নাসার বিজ্ঞানীরা খুব চটে গেছেন। এঁদের একজন ড. সেথ
শােসটাক (সেটি ইনস্টিটিউট-এর জনসংযােগ অধিকর্তা) যেখানে
যাচ্ছেন সেখানেই
গ্রহান্তরের বুদ্ধিমান প্রাণির নানারকমের আকারের
বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিচ্ছেন। কারণ এই প্রাণিদের স্রষ্টারা কল্পনার
খাতিরে বৈজ্ঞানিক যুক্তিকেই উড়িয়ে দিচ্ছেন। অবশ্য, একথা ঠিক
যে, এই বুদ্ধিমান প্রাণিরা কীরকম দেখতে হবে তা নিখুঁতভাবে বলা
সম্ভব নয়, কিন্তু এদের চেহারায় কী কী থাকতে পারে না, তা অন্তত বলে রাখা যায়, কারণ, বিজ্ঞানের প্রাথমিক নিয়মগুলােকে তাে আর
উল্টে দেয়া যাবে না, তা সে বিশ্বজগতের যে কোনও জায়গাতেই
হােক।
‘ দি ব্লব ’ সিনেমার নায়ক স্টিভ ম্যাকুইন যাদের সঙ্গে লড়াই
করলেন, সেই গ্রহান্তরের বুদ্ধিমানরা জেলির মতাে থকথকে
এককোষী প্রাণি, অথচ মাংসাশী। এককোষী প্রাণির মাংশ গিলে
খাওয়া যে কত হাস্যকর, তা জীববিজ্ঞানের প্রথম পড়ুয়ারাও জানে।
কারণ, একটি কোষ যদি বিশাল আকৃতির হয় তা হলে তার
প্রােটোপ্লাজম-এর কেন্দ্রস্থল হবে পরিধির থেকে অনেকটা দূরে।
ফলে তার মধ্যে খাদ্য-নির্যাস ও গ্যাসীয় পদার্থের চলাচল হবে এত
ধীরে যে, তার অস্তিত্ব রক্ষাই সম্ভব নয়।
উল্টো দিকে আবার একটা গল্পে দেখা যাচ্ছে যে, গ্রহান্তরের
প্রাণিগুলাে মসুর ডালের চেয়ে ছােট। এর লেখক হয়তাে
‘ মাইকোপ্লাজমা ‘ নামক ব্যাকটিরিয়ার কথা জেনে উৎসাহিত
হয়েছিলেন, যাদের দৈর্ঘ্য এক ইঞ্চির এক কোটি ভাগের এক ভাগ।
প্রাণিদের ছােট হওয়ার সীমা নেই বটে, জ তবে তারা বুদ্ধিমান হবেই
না। কারণ, বুদ্ধির জন্য যে কয়েক কোটি জটিল কোষ সমন্বিত মস্তিষ্ক দরকার, তা ওইটুকু চেহারায় আঁটবে না।
তাই বুদ্ধিমান একটা
হওয়ার
একটা জন্তুর আকৃতিকে জন্য আকৃতির সীমা আছে।
যদি কোনও
উপায়ে অর্ধেক
যায়, তা হলে জ্যামিতিক নিয়মে তার উপরতলের করে দেওয়া
ত্বক ও অভ্যন্তরীণ
কলকজার অনুপাত হয়ে যাবে চার গুণ। ফলে তখন তার দেহের
হতে তাপ থাকবে ছড়িয়ে। পড়বে এই কারণে অনেক তাড়াতাড়ি, অর্থাৎ শরীরটা দ্রুত ঠাণ্ডা
তাকে ঘনঘন খেয়ে দেহের তাপ ঠিক
রাখতে হবে। এই ব্যাপারটাই ঘটে ঘােট হামিংবার্ডের ক্ষেত্রে। তাই
খাওয়া গ্রহান্তরের বুদ্ধিমান প্রাণিরা এত ছােট হতে পারে না যে, তাদের
-দাওয়াতেই
সময় চলে যাবে।
এই কারণে শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটা খুব
গুরুত্বপূর্ণ। তাই উষ্ণ রক্তের জীবরা ঠাণ্ডা রক্তের জীবদের চেয়ে
জীবদের অনেক বেশি সক্রিয় ও সক্ষম। সরীসৃপদের মতাে ঠাণ্ডা রক্তের
শরীরের তাপমাত্রা
পরিবেশের সঙ্গে বাড়ে-কমে; তাই
তারা গরম আবহাওয়ায়
চনমন করে আর ঠাণ্ডায় নিস্তেজ হয়ে
পড়ে। তাই বিবর্তনের পরের দিকে এসেছে উষ্ণ রক্তের জীব,
