একটি ছবি আপনাকে কতটা গভীরে নিয়ে যেতে পারে?
এই পোষ্টের ফিচার ইমেজটি (মূল ছবি) দেখার পর আপনাদের অনেকের মনেই অনেক নেতিবাচক ধারণা চলে আসতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছবিটির নেপথ্যের ঘটনা জানার পর হয়তো আপনার চোখে জলও চলে আসতে পারে। তাই বলছি, কোন কিছু দেখার সাথে সাথেই মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকি। আগে তার সাথে সম্পৃক্ত মূল ঘটনা জানতে চেষ্টা করি। চোখ দিয়ে নয়, অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে শিখি।
আসুন ছবির ঘটনাটি কি তা জেনে নেয়া যাক!
ঘটনাটি ইউরোপের একটি দেশের। সেখানে সায়মন নামের একজন বৃদ্ধলোককে তার কৃতকর্মের সাজা সরূপ অনাহারে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছিল এবং তাকে জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তার সাজাটা ছিল এমন যে, তার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে কিছু খেতে দেওয়া হবে না।
লোকটির একটি প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ছিল। যার নাম ছিল পেরো। আদালতে পেরো তার বাবা মারা যাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন তাকে জেলে দেখতে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইল। মানবিক কারনে আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করেছিল। তারপর প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় মেয়েটা তার বাবাকে দেখতে জেলখানায় যেতো। জেলে ঢোকার সময় সিকিউরিটি গার্ড নিয়মিত তার সব কিছু তল্লাশি করত। আর তাই মায়েটি খাওয়ার যোগ্য কোন কিছুই তার বাবার জন্য জেলে নিয়ে যেতে পারত না।
এদিকে মেয়েটি তার বাবার অনাহারে মরতে বসার দুর্দশা মোটেও সহ্য করতে পারছিল না। সে তার বাবার দিকে একজন স্নেহময়ী মায়ের নজরে তাকাত। আর তাই সে তার বাবাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একটি অভিনব পন্থা বের করলো। ঘটনার কিছুদিন পূর্বেই মেয়েটার একটি সন্তান হয়। স্বাভাবিক ভাবেই সে তার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াত। জেলখানায় গিয়ে সিকিউরিটির দৃষ্টির আড়ালে সে রোজ তার বাবাকে বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করলো।
আর এভাবে অনেকদিন পার হয়ে গেলেও লোকটা মারা গেল না। সিকিউরিটি গার্ডরা মেয়েটাকে সন্দেহ করলো এবং জেলখানায় তার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলো। এভাবেই একদিন বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় তারা মেয়েটাকে ধরে ফেলল।
মেয়েটির নামে তারা আদালতে মামলা ঠুকে দিল। কিন্তু, মেয়েটার নিঃস্বার্থ কার্যকলাপ এবং পিতৃভক্তি আদালতে বিচারকের মন জয় করে নিল। আর তাই আদালত পেরোকে এবং সাথে সাথে তার বাবাকেও মুক্তি দিয়ে দিল।
একটা মেয়ে কখনো সে হতে পারে মা, কখনো বোন, স্ত্রী বা বান্ধবী, তা সে একজন মানুষের জীবনে যে ভূমিকাই পালন করুক না কেন। সর্বদাই সে ভালোবাসা আর ত্যাগে পরিপূর্ণ!
উপরের চিত্রকর্মটি ইউরোপের সবথেকে দামী চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে একটি। পরবর্তিতে এটিকে ‘রোমান চ্যারিটি’ নাম করণ করা হয়।