চাঁদে জমি কেনার জন্য আবেদন এর উপায় | কতটুকু সত্য

তো আজকের পোস্টে আমরা একটা ভিন্ন রকমের টপিক নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। এ পোস্টে আমরা চাঁদে জমি কেনার জন্য আবেদন এর উপায় | এটা কতটুকু সত্য সে বিষয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। তো শুরু করা যাক।

চাঁদে জমি কেনা:

চাঁদে জমি কেনার জন্য আবেদন

চাঁদ। পৃথিবীতে মানুষের আসার শুরু থেকেই এই চাঁদের প্রতি খুবই আকৃষ্ট। চাঁদকে নিয়েই আমাদের কত জল্পনা কল্পনা। সেই আদিমকাল থেকে মানুষ চাঁদকে নিয়ে নানা ধরণের কল্প কাহিনী সৃষ্টি করে গিয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে হাজারো গল্প-কবিতা উপন্যাসসহ নানা সাহিত্যকর্ম। এরপর আমাদের মধ্যে ইচ্ছা হয়েছে আসলে চাঁদে গিয়ে দেখার যে ওখানে কি আছে। এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে মানুষের উড়াল দেওয়ার ইচ্ছা।

ঠিক মনে নেই কিন্তু কবে জানি একটা গল্প পড়েছিলাম যেখানে কিছু ব্যক্তি মোম পুড়িয়ে পাখা বানিয়ে উড়াল দিতে চেয়েছিল বা এরকম কিছু। ধীরে ধীরে আমরা প্রযুক্তিগত ভাবে শক্তিশালী হতে থাকি। আর একসময় আমরা আসলে উড়াল দেওয়ার বা চাঁদে যাওয়ার যানবাহন সৃষ্টি আরম্ভ করি।

রকেট সৃষ্টির পর থেকে আমরা চাঁদে নানা ধরণের প্রাণী পাঠানো শুরু করি। এরপর ২০ জুলায় ১৯৬৯ সালে প্রথম আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তার Apollo 11 এ ইতিহাসে প্রথম চাঁদে মানুষ পাঠান। চাঁদে পা রাখা প্রথম ব্যক্তির নাম নিল আর্মস্ট্রং। এরপর আরও অল্প কিছু চাঁদে অভিযান চলে।

এবং তারপর অনেক বছরই চাঁদে মানুষ পাঠানো বন্ধ থাকে। এখন আমরা স্পেস ট্রাভেলিং/ স্পেস ট্যুরিজম এসব বিষয় নিয়ে কাজ করি। মনে করা হয় ২০২৪ সালের মধ্যে স্পেস ট্যুরিজম শুরু করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ একজন সাধারণ ব্যক্তিও মহাকাশে যেতে পারবে যদি টাকা থাকে।

আর এখন চাঁদে জমি বিক্রি। আসলে চাঁদে জমি বিক্রি বিষয়টি মোটেও নতুন নয়। অনেক আগে থেকেই এসব কাজ চলে আসছে। তো চাঁদে কিভাবে জমি কিনবেন ও তা কতটা সত্য সে বিষয়ে কথা বলা যাক।

চাঁদে জমি কেনার জন্য আবেদন করার উপায়

চাঁদে জমি কেনার জন্য আবেদন

আসলে প্রথমে আমিও এ বিষয় নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করেছি। আর দুইটি সাইট খুঁজে পেয়েছি। একটির নাম লুনার রেজিস্ট্রি (Lunar Registry) ও অপরটির নাম লুনার এমব্যাসি (Lunar Embassy)।

নিচে কোনটায় কিভাবে কি করবে তা নিয়ে বলছি। উল্লেখ্য যে, আমি কখনো চাঁদে কোনো সম্পত্তি কিনি নাই তাই আমি শুধু অর্ডার সাবমিট পর্যন্ত বলতে পারব। তারপর কি হয় সে সম্পর্কে জানতে কিনে দেখুন বা তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

লুনার এমব্যাসি:

লুনার এমব্যাসি

প্রথমে গুগলে গিয়ে সার্চ করুন ‘Lunar Embassy’ বা ‘lunarembassy.com’। তারপর যে সাইটটি প্রথমে আসবে সেটিতে প্রবেশ করুন। তারপর একটু স্ক্রল করলেই বিভিন্ন প্রোডাক্ট দেখতে পাবেন। সেখানে ‘Buy Land On the Moon’ নামে একটি অপশন আছে সেটিতে ক্লিক করে দিন।

এরপর আবার স্ক্রল করুন আর নিচে দেখতে পাবেন সেখানে আপনাকে ‘Area’ সিলেক্ট করতে বলা হবে। সেখানে আপনি ১ একর, ৫ একর, ৮ একর, ১০ একর, ১৫ একর ও ২০ একরের মধ্যে একটি নির্বাচন করতে হবে। আপনি ১ একর কিনতে পারবেন ৩৫ ডলার দিয়ে আর আপনার ২০ একর কিনতে খরচ লাগবে ৬০৫ ডলার।

এরপর নাম সিলেক্ট করতে বলবে ও এর জন্য অতিরিক্ত ২.৫ ডলারের মতো খরচ পড়বে। এরপর Quantity বা কয়টা কিনবে তা সিলেক্ট করুন ও Add to cart এ ক্লিক দিন। তারপর আপনার সামনে View Cart এর একটি অপশন আসবে। এরপর আপনার প্রথম নাম ও শেষ নাম দিন।

এরপর আপনার দেশ, এড্রেস, শহর ও পোস্টাল কোড দিন। এরপর আপনার ফোন নাম্বার ও ইলেইল এড্রেস দিন। পেমেন্ট করার জন্য আপনি ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড, পেপাল ও ভেনোমো ব্যবহার করতে পারবেন। এরপর কয়েকদিনের মধ্যে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাজগপত্র ও দলিলপত্র পেয়ে যাবেন।

উল্লেখ্য যে ইন্টারনেশনাল অর্ডারসমূহতে অর্থাৎ আমেরিকার বাইরের অর্ডারসমূহে সর্বোচ্চ ১২৫ ডলার পর্যন্ত লাগতে পারে। আপনি চাঁদে জমি কেনা ছাড়াও মঙ্গল গ্রহ, বুধ গ্রহ, শুক্র গ্রহ ও পৃথিবী ও সূর্য ব্যতীত সৌরমঙ্গলের যেকোনো গ্রহে জমি কিনতে পারবেন।

এছাড়া আপনি প্লুটো গ্রহ সম্পূর্ণ কিনে নিতে পারবেন আড়াই লাখ ডলারে। এছাড়াও আপনি পাসপোর্ট ও জাতীয়তা কিনতে পারবেন যার মূল্য ২৫ ডলার। প্রতি ২৫ বছর পর পর এই পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে।

লুনার রেজিস্ট্রি:

প্রথমে গুগলে গিয়ে সার্চ করুন ‘The Lunar Registry’ বা ‘lunarregistry.com’। এবং প্রথম সাইটটিতে প্রবেশ করুন। সেখানে ‘BUY LAND ON THE MOON’ এ ক্লিক করুন। আর সেখান থেকে আপনি চাঁদের কোন এলাকায় কিনতে চান তা সিলেক্ট করুন। প্রতিটি লোকেশনের মূল্যই ভিন্ন।

যেমন: ‘Sea of Tranquility’ এ প্রতি একরের মূল্য ৭৯.৬৫ ডলার আবার ‘Sea of Vapours’ এ প্রতি একরের মূল্য মাত্র ১৯ ডলার। আপনার পছন্দমতো একটি লোকেশন সিলেক্ট করুন। এরপর নিচে স্ক্রল করুন আর আপনার নাম দিন।

১৫০+ বন্ধুর জন্মদিনের শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস, জনপ্রিয় ক্যাপশন ও উক্তি

এরপর আপনি কত একর কিনতে চান তা সিলেক্ট করুন। আপনি অনলাইন বাই করার সময় সর্বোচ্চ ১০ একর কিনতে পারবেন। তারপর এটি যদি কাউকে গিফট দিতে চান সেই ব্যক্তির জন্য একটি কার্ড দিন। তারপর কোন তারিখ বা কবে আপনি ডকুমেন্টসগুলো চান তা সিলেক্ট করুন।

এরপর চাইলে আপনি আপনার জমির একটি এনএফটি (NFT) তৈরি করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে ১৩ ডলার অতিরিক্ত দিতে হবে। তারপর নিচে গিয়ে Place order এ ক্লিক করুন। তারপর আপনাকে পে করতে হবে। পে করার জন্য আপনি কার্ড বা পেপাল ব্যবহার করতে পারবেন।

চাঁদের জমি কেনার বিষয়টি কতটুকু সত্য?

চাঁদের জমি কেনার বিষয়টি কতটুকু সত্য

আসলে চাঁদে জমি কেনার বিষয়টি সত্যি। বিভিন্ন বলিউড সেলেব্রিটি যেমন শাহরুখ ও সুশান্ত সিং রাজপুতের চাঁদে জমি রয়েছে। হলিউডের বারবারা ওয়ল্টারস ও টম ক্রুজের মতো সেলিব্রিটি চাঁদে জমি কিনেছেন। এমনকি আমেরিকার বিভিন্ন প্রেসিডেন্ট যেমন: জর্জ ডব্লিউ বুশ, জিমি কার্টার, রোনাল্ড রেগেনেরও চাঁদে জমি বলে জানা যায়।

এছাড়াও আমাদের দেশে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এই চাঁদে জমি কিনেছে। খুলমার এমডি অসীম নামক একজন তার স্ত্রীকে তাদের ষষ্ঠ বিবাহবার্ষিকীতে এই চাঁদের জমি কিনে দিয়েছে। তিমি লুনার এমব্যাসি ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করেন। আবেদনের কয়েকদিনের মধ্যে জমির স্যাটেলাইট ছবি, ভৌগলিক অবস্থান ও একটি বিক্রয় চুক্তিনামা পান।

চাঁদে জমি কেনার বিষয়টি কতটুকু সত্য? বিষয়টা হচ্ছে এই চাঁদে জমি কেনা কি আসল? বিষয়টি কতটুকু সত্য? আসলেই কি চাঁদে জমি কেনা যায়? সংক্ষেপে না। এসব শুধু মজার জন্য করা হয় আর একটু খ্যাতি লাভের জন্য। আসলে কেউই কোনো জমির মালিক নন।

চাঁদে জমি কেনা যাবে না কেন?

চাঁদে জমি কেনা যাবে না কেন

এখন বিস্তারিত উত্তর দিতে হলে আমাদের প্রথমে যেতে হবে আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগে ১৯৬৭ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া (তৎকালীম সোভিয়েত ইউনিয়ন) ও যুক্তরাজ্য এ বিষয় নিয়ে একটি চুক্তিনামা স্বাক্ষর করে যাকে বলা হয় আউটার স্পেস ট্রিটি। বর্তমানে এক শতাধিক দেশ এই চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ।

আর এই চুক্তি মতে কোন নির্দষ্ট ব্যক্তি চাঁদ বা এ মহাবিশ্বের কোনো গ্রহ-উপগ্রহকে দখল করতে পারবে না বা মালিকানা দাবি করতে পারবে না। এখন বিষয় হচ্ছে এখানে কিন্তু কোনো কোম্পানি বা ব্যক্তি যদি কেনার চেষ্টা করে সে বিষয় নিয়ে কিছু বলা হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে মুন এগিমেন্ট নামে আরেকটি চুক্তি পেশ করা হয়।

এই মুন এগ্রিমেন্টে বলা হয়েছে চাঁদ এবং এর সকল প্রাকৃতিক সম্পদের উত্তারাধিকারি সম্পূর্ণ মানবজাতি এবং কেউ যদি এসকল সম্পদের অপব্যবহার করে তাহলে তাদের প্রতিহত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

এছাড়া এ সকল সম্পদের উত্তোলন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণের অধীনে হবে এবং এ থেকে যা লাভ হবে তা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে। কিন্তু এই চুক্তিতে মাত্র ১১টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ইত্যাদি ক্ষমতাধর দেশ নেই।

লজিকাল উত্তর:

ধরুন আমি আপনাকে বললাম আমি আমেরিকার মালিক আর আমি আপনার কাছে আমেরিকা বিক্রি করে দেব ১ লক্ষ টাকা দিলে। এখন এটা হচ্ছে অবাস্তব। আমি আদৌ আমেরিকার মালিকই না তাহলে আমি আপনার কাছে কিভাবে বিক্রি করব। এই চাঁদে জমি কেনাবেচাঁও ঠিক সেরকমই। কেউ চাঁদের মালিক নন আর কেউ আপনার কাছে বিক্রিও করতে পারবে না।

তো পোস্টটি (চাঁদে জমি কেনার জন্য আবেদন এর উপায় | কতটুকু সত্য) কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

27 Comments

মন্তব্য করুন