দীর্ঘদিন পর নিজেদের দেশের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে পাকিস্তান।করাচীতে ১ম টেস্টে টসে হেরে অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে দঃ আফ্রিকাকে ১ম দিনে ২২০ এ অলআউট করে স্বাগতিকরা। কিন্তু দিন শেষে ২৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে নিজেদের বোলারদের কৃতিত্বটাকে ম্লান করে দিচ্ছিল তারা।
তবে ফাওয়াদ আলমের লড়াকু সেঞ্চুরীতে দ্বিতীয় দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে পাকিরা, পেয়েছে ৮৮ রানের লিড।দীর্ঘ ১১ বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার পর এটি ফাওয়াদের ২য় শতক। নিজের দেশের মাটিতে প্রথম আর সব মিলিয়ে তৃতীয় টেস্ট শতক।
ফাওয়াদ আলমের ক্যারিয়ার সময়ের হিসেবে বড় হলেও ম্যাচ কিংবা ইনিংসের পরিসংখ্যানে খুবই ছোট্ট।আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মাত্র ৮টি টেস্ট (চলমান)*, ৩৮টি ওডিআই ও ২৪ টি টি-টুয়েন্টি খেলার সুযোগ হয়েছে ফাওয়াদের।তার ছোট্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন আর ফিরে আসার গল্প ছোট্ট করে তুলে ধরা হলো
এখানেঃ ফাওয়াদের জন্ম করাচীতে এক ক্রিকেটিয় পরিবারে ১৯৮৫ সালের ৮ই অক্টোবর।তার পিতা তারেক আলম ক্রিকেটার ছিলেন যিনি পাকিস্তানী ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলেছেন।
ফাওয়াদ ছোট থেকে ক্রিকেট ভালোবাসতেন আর অনেক প্রভিতাবান ব্যাটসম্যান ছিলেন আর সাথে বল করতেন লেফট আর্ম অর্থডক্স।
তার ক্রিকেটীয় প্রতিভা দেখে তাকে মাত্র ১৭ বছর বয়সে অ-১৯ বিশ্বকাপের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে আলোচনায় আসেন ২০০৬-০৭ কয়েদ-ই-আজম ট্রফিতে পঞ্চম সর্বাধিক রান সংগ্রাহক হয়ে। ঐ বছরই টি-২০ কাপে ম্যান অফ দ্যা ফাইনাল, ম্যান অফ দ্যা সিরিজ, সেরা ব্যাটসম্যান, সেরা বোলারের পুরষ্কার একা জিতেন তিনি।
২০০৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দল হেরে যাবার পর ফাওয়াদ আলমকে প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য দলে ডাকা হয়।আবুধাবিতে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ২০০৭ সালের ২২ই মে তার ওডিআই অভিষেক হয়।ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই গোল্ডেন ডাক মেরে বসেন তিনি । এরপর তিনি কখনোই ওয়ানডে দলে থিতু হতে পারেন নি।নিয়মিত আসা যাওয়ার মধ্যে থাকতে থাকতে একসময় বাদ পরে যান তিনি।
এরপর ২০১৪ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়াকাপের দলে ডাক পান তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭৪ রান করে দলকে ৩২৬ রান চেজ করতে সহায়তা করেন তিনি।এছাড়া ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১৪ রানে অপরাজিত থাকেন যদিও তার দল হেরে যায়। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের একমাত্র শতক।তিনি সর্বশেষ ওডিআই খেলেছিলেন বাংলাদেশের সাথে ২০১৫ সালে যখন বাংলাদেশ তাদেরকে ঘরের মাটিতে হোয়াইট ওয়াশ করে।
২০০৭ সালেই কেনিয়ায় তার টি-২০ অভিষেক হয়।স্বাগতিক কেনিয়ার বিপক্ষে বল হাতে ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ১ উইকেট তুলে নেন তিনি।ব্যাট হাতে তিন রানে অপরাজিত থাকেন। তিনি তার টি-২০ ক্যারিয়ারে ১৭ গড়ে ২৪ ম্যাচে ১৯৪ রান করেন।সর্বশেষ টি-২০ খেলেছেন এক যুগ আগে ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডে।
ওয়ানডে অভিষেকের মতোই টেস্ট অভিষেকও হয় শ্রীলঙ্কার সাথেই।তবে এবার আর গোল্ডেন ডাক মারেন নি তিনি। অভিষেক ম্যাচেই অনবদ্য ১৬৮ রানের চোখ ধাধানো ইনিংস খেলেন। তবে এবার ও তার দল হেরে যায়। এরপরে আর মাত্র দুইটি টেস্ট খেলা হয়েছিলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
দীর্ঘ ১১ বছর টেস্ট স্কোয়াড এ জায়গা না পাওয়ার পর ২০২০ সালে ইংল্যান্ড সফরে তাকে দলে ডাকেন পাকিস্তানের হেড কোচ মিসবাহ-উল -হক। দীর্ঘ ১১ বছর আর ৮৮ টেস্ট ম্যাচ পর ফিরে আবার ডাক মারলেন।ইংল্যান্ডের বিপক্ষে না হোক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরী হাকিয়ে কোচদের আস্থার প্রতিদান আর নিজের প্রত্যাবর্তনটাকে স্মরণীয় করে রাখলেন ফাওয়াদ আলম।
আর নিজের প্রত্যাবর্তনটাকে আরো একটি নতুন মাত্রা দিলো আজকের এই সেঞ্চুরীটা।ফাওয়াদ আলমের ক্যারিয়ারে কোন ফিফটি নেই, তিনটির সব কয়েকটিকে সে সেঞ্চুরীতে পরিণত করেছে। ৮ ম্যাচের ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ারে তার করা রান সংখ্যা ৫০৯* ।
সত্যিকার অর্থে ফাওয়াদ আলম ফিরেছে , জীবন আর ক্রিকেটকে ভালোবেসে বয়সকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে।পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ফাওয়াদ আলমকে পযার্প্ত সুযোগ দেয় নি। সুযোগ পেয়ে আজ ফাওয়াদ তার ক্লাস দেখাচ্ছে , হয়তো পযার্প্ত সুযোগ পেলে সে পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের কাতারে থাকতো।
হয়তো নিজের ব্যাট দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করতো। সে সব না হলেও সুযোগ আছে নিজের ছোট্ট ক্যারিয়ারটাকে বড় করার ,ব্যাট হাতে বোলারদের দাপট দেখানোর।
তবে কাকতালীয় কিনা জানি না ফাওয়াদ আলম যে ম্যাচে সেঞ্চুরী করেছে সেই ম্যাচ কখনোই জিতে নি পাকিস্তান। এই বারই প্রথম জিতলো পাকিস্তান।