মানব স্বাস্থ্য বিষয়ক লিখাতে আমি আপনাদেরকে কান্না করা ও চোখের পানি চোখের স্বাস্থ্য ভালো ও সুরক্ষিত রাখতে কতোটা উপকারী তা সম্পর্কে বলবো।
অনেকেই অনেক কারণে কেঁদে থাকে। এই কাঁদা বা কান্না করা সময় চোখ দিয়ে পানি বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। আপনি জানেন কি?চোখের কান্নার পানির আছে অনেক উপকারিতা!
চোখ প্রাণীদেহের গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়গুলোর একটি ইন্দ্রিয়, যা দিয়ে সকল প্রাণী সবকিছু দেখতে পারে। আমরা মানুষ রাও এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি দিয়ে মহান আল্লাহ্’র তৈরি এই বিশাল জগতের সবকিছু দেখতে পারি। এই চোখের বড় কোনো সমস্যা হলে তা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। শরীরের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যেমন পুষ্টিকর খাবার ও বিভিন্ন পদ্ধতি অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হয়, ঠিক তেমনি মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গ চোখেরও স্বাস্থ্য আছে।চোখের স্বাস্থ্যের জন্য চোখের ব্যায়াম, ঔষধ, সময়মতো চিকিৎসা নিতে হয়। চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে চোখের পানি এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
আমরা আবেগে, দুঃখ-কষ্টে কান্না করি। পেঁয়াজ এর মতো বস্তু কাঁটার সময় চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়াও একপ্রকার কান্না। কান্নার সময় চোখের এই পানি চোখের জন্য কতোটা উপকারী তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। “উইলিয়াম ফ্রে”- নামে এক বিজ্ঞানী দীর্ঘ ১৫ বছর গবেষণা করেছেন কান্নার সময় চোখের পানি নিয়ে। গবেষণা শেষে তিনি বলেছেন- চোখের পানি হচ্ছে পানি, তেল, শ্লেষা, পিচ্ছিল একপ্রকার মিউকাস, ও জীবাণুরোধী অ্যান্টিবডির মিশ্রণ। মানবদেহের চক্ষু গোলকের উপরের হাড়ের নিচের দিকে বাদাম আকৃতির এক প্রকার গ্রন্থি থাকে যা ” লেক্রিমাল গ্রন্থি” নামে পরিচিত। “লেক্রিমা” হচ্ছে একটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ হলো “অশ্রু”। এই ” লেক্রিমাল” বা অশ্রু গ্রন্থিতে যে তরল পদার্থ থাকে তা-ই কান্নার সময় চোখ দিয়ে গড়িয়ে বের হয়। এই চোখের পানি কতোটা উপকারী তার কিছু বর্ণনা দেওয়া হলো-
১. এটি চোখকে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে। যার জন্য চোখ শুষ্ক হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকে।এতে করে দৃষ্টিশক্তি স্পষ্ট থাকে। শুষ্ক চোখ মারাত্মক ক্ষতিকর। শুষ্ক চোখের কারণে চোখে নানা সমস্যা হতে পারে। আলোতে চোখ মেলতে সমস্যা হয়, দূরের বা কাছের জিনিস দেখতে সমস্যা হতে পারে চোখ শুষ্ক হয়ে গেলে। চোখে থাকা সেই তরল চোখকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে চোখের দৃষ্টি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
২. চোখের পানিতে থাকে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টি ভাইরাস উপাদান, যা চোখকে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। রাস্তাঘাট বা অন্যান্য জায়গায় গেলে চোখে ধুলাবালি, ময়লা ঢুকে যায়। এই ধুলাবালি, ময়লা চোখে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে এবং তা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের আক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু চোখের পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস রোধী উপাদান চোখকে নিরাপদ রাখে।
৩. চোখের পানিতে থাকে “আইসোজাইম” নামক একটি উপাদান। যা ৫-১০ মিনিটেই চোখে থাকা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারে।
৪. শরীরে ম্যাঙ্গানিজ এর পরিমাণ বাড়তে থাকলে উদ্বেগ, রাগ,হতাশা, অস্বস্তি বাড়তে থাকে। কান্না করলে শরীর থেকে সেই ম্যাঙ্গানিজ চোখের পানির মাধ্যমে বের হয়ে শরীরকে সতেজ, প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে।
অনেক উপকার আছে চোখের পানিতে। তাই অনেক গবেষকেরা বলে থাকেন যে, মাঝেমধ্যে একটু কান্না করা ভালো। কান্নার ফলে মন ও শরীর হালকা হয়। কান্নার সময় চোখে আসা পানি চোখের জন্য উপকারী। তাই কোনো দুঃখের আবেগ চাপলে বা কোনো মন ভারী করা আবেগ চাপলে একট হলেও কান্না করার চেষ্টা করুন। নামাজের সময়, দোয়া করার সময় কান্না করলে ঐ কান্না, চোখের পানির মূল্য আল্লাহ্ তা’আলা দেন। এসব উপকারিতা আছে জেনেও কিছু সময়ের জন্য, মনকে হালকা করার জন্য কান্না করা দরকার।