গ্রামে লাভজনক ব্যবসা কোনটি? ৫টি ব্যবসার আইডিয়া দেওয়া হল – আমরা সবাই চাই ভালো একটা চাকরি করতে। কিন্তু আমরা তা পাই না। তখন আমরা কোনো একেটা কাজের জন্য শহরে চলে যাই।
কিন্তু আমরা শহরে না গিয়ে যদি গ্রামেই ব্যবসা করি তাহলে আমাদের লাভ হবে বেশি। কারণ গ্রামে এখনো অনেক ব্যবসা রয়েছে যা কেউ শুরুই করেনি। তাই আমি আপনাদের কাছে শেয়ার করবো কম ইনভেস্টমেন্টে লাভজনক কয়েকটি ব্যবসার উপায়।
(১) পশু ফার্মেসি
এটা গতাণুগতিক ফার্মেসির কথা বলছি না। বলছি পশু ফার্মেসির কথা। কারণ যদি লক্ষ করেন দেখতে পাবেন, এমনি ঔষুধের দোকনের অভাব নেই, কিন্তু পশু ফামের্সি নেই। যদিও বা থাকে তবে তা তিন চার গ্রাম মিলে একটা থাকে।
সেখানে আপনি মাত্র তিন মাসের ব্যাসিক কোর্স করে পশু ফার্মেসির দোকান দিতে পারেন। ছোট একটা ঘর ভাড়া নিয়ে ফার্মেসি দিন। গ্রামে একটা দোকান ভাড়া নিতে খুব একটা খরচ হয় না। পশুর ঔষুধ কিনতেও খুব টাকা খরচ হয় না।
গ্রামে-গঞ্জে প্রায় সব বাড়িতেই পশু পালন করা হয়। অনেক পশু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারাও যায়। তাই আপনি যদি সেখানে একটা পশু ফার্মেসির দোকন দেন, তাহলে সব মানুষ প্রতিষেধকের জন্য আপনার কাছেই আসবে।
আপনার ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষে আপনি দোকানে একটি সাইন বোর্ড লাগাবেন। এতে একটি সুবিধা হবে। আপনি যদি কোনো কারণে দোকানে নাও আসেন, তাহলে লোকজন আপনাকে কল করবে। এতে আপনি দোকানে না থেকেও কিন্তু ভালো ব্যবসা করতে পারবেন।
আপনি হাস-মুরগি, গরু-ছাগল, মাছ ইত্যাদি পশুর ঔষুধ রাখবেন। কারণ গ্রাম্য অঞ্চলে প্রায় সব বাড়িতেই এই পশু পালন করা হয়।
আপনি যদি এই ব্যবসায় ৩ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেন, তাহলে যথেষ্ট ভালো ভাবে করতে পারবেন।
১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে একটা মটর সাইকেল কিনলেন এবং বাকি টাকা দিয়ে ঔষুধ স্টক করলেন।
যদি আপনার এতো টাকা বাজেট না থাকে তবে আপনি সাইকেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনি একটু দূরে গিয়ে পশুর চিকিৎসা করতে পারবেন।
(২) ফসল স্টক করা
বাংলাদেশ কৃষি প্রধাণ দেশ। এই দেশে কম-বেশি সব ধরনের ফসল চাষ করা হয়। আপনি চাইলে এই ফসল স্টক করে রাখতে পারেন।
অনেক ফসল আছে দেখবেন, শুরুতে কম দাম থাকলেও পরে কিন্তু তার দাম বাড়ে। আপনি সেগুলো স্টক করে রাখবেন। যখন দাম বাড়বে তখন সেগুলো মার্কেটে ছেড়ে দিবেন। এতে আপনি অনেক লাভ করতে পারবেন।
আপনি বিভিন্ন মৌসুমের ফসল স্টক করতে পারেন। ধান, গম, ভুট্রা,সরিষা ইত্যাদি। এই ফসল যখন তোলা হয় তখন এর দাম অনেক কম থাকে। আপনি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে এই ফসল কিনে রাখবেন। পরে যখন দাম বাড়বে আপনি বিক্রি করে দিবেন।
এই ব্যবসা করতে আপনার ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। আপনাকে মেধা দিয়ে বুঝতে হবে কখন কোন ফসল স্টক করবেন আর কখন সেটা মার্কেটে ছেড়ে দিবেন।
(৩) ইটের ব্যবসা
এমনিতে ইটের ব্যবসা করা অনেক লাভজনক। আর আপনি যদি একটু মেধা খাটিয়ে ব্যবসা করেন তাহলে আপনি এই ব্যবসায় অনেক লাভ করতে পারবেনব্।
আপনি একটু লক্ষ করলে দেখবেন, ইট কম্পানির মালিকেরা যখন টাকা জমায় বড় কোনো কাজের জন্য, তখন তারা ইট বিক্রি করে খুব কম দামে। প্রতি হাজার ইটে দেখবেন ১ থেকে ২ হাজার টাকা কম নেয়। আপনি তখন ২ থেকে ৩ লাখ ইট কিনে রাখলেন। আপনি সেগুলো যথারীতি দামে বিক্রি করলেন।
একবার হিসাব করে দেখনে প্রতি হাজার ইটে যদি আপনি ২ হাজার টাকা কমে ইট কিনেন, আর আপনি যদি সেগুলো ২ থেকে ৩ লাখ ইট বিক্রি করতে পারেন তাহলে আপনি কত লাভ করতে পারবেন?
