আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব মাথার চুল পড়া সমস্যার সমাধান করা যায় কিভাবে।
আমরা জানি চুল মানুষের সৌন্দর্য কে হাজার গুণ বাড়িয়ে দেয়। একজন মানুষের মাথায় যদি চুল না থাকে তাহলে তাকে দেখতে একদম ভালো লাগেনা। তাই চুল মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। চুল পড়া খুব সাধারন একটি ব্যাপার। বয়স হলে চুল পড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় পর্যাপ্ত বয়স হওয়ার আগেই মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। এই বিষয়টা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। অনেকেই আছেন যারা তাদের মাথার চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে খুবই অশান্তিতে ভুগছেন। আপনাদের এই চুল পড়া সমস্যার সমাধান করার জন্য আমি নিয়ে এসেছি গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস। চলুন তাহলে শুরু করি।
আপনার কি মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে? এই চুল পড়ে যাওয়ার সমাধান খুজতে যাওয়ার আগে আসলে দেখা উচিত চুল পড়ছে কেন? বংশগত কারণ, মাথার ত্বক পরিষ্কার না রাখা, কম ঘুম, শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের ঘাটতি থাকা, পানির সমস্যা ইত্যাদি কারনে চুল পড়ে।তাই শ্যাম্পু বদলে ফেলা, বা নতুন কন্ডিশনার ব্যবহার করা, বা নতুন কোন হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করার চাইতে আগে নিজের জীবন যাত্রা প্রণালী পরিবর্তনের চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত ঘুমান, মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখুন, শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি পূর্ণ করুন।দিনে দুবার করে চুল আঁচড়াবেন, সপ্তাহে ২-৩ বার চুলে অয়েল ম্যাসাজ দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলবেন। মাথায় খুশকি থাকলে, বা চুলকালে নখ দিয়ে চুলকাবেন না। খুব জোরে চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়াবেন না। এতে চুল পড়ে গেলে ওই জায়গার কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তখন আর ওই কোষ থেকে নতুন চুল গজায় না। তাই মাথার ত্বক খুব জোরে জোরে নখ দিয়ে চুলকানো, চিরুনি দিয়ে জোরে আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকুন।
নতুন কোন হেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করার চাইতে কিছুদিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নিয়ে দেখতে পারেন। চুল পড়া বন্ধ করতে মাথায় কিছু ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখা বলতে আমরা কেবল শ্যাম্পু করা আর কন্ডিশনার লাগানোকে বুঝি। মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখা কিন্তু এর থেকেও অনেক বেশি কিছু। নিজের জন্য আলাদা চিরুনি এবং গামছা/ তোয়ালে ব্যবহার করুন। নিজের চিরুনি, গামছা/তোয়ালে, বালশের কভার সপ্তাহে ১ দিন ধুয়ে দিন। আপনার মাথার ত্বক তেলতেলে হলে, খুশকি থাকলে গরম পানি দিয়ে ধুবেন। ভিজা চুল আঁচড়াবেন না, ভিজা চুল নিয়ে শুবেন না। খুব জোরে জোরে মাথা ঘষে ভিজা চুল মুছবেন না। আলতো হাতে চেপে চেপে মাথার ত্বক থেকে পানি মুছে ফেলুন। নরম কাপড় দিয়ে মাথা মুছবেন ।
এছাড়া আর যা যা করতে পারেন – ১। মেহেদিঃ আপনার প্রয়োজনমত মেহেদি বাটা নিয়ে তাতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় দিন। ৩০-৪৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এই ভাবে সপ্তাহে ১-২ বার করে ব্যবহার করুন। ২। দূর্বা ঘাসঃ দূর্বা ঘাস ও কাঁচা বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া আপনার বাসার আশে পাশেই পাওয়া যাবে, বাংলাদেশে এই খুব সহজেই পাওয়া যায়। দূর্বা ঘাসের রস মাথায় দিয়ে ৩০-৪৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করুন।৩। পেঁয়াজ বাটা/ রসঃ আধা কাপ পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে আপনার মাথার ত্বকে লাগান। ৩০-৪৫ মিনিট রাখুন, এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করুন।৪। লেবুর রস/ সাদা ভিনেগার এবং গ্লিসারিনঃ লেবুর রস আর ভিনেগার, গ্লিসারিন- এরা সবাই খুব ভালো কন্ডিশনার। আপনার মাথার ত্বক যদি তেলতেলে হয় তবে লেবুর রস বা ভিনেগার- এই দুটির যে কোনটি আপনি কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আর মাথার ত্বক যদি স্বাভাবিক বা শুষ্ক হয় তবে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন।শ্যাম্পু করার পর এক মগ পানিতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস/ভিনেগার/গ্লিসারিন মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস ব্যবহার করলে তা ছেকে নিবেন। এরপর আবার পানি দিয়ে মাথা ধোয়ার দরকার নেই।৫। ভিটামিন ইঃ সপ্তাহে এক দিন নারিকেল তেল বা আপনি যে তেল ব্যবহার করেন তাতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে মাথা হাল্কা ম্যাসাজ করবেন। ভিটামিন ই ক্যাপসুল খুব সহজেই আপনার বাসার সামনের ওষুধের দোকানেই পাবেন।মেহেদি এবং দূর্বা ঘাস আপনার চুলের গোড়া শক্ত করে, আর পেঁয়াজ বাটা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।এছাড়াও আপনি নারিকেল তেলে জবা ফুল/আমলকি ইত্যাদি ফুটিয়ে বা রোদে শুকিয়ে সেই নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।এইসব ব্যবহার করার পাশাপাশি প্রোটিন ও ভিটামিন ই যুক্ত খাবার বেশি করে খান। দরকার হলে ভিটামিন ই ক্যাপসুল সপ্তাহে ১-২ টি করে খাবেন। কেনার আগে জিজ্ঞেস করে নিবেন, কারন খাওয়ার জন্য এবং চুলে দেওয়ার জন্য আলাদা ভিটামিন ই ক্যাপসুল পাওয়া যায়, আপনি চাইলে খাওয়ারটাই চুলে ব্যবহার করতে পারেন।আশা করছি আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এরপরও যদি চুল পড়া না কমে তবে আপনি একজন ডার্মাটোলজিস্ট দেখাবেন।