যাদের দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা একই রকম থাকে। ফলে,
বুদ্ধিমান প্রাণিরা হবে এদের মতােই; তা না হলে ঠাণ্ডা-গরমে বুদ্ধির
তেজও কমবে-বাড়বে।
গ্রহান্তরের বুদ্ধিমানরা আকৃতিতে কত বিশাল হতে পারে তাও
ঠিক করে দেয় প্রকৃতির আর-এক নিয়ম। দেখা গেছে, দৈহিক শক্তি
নির্ভর করে পেশির প্রস্থচ্ছেদের উপর। যদি কোনও প্রাণির আকৃতি
কোনওভাবে দ্বিগুণ বাড়ানাে যায়, তা হলে তার পেশিশক্তি বেড়ে
যাবে চার গুণ, কারণ শক্তির বৃদ্ধি আকৃতির বর্গের সঙ্গে
সমানুপাতিক। এটুকু জানলে মনে হতে পারে যে আকৃতি বাড়লে
তাে শক্তিও বেড়ে যাবে! কিন্তু এর সঙ্গে আর একটা নিয়মও মাথায়
রাখতে হবে। তা হলাে, প্রাণির আকৃতি তার ওজনের ঘনফলের
সঙ্গে সমানুপাতিক। অর্থাৎ, কারও আকৃতি দ্বিগুণ হয়ে উঠলে তার
ওজন বেড়ে যাবে আট গুণ। এই দুটো নিয়ম মিলিয়ে অঙ্ক করলে
দেখা যাবে, কারও আকৃতি দ্বিগুণ বাড়লে তার শক্তি ও ওজনের
অনুপাত আগের চেয়ে অর্ধেক হয়ে যাবে। অর্থাৎ আকৃতি বাড়ারপরিণতি হচ্ছে দৈহিক শক্তি বা কাজের ক্ষমতার অপচয়। নাসার
বিজ্ঞানীরা অনেক হিসেব-নিকেশ করে আভাস দিয়েছেন যে, এই
অজানা জীবদের ওজনের সীমা ১০ পাউন্ড থেকে ১০ টনের মধ্যেই
থাকবে, তার বাইরে নয়।
তবে হ্যা, ওজন বেশি হলে পানির তলায় ঘােরাঘুরি করার
অনেক সুবিধে। কারণ, আর্কিমিডিসের তত্ত্ব অনুযায়ী, আকৃতি যত
বিশাল হবে, পানির ঊর্ধ্বমূখী ঘাত বা পুবতাও তত বেশি জায়গা
জুড়ে কাজ করবে। তা হলে কি গ্রহান্তরের বুদ্ধিমানরা দৈত্যাকার
জলজ প্রাণি হতে পারে?, তার বিপক্ষেও যুক্তি অনেক সহজ।
জলচর জীবদের জীবনে তাড়াহুড়াে ব্যাপারটা অনেক কম,
আত্মরক্ষার জন্য সংগ্রাম অনেক কম, চলাফেরার গতিও অনেক
সরল। তা ছাড়া পানির নিচে তাপমাত্রার পরিবর্তনও হয় খুব ধীরে।
আর আবহাওয়াও সব সময় প্রায় একই। তাই এক কথায় বলা যায়,
পানির নিচে জীবনরক্ষার জন্য লড়াই করতে হয় অনেক কম। কিন্তু
প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করতে-করতেই প্রজাতিদের বুদ্ধি
বাড়ে। বিবর্তনের প্রক্রিয়াতেও দেখা গেছে, উন্নততর
স্থলচর
প্রজাতিরা প্রতিকূলতার
সঙ্গে সংগ্রাম করেছে বেশি। সে তুলনায়
সামুদ্রিক প্রজাতিদের মধ্যে বুদ্ধির বিবর্তন ঘটেছে অনেক ধীরে। এ
প্রসঙ্গে অনেকে ডলফিনের নাম করে প্রশ্ন তুলেছেন যে, এরা কী
করে এত বুদ্ধিমান হল? তাতে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এ তথ্যটা
অনেকেরই অজানা যে, ডলফিনের পূর্বপুরুষ
সামুদ্রিক প্রাণি নয়,
তারা উন্নততর স্থলচর স্তন্যপায়ীর বংশধর, বিবর্তনের শেষের দিকে
তারা জলে আশ্রয় নিয়েছিল।
আজ এদের ডানা থাকতে পারে কি? না, তাও সম্ভব নয়। কারণ,