(৪) ফার্ণিচার
আপনি ভাবতে পারেন যে, ফার্ণিচারের ব্যবসা করে কিভাবে লাভ করা যায়। একবার ভেবে দেখুন যারা সাধারণত ফার্ণিচারের কাজ করে থাকে, তারা বেশির ভাগই অশিক্ষিত। কিন্তু আপনি শিক্ষিত। আপনার মেধা, জ্ঞান, পরিকল্পনা তাদের থেকেও ভালো। আর আপনি স্মার্টও বটে। আপনার কথা বার্তা তাদের থেকে আলাদা। কাজেই লোকজন আপনার কাছেই বেশি আসবে।
প্রথমে আপনি একটি পজিশন মতো দোকান নির্বাচন করে ভাড়া নিন। ভালো করে ডেকোরেশন করুন।
আপনি তো আর কাঠ মিস্ত্রির কাজ করতে পারেন না। লক্ষ করলে দেখবেন অনেক কাঠ মিস্ত্রি আছেন, যারা মাসিক বেতনে অন্যের দোকানে কাজ করে থাকেন। আপনি তাদেরকে হায়ার করুন।
রইলো গাছের ব্যাপার। গ্রাম্য অঞ্চলে গাছের অভাব হয় না। নানান ধরণের প্রচুর পরিমানে গাছ পাওয়া যায়। আপনি লোকদের কাছ থেকে সেগুলো কিনে নিবেন।
একই সাথে আপনি যদি একটি ছোট ছোমেল(গাছ চেরার যন্ত্র) রাখেন তাহলে আরো ভালো। আপনার গাছ চেরার জন্য কারো কাছে যেতে হবে না। উল্টো আরো অন্য লোক আপনার কাছে আসবে গাছ চেরাই করতে। এতে আপনি ২ ভাবে ব্যবসা করতে পারবেন।
আপনি বিভিন্ন ধরণের আসবাব পত্র তৈরি করবেন। খাট, চেয়ার, টেবিল, আলমারী ইত্যাদি। আপনি ভালো কাঠ দিয়ে, আর্কষনীয় ভাবে এগুলো তৈরি করবেন। যাতে লোকজন দেখলেই ক্রয় করতে আগ্রহ পায়।
যে কাঠ গুলো সারি (পাকা গাছ, গাছ কাটার উপযুক্ত সময়) হয়েছে সেই গাছ গুলো নির্বাচন করবেন। যেমনঃ আকাশ মনি, মেহগনি, সেগুন ইত্যাদি।
এই কাজ করার জন্য আপনার বাজেট আড়াই থেকে ৩ লক্ষ টাকা হলে আপনি ভালো ভাবে শুরু করতে পারবেন।
(৫) জমি কেনা-বেচা
আপনার কাছে যদি অনেক টাকা পয়সা থাকে, তবে এই কাজটি আপনি করতে পারেন। এটা অনেক লাভজনক ব্যবসা।
আপনি আগে দেখবেন আপনি কোন জায়গায়, কেমন জমি কিনছেন। আপনি ভালো জমি এবং ভালো অবস্থানে দেখে জমি কিনবেন। রাস্তার পাশে হলে সেটা অবশ্যই কিনবেন। কারণ অধিকাংশ মানুষই জমি কিনতে চায় রাস্তার পাশে। এতে যোগাযোগ এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হয়।
আপনি বিভিন্ন খেত, পুকুর, অনাবাদি জমি করবেন। কিছুদিন অপেক্ষা করবেন দেখবেন অনেক লোক জমি কেনার জন্য ঘুরতেছে। আপনি তাদেরকে জমি বিক্রি করবেন। যেহেতু আপনি কয়েক বছর পর জমি বিক্রি করছেন, বছর বছর জমির দামও বাড়ছে, আর ভালো পজিশনে হওয়ায় তার আর কথাই নেই।
আপনি যদি পুকুর ক্রয় করেন তাহলে চেষ্টা করবেন রাস্তার পাশে ক্রয় করার জন্য। তারপর আপনি পুকুর ভরাট করে বাড়ি তৈরির উপযোক্ত করে তোলবেন। এতে আপনার জমির দাম কয়েক গুন বেড়ে যাবে।
আপনি যদি ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে পুকুর কিনেন, আর সেখানে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে পুকুর ভরাট করেন এবং একটা বাউন্ডারি করেন তাহলে দেখবেন, আপনি সেই জমি ১০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন।