বিকেল ৩টা কি ৪টা, জরুরী একটা কাজ সেরে বাসায় ফিরছি । পথ টা স্কুলের সামনে দিয়েই । ১ বছর হচ্ছে স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে বের হয়েছি । স্কুলে তখন ছুটি হয়ে গেছে । ছাত্র রা বের হচ্ছে । স্কুলের নিয়ম ছাত্রী দের মর্নিং শিফট, আর ছেলেদের ডে শিফট । ১২ টা থেকে শুরু ৪ টায় ছুটি । ছেলেরা সব শুর শুর করে বাড়ি ফিরছে , তখন অজানা এক বিয়োগ ব্যাথা জেগে উঠেছে । সেই স্কুলের দিন গুলি । দুপুর এর দিকে স্কুল ড্রেস পড়ে স্কুলে আসা, তারপর ব্যাঞ্চ এর জায়গা নিয়ে ক্লাসমেট দের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেওয়া । এই ছিল নিত্যনৈমিত্তিক । স্কুলের কড়া নিয়ম ও প্রভাব ফেলতে চাইতো আমাদের উপর । কিন্তু আমাদের দুরন্তপনার কাছে তাও হার মানিয়েছে । অনেকেই বাসা থেকে হোম ওয়ার্ক আনতো না , স্কুলে এসেই ব্যাগ ব্রাঞ্চ এর উপর রেখে খাতা কলম বের করতো আর অন্যদের জিজ্ঞেস করত কে কে হোম ওয়ার্ক করেছে । কেউ হোম ওয়ার্ক দিতো তো কেউ দিতে চাই তো না । কেউ বা প্রশ্ন ছাড়া দিয়ে অন্যদের সাহায্য করতো । আর দ্রুত হোম ওয়ার্ক শেষ করে ফেলতাম ।
ক্লাস এ টিচার আসতে একটু দেরি হলেই শুরু হয়ে যেতে নিজেদের ফ্রি এন্টারটেইনমেন্ট । পিছন থেকে কেউ মাথায় মারতো , তখন ই শুরু হয়ে যেতো বাক বিতণ্ডা । তারপর হতো ব্যাগ মারা মারি কিংবা তেঁতুল বা বড়ই বিচি মারা সব মিলিয়ে বন্ধুদের লঙ্কা কাণ্ড বেঁধে যেতো । ক্লাস ক্যাপ্টেন থাকতো নির্বাক । যখন ক্লাস বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য ক্যাপ্টেন সতর্ক করার চেষ্টা করতো, তখন তাকে সহ জড়িয়ে ফেলতাম । আর পাশের ক্লাস থেকে টিচার রা এসেই , কিছু শুনিয়ে দিয়ে যেতো , আর ক্লাসের টিচার এসেই তো …… ! স্কুল থেকে পালানোর সুযোগ ছিল না । তবুও পালানোর জন্য নতুন নতুন আইডিয়া বানাতাম । দেয়াল টপকে কিংবা আগে ব্যাগ বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে পরে ভদ্র লোকের বেশে গেট দিয়ে বিনা বাধায় বেরিয়ে যেতাম । যদিও ছিল জরিমানার বেড়াজাল । কিন্তু সেই বেড়া জাল ও আটাকাতে পারতো না আমাদের দুরন্তপনা কে ।
এখন দীর্ঘশ্বাস ফেলছি নিজের অজান্তেই । শিক্ষক দের সেই অনুপ্রেরণা , শাসন , আমাদের জন্য কত টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল , আজ যখন স্কুলের পাঠ চুকিয়ে ফেলেছি তখন ই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি । আর বিদ্যালয় এর দিনগুলো , বন্ধু দের সাথে মাতামাতি , স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঘুরে বেড়ানো , স্কুল পালানোর সেই দিন গুলো কে খুবই অনুভব করছি । স্কুলের সেই আনন্দময় জীবনে আর ফিরে যেতে পারবো না ঠিকই কিন্তু সেই দিন গুলো কে কখনো ভুলবার নয় । সেই স্মৃতি গুলো তখন বারবার মনে পড়বে যখন ব্যস্ততা কাটিয়ে নিজেকে জানার চেষ্টা করব ।