গতকাল বাসে উঠে প্রথম সারির সিট পেরিয়ে দ্বিতীয় সারির বামদিকের ফাঁকা সিটে বসে পরলাম। আমার পাশে যিনি বসেছিলেন, তার প্রায় একবছর বয়সী বাচ্চাটি দেখতে মাত্রাতিরিক্ত কিউট। সিটে বসবার সময়ই সে তার মুখ দিয়ে তার ভাষায় আ.. ও.. করে আমায় স্বাগত জানালো হয়তো। তার কথার অর্থ আমি কিছুই বুঝলাম না যদিও তবুও মনে মনে বললাম মা শা আল্লাহ কি কিউট বেবি।
তারপরের ঘটনা,- পিচ্চিটা তার মায়ের কোলে থেকেই দুষ্টামি করছে, কখনও ব্যাগ ধরছে তো কখনও পা দিয়ে সামনের সিটে লাথি দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি তখনও দেখছি আর ভাবছি আসলেই বাচ্চাটা কি কিউট।
সিটে বসবার পর থেকে সে এক পা একটু পর পর আমার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে আর আমি তাকালেই খিলখিল করে হাসছে। পিচ্চিটাকে কেন্দ্র করেই তার মায়ের সাথে কথা বলে পরিচয়পর্ব শেষ করলাম। তারপর কিছুদূর যেতেই সে একটু পর পর হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে দেখে আমি শেষে যখন নিজের হাত বাড়িয়ে দিলাম, সে যেনো খুব খুশি।
তবে তার মা আমাকে সতর্কবাণী হিসেবে বলেছিল খুব দুষ্টু। হাত বাড়িয়ে ওকে নিয়েই পড়লাম বড় বিপদে। নিয়েই প্রথম সে যেটা করলো, সেটা হলো যতই বসানোর চেষ্টা করি, সে আর বসে না। পরিস্থিতি সামলাতে ভাবলাম থাক, না বসুক, তো কি আর হবে?
কিন্তু নাহ, আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। সে এত অল্প সময়েই আমার দুই ঊরুর ওপর দাঁড়িয়ে যে দৌড়,ঝাপ লাফালাফি শুরু করলো তাতে আমি আর তার মুখে কোনো কিউটনেস খুঁজে পেলাম না। আমার নিজেকে এখন কেবল শোষিত বলে মনে হচ্ছে। এর ভেতর ওর মা একবার যদিও বলেছে যে দাও, খুবই দুষ্টামি করছে। কিন্তু এক আত্মসম্মানবোধ নিয়ে বললাম, নাহ, কোনো সমস্যা নেই,, যদিও আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল দিয়ে দেওয়ার জন্য।
এদিকে পিচ্চিটা পা দিয়ে পিষণ রেখে হাতটি বাড়ালো আমাদের চশমার দিকে। নাছড়বান্দা সে। আর যাই হোক চশমা তো দেওয়া যাবে না এই ভেবে চোখ থেকে চশমা খুলে পাশে রাখতেই পিচ্চির মুড একদম ১৮০° এঙ্গেলে ঘুরে গেলো। ঠোঁট ভেটকিয়ে তার হাত দিয়ে আমার মুখে একটা সজোরে মারলো।
আমি কিছু বুঝতে যাবো তার আগেই সে শালিকের মতো মুখটা নিয়ে এসে আক্রমণ করলো আমার মাথায়। যদিও দাঁত বলতে ঐ দুইটাই তবুও আমার মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম। একদিকে আমার চুল, অন্যদিকে ওর দুই হাতের মুঠি।
……………
পিচ্চির সাথে পিচ্চির মা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধসম লড়াই করে তার কোলে ফিরিয়ে নিল। তারপর শান্তি বার্তা হিসেবে আমায় স্বান্তনা দিলেন,”আগেই বললাম খুব দুষ্টু, আমায় দিয়ে দাও”। শোষিত আমি মুখে এক কেবলাকান্ত হাসি নিয়ে বললাম সমস্যা নেই। আর পিচ্চির দিকে তাকাতেই দেখলাম সে হাতে অনেকগুলো চুল সগৌরবে তুলে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে হাতের মুঠি খুলছে আর খিলখিল করে হাসছে। যে হাসিতে এই প্রথমবার যেনো আমি কিউটনেসের পরিবর্তে খুঁজে পেলাম পৈশাচিক আনন্দ।
কালকের সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর যেই মাথার ব্যথা,,, তা আজও কমেনি। এদিকে বাস এখনও ছাড়ছে না দেখে সামনে তাকাতেই দেখি একটি মেয়ে এক বছর বয়সমতো একটা পিচ্চি কোলে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। আমার পাশের সিটটির দিকে তাকাতেই দেখলাম সেটি খালি পরে আছে। আর সামনে তাকাতেই দেখি পিচ্চিটা খিলখিল করে হাসছে। বুঝতে পারছি এর মাঝে কোনো কিউটনেস নেই। দিশেহারা আমি আশপাশ কোনো খালি সিট আছে কি না খোঁজ করতে করতেই মেয়েটি তার বাচ্চাসমেত আমার পাশের খালিসিটটায় বসে পড়লো আর আমি এখন তাই দেখে আমার চশমাটি খুলছি। যত দ্রুত সম্ভব একে লুকিয়ে ফেলতে হবে।