এক দেশে ছিল একজন সুন্দর রাজকুমার। তাঁর সততা, ভালো কর্মের জন্য সবাই তাকে ভালোবাসতো। ওই দেশের রাজা খুবই বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তাই তিনি তাঁর রাজ্যের ভার, তাঁর সুপুত্র সুন্দর রাজকুমার এর উপর দিতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু ওই দেশের রাজার মন্ত্রী ছিল খুবই খারাপ। সে ওই রাজ্যের ভার নিজে নিতে চায়। তাই সে রাজকুমারকে দু-চোখে সহ্য করতে পারতো না। যেহেতু রাজা চেয়েছেন, রাজকুমার রাজা হোক। তাই মন্ত্রী রাজকুমারকে মেরে ফেলতে চায়।
কিন্তু মেরে ফেলবে কি করে? রাজকুমারের চারপাশে অনেক সৈন্য-সামন্ত সবসময় থাকে। উপরন্তু, রাজকুমারও অনেক শক্তিশালী। ফলে সে একা কখনোই রাজকুমারকে মারতে পারবে না। তাই রাজকুমারকে মারতে হলে, তাকে ফন্দি আঁটতে হবে।
অনেক ভেবে-চিন্তে মন্ত্রী একটা ফন্দি আঁটল। সে রাজকুমারকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নদীর কাছে নিয়ে যাবে। তারপর নদীর যখন উত্তাল ভাব আসবে, অর্থাৎ, নদীতে যখন খুব স্রোত আর বড় বড় ঢেউ উঠবে, তখন সে রাজকুমারকে নদীতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে। আর রাজমহলে এসে বলবে, রাজকুমার নদীর স্রোতে ভেসে গেছে।
সাক্ষীস্বরূপ, একজন জেলেকে টাকা দিয়ে সে কিনে নিবে। ওই জেলে যখন রাজার কাছে সাক্ষী দেবে যে, রাজকুমার নদীর স্রোতে ভেসে গেছে, তখন কেউ আর মন্ত্রীকে সন্দেহ করতে পারবে না। এরপর রাজকুমারের অভাবে, সে রাজা হয়ে যাবে।
এই পরিকল্পনা মোতাবেক সে একজন জেলেকে টাকা দিয়ে কিনে নিল। এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেল। হঠাৎ, একদিন রাজকুমার নদীতে জেলেরা মাছ কি করে ধরে, তা নিজ চোখে দেখার জন্য নদীতে যেতে চাইলেন। এই সুযোগে, মন্ত্রী রাজকুমারকে বলল, রাজকুমার যেন তার সাথে একলা যায়। রাজকুমার জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন?”
উত্তরস্বরূপ, মন্ত্রী বলল, “আমি আপনাকে আমার বসাথে একলা যেতে বলছি। এর পিছনে একটি বড় কারণ আছে। আপনি আর আমি যদি একলা ছদ্মবেশে নদীতে যায়, তাহলে কেউ আমাদের চিনতে পারবে না। ফলে আমরা তাদের প্রকৃত কাজগুলো দেখতে পারব। কিন্তু আপনি যদি রাজকুমারের বেশে যান, তাহলে জেলেরা আমাদের দেখে ভালো করে কাজ করতে চাইবে। তারা আসলে যেভাবে মাছ ধরে, সেভাবে তারা নাও ধরতে পারে। তাছাড়া, নদীতে যেসব মাছের ডিম হয়েছে, তাদের তারা ধরে কিনা, তাও দেখতে পারব না। কেননা, আপনি যে মা-প্রাণীদের খুব ভালবাসেন। তাই আপনাকে দেখে তারা ওইসব ডিমওয়ালা মাছকেও ধরবে না। এজন্য আমি আপনাকে বলছি, আমার সাথে ছদ্মবেশে একলা যেতে।”
রাজকুমার এতে রাজি হয়ে গেলেন।
তারপরের দিন, মন্ত্রী আর রাজকুমার একসাথে ছদ্মবেশে নদীতে গেলো। কিন্তু ওইদিন আবহাওয়া খারাপ হয়ে গেলো। কোন জেলে আর নদীর তটে আসল না। রাজকুমারও চলে যেতে চাইলেন। কিন্তু মন্ত্রী তাঁকে নদীর দিকে কিছু একটি দেখিয়ে বলল, “রাজকুমার ওই যে কি যেন একটা!”
এই কথা শুনে রাজকুমার নদীর আরও কাছে চলে গেলেন। এইসময়, একটা বড় ঢেউ আসতেছিল। এই সুযোগ হাতছাড়া করল না মন্ত্রী। সে রাজকুমারের পিছন পিছন নদীর কাছে গেলো। রাজকুমার যখন সামনে নদীতে দেখতে ব্যাস্ত, তখন মন্ত্রী রাজকুমারের পিঠে ধাক্কা দিল।
এমন সময় ঘটলো এক বিস্ময়কর ঘটনা। একটা পিঁপড়া রাজকুমারের পায়ে দিল কামড়। কামড়ের যন্ত্রণায় রাজকুমার তাঁর পায়ের দিকে ঝুকে বসে পড়লেন। ফলে মন্ত্রী তাঁর পিঠে ধাক্কা দিতে গিয়ে নিজেই নদীতে পড়ে গেলো। আর নদীর বিশাল বড় বড় ঢেউয়ে মন্ত্রী সেই যাত্রায় অক্কা পেল। দূর থেকে মন্ত্রীর কেনা সাক্ষী সব দেখতেছিল। সে অবস্থা বেগতিক দেখে ছুটে পালাল।
রাজকুমার মাথা তুলে দেখলেন, মন্ত্রী স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু রাজকুমারের আর কিছু করার ছিল না। কারণ, নদীতে তখন বিশাল ঝড় উঠেছে, আর তাঁর সাথে সৈন্য-সামন্ত কিছুই নেই।
তাই রাজকুমার দুঃখ-ভারাকান্ত মন নিয়ে রাজদরবারে এসে তাঁর বাবাকে সব খুলে বলল। কিছুদিন, শোক পালন করা হলো। পরে সবাই সব ভুলে গেলো।
রাজা মারা যাবার আগেই রাজকুমারকে রাজা ঘোষণা করা হলো। আর রাজকুমার রাজা হয়ে প্রজাদের সেবা করতে লাগলেন।
তো বন্ধুরা, এই গল্প থেকে আমরা কি শিখলাম? অন্যের জন্য খাল খুঁড়লে, নিজেকে সেই খালে আগে পড়তে হবে!
এতক্ষণ পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।