিয়ে নিতে পারছে না তাদের কার্যক্রম। চাহিদা কমে যাওয়ায় সেবামুখী ও উত্পাদনমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উত্পাদন কমিয়ে দিয়েছে। এতে বাধ্য হয়ে কর্মী ছাঁটাই করতে হচ্ছে। যা বেকারত্বকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
করোনায় সব থেকে বড় ক্ষতি হচ্ছে দেশের সব অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে যুক্ত ব্যক্তিদের যারা সাধারনত পারিবারিক কর্মসংস্থানে জড়িত । এদের মধ্যে রেস্টুরেন্ট, রিকশাচালক, পরিবহনকর্মীসহ অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সারা দেশের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখের মতো পারিবারিক কর্মসংস্থানে জড়িত ব্যক্তি বা অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক আছে । যারা কোনো মজুরির অন্তর্ভুক্ত নয়।
শুধু বাংলাদেশেই না, করোনা মোকাবিলায় লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে এমন সমস্যায় প্রায় সব বড় অর্থনীতির দেশই পড়েছে। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেনসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের মতই বাংলাদেশেও বেড়েছে বেকারত্ব।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর একটি পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে, সারা বিশ্বে ৩৩০ কোটি কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ৮৫ শতাংশ মানুষ আজ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত । আমরা কেউই জানিনা বাংলাদেশের বেকার সমস্যা আগামীতে কতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বেকারদের মাঝে সব থেকে বেশি বেকার শিক্ষিতরা । শিক্ষিতদের বেকার হওয়ার পিছনে একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষিতরা সামাজিক পদমর্যাদার কারণে কায়িকশ্রমে নিজেকে নিয়োজিত করতে চায় না । আবার অপর দিকে প্রতি বছর বের হয়ে আসা সব শিক্ষিতকে সরকারি চাকরি দেওয়াও সরকারের পক্ষে সম্ভাব হয় না । ফলে দেশে প্রতি বছর বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই আছে ।
দীর্ঘ সাত মাস ধরে সারাদেশে করোনা অবস্থান করায় এই বেকার সমস্যাকে বাড়িয়ে একদম ঘাড়ের ওপর বসিয়ে দিয়েছে। এখন থেকেই এই সমস্যা নিয়ে আলোকপাত না করলে করোনা পরবর্তী সময়ে অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই সরকারের উচিত দেশে আরো নতুন নতুন যুগোপযুগী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা । কোনো দেশের পক্ষেই বেকার সমস্যা একদম নিরসন করা সম্ভব নয়, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে বেকারদের কেউ নিজের কর্মসংস্থান নিজেই তৈরি করে নেওয়ার চেষ্ঠা করতে হবে। তাহলে একক ভাবে সরকারের উপর থেকে কিছুটা হলেও বেকারত্ব নিয়ন্ত্রনের বোঝা কমবে ।
করোনার এই সময়ে শিক্ষিত বেকাররা অনলাইনে ছোট ছোট কিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে । সেই সাথে স্থানীয় সরকারেরও উচিত হবে এসমস্ত শিক্ষিত বেকারদেরকে কিছু ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া ও সামাজিকভাবেও সর্বোচ্চ সাহায্য সহযোগিতা করা । যাতে তারা নিজ প্রচেষ্ঠায় আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে বেকারত্ব থেকে মুক্ত করতে পারে । এভাবেই ধীরে ধীরে বাংলাদেশ থেকে এই বেকার সমস্যা দূর করা সম্ভব ।