কাজিন ম্যারেজ- শুনতে অদ্ভুত নয় মোটেই, তবে এর ফলাফল অদ্ভুত হতেই পারে। সেই রাণী ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ- সকলের কাছেই প্রচলিত এই নিকটাত্মীয়ের সাথে বিয়ে হওয়াটা৷
কাজিন ম্যারেজ কী? : যখন আপনি নিজের নিকটাত্মীয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। কাজিন অর্থ শুধুই আপন চাচাতো, মামাতো ইত্যাদি ভাই-বোনদের বুঝানো হয়নি, বরং আপনার মা কিংবা বাবার চাচাতো, মামাতো ইত্যাদি ভাই-বোনদের যারা ছেলে-মেয়ে তাদেরকেও বুঝানো হয়েছে। এই নিকটাত্মীয়দের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে মেডিকেলের ভাষায় consanguineous marriage বলা হয়। consanguineous marriage তিন রকমের হতে পারে, এর মধ্যে যেই দুইটা নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো-
- ১. ফার্স্ট ডিগ্রি রিলেটিভ- আপন চাচাতো, মামাতো, খালাতো কিংবা ফুফাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হওয়া।
২. সেকেন্ড ডিগ্রি রিলেটিভ- মা কিংবা বাবার কাজিনের ছেলে-মেয়ের সাথে বিয়ে হওয়া।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে সরাসরি কাজিনের সাথে বিয়ে হওয়াটা অনেকটাই অযৌক্তিক। ফার্স্ট কাজিনদের জিনগত মিল প্রায় ১২ শতাংশ, বংশপরম্পরায় একই জিন বহন করে আসছে। আর এর ফলে যেসব জিনগত রোগবালাই বংশগতভাবে চলে আসছে, তা সন্তানের মধ্যে প্রকটভাবে দেখা দেয়।
ক্লিনিক্যাল জেনেটিক্স অনুসারে, consanguineous marriage এর মানে হলো, দুইজন সেকেন্ড ডিগ্রি রিলেটিভের বা তারও নিকটস্থ আত্মীয়ের মধ্যে বিবাহ হওয়া, যাদের ইনব্রিডিং কো-এফিসিয়েন্ট (F) ০.০১৫৬ এর সমান বা তার বেশি। এখানে F হলো, লোকি এর অনুপাত এর একক, যেখানে সন্তানরা তাদের কোনো বৈশিষ্ট্য বাবা-মা উভয়ের থেকেই পাবে।
একটা সহজ ব্যাপারে আসা যাক, আপনার দাদি থেকে আসা একটা সুনির্দিষ্ট জিন আপনার ও আপনার সকল কাজিনের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া বহন করছে, কিন্তু আপনার থ্যালাসেমিয়া প্রকট না, আবার আপনার কাজিনদের মধ্যেও প্রকট না। কিন্তু যখন এই সুনির্দিষ্ট জিন, তারই অনুরূপ আরও একটি থ্যালাসেমিয়া বাহক জিন পেয়ে যায় তখন এটা প্রকট আকার ধারণ করবে। অর্থাৎ, যখন আপনি আপনার কাজিন-কে বিয়ে করছেন, তখন আপনি আপনার সন্তানদের মধ্যে এই প্রকট থ্যালাসেমিয়ার আশংকা সাধারণের তুলনায় বহুগুণে বাড়িয়ে দিলেন। এইভাবেই বংশগত রোগ খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়। এটা শুধুই একটা উদাহরণ মাত্র।
যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড শহরে এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের কারণে সন্তানের জিনগত অস্বাভাবিকতার হার সাধারণ শিশুদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ের কারণে জন্ম নেয়া শিশু আক্রান্ত হচ্ছে সিস্টিক ফাইব্রোসিস নামে বিরল রোগে। এছাড়াও অটোসোমাল রিসেসিভ জাতীয় রোগ যেমন,থ্যালাসেমিয়া, উইলসন ডিজিজ, বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি, মানসিক বৃদ্ধি বিকাশ ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা গেছে।
সাধারণের তুলনায় নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হলে প্রজনন ক্ষমতা বেশি হলেও গর্ভপাত বা মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকিও বেশি থাকে।বিটা থ্যালাসেমিয়া, সিকেল সেল ডিজিজ সহ বিভিন্ন ধরনের জিনগত রোগ, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু কিংবা শারীরিক ত্রুটিযুক্ত শিশু জন্মের ঝুঁকি সাধারণের থেকে বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। এজন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নিকটাত্মীয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে মানা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সহ মোট তিনটি দেশে এই ধরনের বিবাহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও অবশ্যম্ভাবী কোনো ফল দেখা যায় না, তবুও ঝুঁকি যেহেতু আছেই, তাই এড়িয়ে চলাই ভালো। আরে একটা জিনিস, কিছু বিজ্ঞানীরাও কিন্তু কাজিনদের বিয়ে করেছিলেন। আর তাঁর উজ্জ্বল উদাহরণ আলবার্ট আইনস্টাইন ও চার্লস ডারউইন।