পর্যন্ত পৃথিবীতে যেসব প্রাণিদের উড়তে দেখা গেছে, তাদের
ওজন খুব বেশি হলে ২০ পাউন্ড। তার উপর, উড়তে গেলে ধড়ের
চেয়ে মুণ্ডুটাকে
হতে হবে অনেক বেশি হালকা। এইটুকু মুণ্ডুতে
মাথার অসংখ্য ঘিলু জটিল আর গুচ্ছ ঠিক কতটুকু-ঠিক থাকবে কাজ যাতে বুদ্ধিমান জন্য
হওয়ার
করবে? তবে হ্যা, তাদের
বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব যদি খুব বেশি গ্রহের
হয় তাহলে ভারী মাথাদেরও উড়বার হয় বা সুবিধে গ্রহটার হতেও মাধ্যাকর্ষণ পারে খুব। কিন্তু এক্ষেত্রে আবার ব্যাপারটা হয়ে যাচ্ছে সােনার পাথরবাটির মতাে।
কারণ, মাধ্যাকর্ষণের টান কম হলে ঘন বায়ুমণ্ডল থাকা খুব
অস্বাভাবিক, তেমনই ঘন বায়ুমণ্ডল থাকা মানে মাধ্যাকর্ষণের টানও
খুব বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। তাই গ্রহান্তরের উড়ন্ত বুদ্ধিমানের
কল্পনা বাস্তবায়িত হওয়া খুব মুশকিল।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, পায়ে চাকা লাগনাে থাকলে চলাফেরা
বা দৌড়ানাের খুব সুবিধে হতাে। তাই গ্রহান্তরের কিছু রােবটজাতীয়
জীবকে চাকার সাহায্যে দৌড়াতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সত্যি কথা
বলতে কি, খুব মসৃণ রাস্তা বা রেললাইনের উপর চাকার যে সুবিধে
তা এবড়াে খেবড়াে জায়গায় পাওয়া যাবে না। তা যদি হতাে তা।
হলে বিবর্তনের দয়ায় পৃথিবীতে কারও না কারও শরীরে একটুআধটু
চাকা গজাবার লক্ষণ দেখা দিতই। কিন্তু চাকা না হােক, দুটোর
বেশি পা থাকলে সুবিধে হতাে কি? না, মাথাটাকে
উপরে তুলে
শরীরটাকে খাড়া করে রাখার জন্য দু’টো পা-ই সবচেয়ে আদর্শ।
কারণ এর বেশি পা হলে জন্তুদের মতাে দেহটাকে আনুভূমিক
রাখতে হবে পায়ের ওপর ভর দিয়ে। এতে জন্তুদের মতাে দৌড়াবার
জোর হবে বটে, কিন্তু তা হলে পেশি ও স্নায়ুর মধ্যে সামঞ্জস্য
করারজন্য মস্তিষ্কের স্নায়ুকেন্দ্রের কোষগুলােকে নতুনভাবে বিন্যস্ত করে
অনেক বেশি শক্তিক্ষয় করতে হবে। ফলে মস্তিষ্কের এই অঞ্চলটুকুর
ক্ষমতা বাড়ানাের জন্য অন্য অঞ্চলগুলাে হয়ে পড়বে দুর্বল। আবার,
অন্য দিক দিয়ে বলতে গেলে, পৃথিবীতে ছ’টা পা বা তার বেশি
পাঅলা পােকামাকড়ের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু কেউই বুদ্ধিমান নয়।
চার পাখনাঅলা আদিম মাছ ‘ ইউসথেনােপ্টেরন থেকে যেসব চার
পাঅলা জন্তু বিবর্তিত হয়েছে, তাদের বুদ্ধি বেড়েছে বেশি কিন্তু
পায়ের সংখ্যা বাড়েনি। মানুষও এই বংশধর উত্তরপুরুষ তবে তার
দুটো পা বদলে দিয়ে দুটো হাত হয়েছে বুদ্ধিপ্রয়ােগের জন্য।
গ্রহান্তরের বুদ্ধিমানদেরও এর চেয়ে বেশি হাত-পা থাকবে না। চোখ
সম্পর্কেও এই কথা বলা যায়। সারা গায়ে গাদা গাদা চোখ থাকা।
মানে মস্তিষ্কেও গাদা গাদা দৃষ্টিকেন্দ্র থাকা বা একটা দৃষ্টিকেন্দ্রের
