আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আমিও আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছি। আজকের বিষয়ঃ গ্রামে অনলাইন ব্যবসা করা যায় কিভাবে? । তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
গ্রামে অনলাইন ব্যবসা করা যায় কিভাবে?
বর্তমান যুগ হলো অনলাইনের যুগ। অনলাইনের মাধ্যমে আমরা ঘরে বসেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবসা করতে পারি। এখন আর আমাদের ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয় না। অনলাইনের মাধ্যমেই পণ্য দেখানো, পণ্য বিক্রি এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য সরবরাহ করা যায়। এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে শুধুমাত্র একটি ইন্টারনেট কানেকশন এবং একটি এন্ড্রয়েড ফোন।
এখন আমরা কম খরচে এবং কম টাকা ইনভেস্ট করেই গ্রামে বসে অনলাইনে ব্যবসা চালু করতে পারি। নারী-পুরুষ উভয়েই অনলাইনে ব্যবসা করতে পারে। বর্তমানে গ্রামে বসে অনলাইনে ব্যবসা করে অনেক নারী এবং পুরুষ স্বাবলম্বী হয়েছে। গ্রাম থেকেই অনলাইনের মাধ্যমে করা যায় এরকম কয়েকটি ব্যবসা হল-
ওয়েবসাইট তৈরী এবং ওয়েবসাইট বিক্রি
বর্তমানে শহর-গ্রাম সব জায়গায়ই ইন্টারনেট ব্যবস্থা খুবই সহজলভ্য হয়েছে। ইন্টারনেটে কাজ করার জন্য এখন জায়গার কোন ভেদাভেদ নেই। ইন্টারনেটের কল্যাণে আপনি ঘরে বসেই সুন্দর একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন এবং ওয়েবসাইটটি কাস্টমাইজ করতে পারেন। আপনি আপনার ওয়েবসাইটটি সুন্দর করে ডোমেইন এবং হোস্টিং দিয়ে সাজিয়ে, ওয়েবসাইটে সুন্দর কিছু পোস্ট শেয়ার করে ওয়েবসাইটটি ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন। অনলাইনে অনেক ক্রেতা রয়েছে যারা রেডিমেড ওয়েবসাইট কিনতে আগ্রহী। আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটটি ভালো করে সাজাতে পারেন তাহলে আপনি আপনার ওয়েবসাইটটি বিক্রি করে অনলাইনের মাধ্যমেই টাকা উপার্জন করতে পারবেন এবং আপনি চাইলে ব্যবসাটি আরো বৃদ্ধি ও করতে পারেন।
ফাস্টফুড / গ্রামে অনলাইন ব্যবসা
শহরে আমরা অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই খাবার অর্ডার দিতে পারি। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মেন্যু দেখে যে খাবারটি আমাদের পছন্দ সে খাবার অর্ডার দিলেই আপনার বাসায় হাজির হয়ে যাবে পছন্দনীয় খাবার। বর্তমানে অনলাইনে খাবারের ব্যবসা ঠিকভাবে প্রচলিত এবং এজন্য আপনাকে আর কষ্ট করে বাহিরে যেতে হয়না। কিন্তু গ্রামে এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। আপনি চাইলে গ্রামেও অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। আপনি বিভিন্ন রকমের খাবার বানিয়ে ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে প্রচার করতে পারেন। ক্রেতারা সেখান থেকে পছন্দের খাবারটি বেছে নিয়ে অনলাইনে অর্ডার করলে আপনি তাদের ঘরের দোরগোড়ায় খাবার পৌঁছে দিতে পারবেন। অনলাইন এর মাধ্যমে খাবারের এই ব্যবসাটি বর্তমানে বিশ্বের জনপ্রিয়।
হস্তশিল্প / গ্রামে অনলাইন ব্যবসা
গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ধরনের হাতের কাছে পারদর্শী হয়ে থাকে। একেক অঞ্চলের হস্তশিল্পের কাজ একেক অঞ্চলে প্রসিদ্ধ হয়ে থাকে। গ্রামীণ নারীদের সুন্দর করে নকশী কাঁথা সেলাই করে, বাঁশবেত দিয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস বানায়, সুন্দর শীতল পাটি তৈরি করে, বিভিন্ন রকম শোপিজ বানায় যেগুলো সারা দেশজুড়েই অনেক বিখ্যাত। অনলাইনে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গ্রামের নারীরা এসব পণ্য সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারে । এতে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ তাদের পছন্দনীয় পণ্যটি অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই পেয়ে যাবে। বর্তমানে এই ব্যবসাটিও ব্যাপকভাবে প্রচলিত হচ্ছে।
অনলাইন ব্যবসা কেন করবেন?
সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রার মান ক্রমেই বদলাচ্ছে। সেইসাথে প্রচলিত ব্যবসার ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে মানুষ এখন অনলাইন ব্যবসার দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। সারা বিশ্বেই এখন ইন্টারনেট ব্যবস্থা মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে তাই এখন আর ব্যবসা করার জন্য দেশ বিদেশে ভ্রমণ করতে হয় না। গ্রামে বসেই আপনি আপনার দেশের ভেতরে বা চাইলে দেশের বাইরেও ব্যবসা করতে পারেন।
যেহেতু অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য বাড়তি কোনো ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন হয় না, এবং ঘরে বসে আরামে ব্যবসাটি করা যায় তাই মানুষ অনলাইন ব্যবসার দিকে বর্তমানে বেশি নজর দিচ্ছে।
অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য আপনার ২৪ ঘন্টা দোকান খুলে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে না, ফলে আপনার শারীরিক কোন কাজ করতে হয় না। আবার এখানে ব্যবসা করার জন্য আপনার বাড়তি কোন ইনভেস্টমেন্ট এরও দরকার নেই। তাই আপনার যদি মনোবল থাকে এবং ইচ্ছাশক্তি থাকে তাহলে আপনি ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে সফল ব্যবসায়ী হতে পারবেন।
অফলাইন থেকে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করতে যে যে বিষয়গুলো জানতে হবে
বর্তমান সময়ে অনলাইন এবং অফলাইন এই দুই ভাবেই পুণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায়। তবে করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে অফলাইন ব্যবসা প্রায় বন্ধের দিকে। আর তাই বুদ্ধিমান ব্যবসায়ীরা অনলাইন ব্যবসার দিকে জোর দিয়েছেন। অল্প কিছু সমস্যা বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করা শর্তেও সাধারণ ইউজাররাও অনলাইন থেকে পণ্য কেনাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
অনলাইনে কারা ব্যবসা করতেছেন?
যারা আইটি সেক্টরের সাথে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তারা প্রায় সকলেই অনলাইনে ব্যবসা করতেছেন।ওয়েবসাইট বানিয়ে যেমন সেখানে পণ্যের প্রচারণা চালাচ্ছেন ঠিক একইভাবে ইউটিউব ফেসবুকেও সেগুলোর বিজ্ঞাপন দিয়ে মার্কেটিং করতেছেন।
অনলাইন ব্যবসায় পিছিয়ে পড়তেছেন কারা?
বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে যারা আগের মত করেই অনলাইনে ব্যবসার প্রচারণা চালাচ্ছেন মূলত তারাই অনলাইন ব্যবসায় পিছিয়ে পড়তেছেন। অনলাইন ব্যাবসায় পিছিয়ে পড়ার কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হলো।
- নতুন প্লাটফর্মে ইনভেস্ট না করা।
- আইটি দক্ষতার অভাব।
- নিজের ওয়েবসাইটে কোন দক্ষ ব্যক্তিকে না রাখা।
এছাড়াও আরো অনেক কারনে অনলাইন ব্যবসায় অনেকেই পিছিয়ে পড়তেছেন। বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে যাদের এই বিষয়ে প্রচুর অভিজ্ঞতা নেই তাদের অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই কোন দক্ষ ব্যক্তিকে সাথে নিতে হবে।
অনলাইনে যে সব মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা চালানো যায়।
ফেসবুক পেজ
অনলাইনে ব্যবসা চালানোর সবচেয়ে প্রথম এবং সহজ ধাপ হচ্ছে একটি সাজানো গোছানো ফেসবুক পেজ খোলা। এবং সেই ফেসবুক পেজে নিয়মিত আপনার পণ্য এবং কোম্পানি সম্বন্ধে আপডেট তথ্য পোস্ট করার। এবং কেউ যদি সেই পেজে আপনাদেরকে মেসেজ করে সাথে সাথে সেই মেসেজের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করা। এবং মাঝেমধ্যে আপনার ফেসবুক পেজটি বুস্ট করা।
ইউটিউব চ্যানেল