মধ্যে জটিলতা বাড়ানাে। আমরা যখন দেখি, তখন একটা
জিনিসেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, দুটো জিনিসে একসঙ্গে দৃষ্টি একাগ্র করা
যায় না। বস্তু থেকে আলােকরশ্মি দুটো চোখে পড়লেও চোখের
লেন্স তাকে মস্তিষ্কের ভিতর একই বিন্দুতে মিলিত করে। অনেক
চোখ থাকলে সব গুলিয়ে যাবে। সৃষ্টির আদি থেকে আজ পর্যন্ত যত
প্রাণির চোখ ফুটেছে, তাদের দুটো চোখের জায়গা থেকেছে একদম
কাছাকাছি, এমনকি কিছু কিছু কীটপতঙ্গের পুঞ্জাক্ষিও তৈরি হয়েছে।
ঘেঁষাঘেঁষি করে। একটা বড় চোখ বা অনেক চোখ থাকলে
জীবনসংগ্রামে যদি সামান্যও সুবিধে হতাে তাহলে প্রকৃতি একবার
অন্তত কোনও জীবের ক্ষেত্রে তা পরীক্ষা করে দেখত। তাই
গ্রহান্তরের বুদ্ধিমানদের সামনে-পিছনে চোখ থাকতে পারে না, এটা
নিশ্চিত। শুধু চোখ নয়, কান ও নাকের অবস্থানও হবে মস্তিষ্কের
একদম কাছে। এই ইন্দ্রিয়গুলাে যদি মস্তিষ্ক থেকে দূরে থাকে,
তাহলে সংবেদন অনুভূত হতে সময় লাগবে বেশি, ফলে প্রাণিরা
চটপটে হবে না, প্রতিক্রিয়া হবে দেরিতে। তাই গ্রহান্তরের কোনও
বুদ্ধিমানের মস্তিষ্ক যদি থাকে পেটের কাছে তাহলে ওই
ইন্দ্রিয়গুলােও থাকবে তার কাছাকাছি। কিন্তু সে গুড়ে বালি।
কারণ, সবচেয়ে দরকারি নিয়ম হচ্ছে-মস্তিষ্ককে থাকতে হবে এমন
জায়গায় যাতে তা মাটি থেকে সবচেয়ে উঁচুতে উঠতে পারে।রেডিওর ‘ এরিয়াল ’ বা টিভির ‘ অ্যান্টেনা যেমন উঁচু করে রাখতে হয়
ভালােভাবে সঙ্কেত পাওয়ার জন্য, তেমনই চোখ-কান-নাকও
যথাসম্ভব উঁচুতে রাখতে হবে পরিবেশ থেকে আলাে-শব্দ-গন্ধের
সঙ্কেত গ্রহণ করার জন্য। তবে, এ ধরনের ভুল অনেক কম হবে,
যদি মনে করা যায় যে, তাদের বিবর্তন হয়েছে সেই গ্রহের পরিবেশ
অনুযায়ী। সে পরিবেশ যদি একদম পৃথিবীর মতাে হয় তা হলে
বিবর্তনও হবে পৃথিবীর মতাে। কিন্তু সে গ্রহের পরিবেশ যদি
পৃথিবীর চেয়ে একদম আলাদা হয় তাহলে তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে
নতুন রকম চেহারা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হতেই পারে। কিন্তু সেই শরীর
নিয়ে পৃথিবীতে এসে লড়াই করা কখনওই সম্ভব নয়, পৃথিবীর
পরিবেশই তাদের ধ্বংস করে দেবে। এমনকি, কৃত্রিম স্পেস-সুট
পরেও তারা এখানে আসার ঝুঁকি নেবে না, কৌতূহল মেটানাের
জন্যে তারা নিদেনপক্ষে স্বয়ংক্রিয় মহাকাশযান পাঠাতে পারে।
তাই এই পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে হাত মেলানাে বা
হাতাহাতি করা কোনওদিনই হয়তাে সম্ভব হবে না।
আসছে SUPER FAST কোয়ান্টাম কম্পিউটার…
আসছে Super fast কোয়ান্টাম কম্পিউটার! কি শিরোনাম পড়ে কি চমকে গেল? মোটেও চমকাবেন না। কারণ আর হয়তো বছর দশকের মধ্যেই...