আপনি যদি আপনার কোম্পানির নাম দিয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেন তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর দুনিয়ায় আপনি একধাপ গিয়ে থাকলেন। কারণ বর্তমান যুগের মানুষেরা কোন কিছু সমন্ধে ভিডিওতে ভালোভাবে দেখতে পছন্দ করেন এবং এটা ভালো বোঝেন। আপনি যদি নিয়মিত ইউটিউবে আপনার প্রোডাক্ট গুলো রিভিউ দেন তাহলে সেখান থেকেই প্রচুর পরিমাণে সেল পাবেন।
ওয়েবসাইট
যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে আরো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আলাদা করে এই ওয়েবসাইট। বর্তমান যুগে যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের একটি ওয়েবসাইট থাকে তাহলে আপনাদের কোম্পানিটি সবার কাছে আলাদা বলে মনে হবে। এবং ক্রেতারা ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে অর্ডার দেওয়াতে উৎসাহিত হবেন। এবং বর্তমানে করোনার এই সময় ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এটি অনেক কার্যকর।
এসইও
আপনি যদি আপনার পুণ্য বা সেবাটি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করেন তাহলে ক্রেতারা সহজেই ইন্টারনেটে আপনাদেরকে খুঁজে পাবেন। এবং যেসব ক্রেতারা আপনার পুণ্যটিতে আগ্রহী তারাই আপনার সাইটটি ভিজিট করবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য যা যা জানতে হবে।
- ফেসবুক মার্কেটিং
- ইউটিউব মার্কেটিং
- এসইও
- ওয়ার্ডপ্রেস
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ওয়েব ডিজাইন
- কন্টেন্ট রাইটিং ইত্যাদি।
এইসব কিছু চালাতে হলে অবশ্যই আপনাকে একজন গ্রাফিক ডিজাইনার, ওয়েব ডিজাইনার,কন্টেন্ট রাইটার এবং আইটি এক্সপার্ট নিয়োগ দিতে হবে। একটি ব্যবসার শুরুর জন্য এই ধাপগুলো অনেক ব্যয়বহুল তাই এই ধাপের গুরুত্ব গুলো জানা সত্ত্বেও বেশিরভাগই পিছিয়ে পড়েন।
কম খরচে যেভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করবেন?
দুইটি উপায়ে আপনি কম খরচেই ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারবেন।
১. ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সিকে চুক্তিতে দিয়ে দেওয়া
শুরুতে আপনি চার পাঁচ জন স্টাফ কে নিয়োগ না দিয়ে একটা ভালো এজেন্সিকে চুক্তিতে রেখে দিতে পারেন। তারা কম খরচেই আপনার সকল কাজ করে দিবে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যে এজেন্সিকে আপনি রেখেছেন তারা কতটা বিশ্বাসত্ব এবং ওই কাজে কতটা দক্ষ। কারণ অনলাইনে এখন এইসব এজেন্সির অভাব নেই।
২. নিজে শিখে নিয়ে মার্কেটিং করা।
এটি একটি অনেক বড় ধাপ। কারণ এতগুলো বিষয় একসাথে শিখা এবং সেগুলো করা পাশাপাশি ব্যবসা ও কন্টিনিউ করা একটি বিশাল ব্যাপার। তবে একবার যদি আপনি এগুলো শিখে যেতে পারেন তাহলে আপনার অনেক সুবিধা হবে। ব্যবসার শুরুতে আপনার কাউকে টাকা দিতে হবে না। এবং পরবর্তীতে ব্যবসা বড় হলে যখন আপনি স্টাফদের রাখবেন তখন তাদের কাজ কেউ ভালোভাবে মনিটরিং করতে পারবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং এ সফল হতে হলে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
ধৈর্য একজন ডিজিটাল হওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধৈর্যশীল হতে হবে। আপনি অনেক টাকা খরচ করে একটি ক্যাম্পেইন তৈরি করলেন এবং সেখান থেকে আপনার লাভ আসলো না। এমন অবস্থায় ধৈর্য হারালে হবে না। আপনাকে আপনার আইডিয়া চেঞ্জ করতে হবে এবং পুনরায় আবার চেষ্টা করতে হবে। এইভাবে চলতে চলতে একসময় সফলতা পাবেন।
শিখার মানসিকতা আপনি নিজেই ডিজিটাল মার্কেটিং করুন বা কোন স্টাফকে বিয়ে করান আপনাকে সব সময় শিখে যেতে হবে। এতে আপনি স্টাফদের কাজকে ভালোভাবে মনেটরিং করতে পারবেন এবং নিজের জ্ঞানকে বৃদ্ধি করতে পারবেন।
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।