একদা এক বনে একটি হাতি বাস করত। হাতিরা সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে থাকে। কিন্তু সে বাস করত একা। ছোটবেলায় সে তার দল থেকে হারিয়ে যায়। তাকে একা দেখতে পেয়ে একটা শিকারী তাকে বধ করে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাচ্ছিলো; কিন্তু সৌভাগ্যবশত সে পালিয়ে আসে এবং এখানে বসবাস করা শুরু করে।
লোকালয় থেকে দূরে একটি বনে তার আবাস। সেই বনে খাবার এর কোন অভাব ছিল না। ফলে তাকে খাওয়া দাওয়া নিয়ে অতিরিক্ত কোনো চিন্তা করতে হতো না। বনটাতে লোকজনের তেমন একটা সমাগম না থাকায় সে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতো। সে খেলতো, দৌড়াতো আর বনের অন্যান্য পশুপাখিদের সাথে হাসি তামাশায় মেতে থাকতো। দিনগুলো মোটামুটি ভালই যাচ্ছিল তার..
ধীরে ধীরে তার অনুভূত হতে লাগলো, এই একাকী জীবনে সে আর বেশিদিন ভালো থাকতে পারবেনা। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল দেশ সফর করবে। কিন্তু সফরসঙ্গী কে হবে? কেউই তার সাথে দেশ সফরে যেতে চায় না। কারণ, সবারই একটা পরিবার রয়েছে এবং সে পরিবারের উপর দায়িত্বও রয়েছে। বাধ্য হয়ে সে একাই রওনা দিল সবকিছু ছেড়ে…
হাঁটতে হাঁটতে নদী পর্যন্ত চলে এলো সে। এমন সময় একটি বাঁদর কোত্থেকে যেন এসে তার পথ রোধ করলো।
– হাতি ভাই, হাতি ভাই, তুমি তো এখানকারই স্থায়ী বাসিন্দা তাই না?
– হ্যাঁ বাঁদর ভাই। আমি এখানকারই বাসিন্দা। কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে?
– আমি জানি। কারণ নদীর ওপার থেকে সহজে কেউ এপারে আসেনা। আর এপার থেকে সহজে কেউ ওপারে যায় না।
– ও আচ্ছা। কিন্তু কেন?
– কারণ ওপারের লোকদের সাথে আমাদের অনেক আগে থেকে দুশমনি রয়েছে।
– কেন? কিসের দুশমনি তাদের সাথে?
– ওপারের লোকেরা এপারের সম্পত্তি দখল করার জন্য তৎপর হয়ে আছে সবসময়। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের বনের রাজা সিংহরাজ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এপার থেকে ওপারে কেউ যাবেনা। আর ওপার থেকে কেউ এপারে এলে তাকে বধ করা হবে।
– কিন্তু আমার যে ওপারে যেতে হবে ভাই।
– সেটা তুমি বুঝে দেখো হাতি ভাই। তবে এপারের বাসিন্দা আমি এবং একজন সামাজিক প্রাণী হিসেবে আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি। এখন তোমার যদি ইচ্ছে হয় তাহলে তুমি রাজার কাছ থেকে অনুমতি নাও। তিনি অনুমতি দিলে অবশ্যই যেও।
– কোথায় আছেন রাজামশাই?
– ওই যে ওদিকে একটা বাঁশঝাড় রয়েছে। ওটা পেরোলেই একটা মাঠ দেখতে পাবে। আর মাঠ পেরুলেই বন। সে বনে বাস করেন আমাদের রাজা সিংহরাজ।
– ঠিক আছে, ধন্যবাদ বাঁদরভাই।
– আচ্ছা হাতি ভাই, একটা প্রশ্ন ছিল।
– কি প্রশ্ন?
– তুমি এই বনের বাসিন্দা। কিন্তু আমাদের রাজার ব্যাপারে কিছু জানোনা.. ওপারে যাওয়া আসার ব্যাপারে কিছুই জানো না.. ঘটনা কি?
– আসলে ঘটনা তেমন কিছুই না। আমার একাকী জীবন আর ভাল লাগেনা। তাই আমি চাইছি আমার জন্য উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজতে। তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবে ভাই?
– আমার পরিবার আছে। সে পরিবারের কর্তা আমি। কিভাবে তোমায় সাহায্য করি বল? তবে তোমায় এটা বলতে পারি যে, ওপারে যাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবপ তোমায়। ওপারের বাসিন্দারা তেমন একটা সুবিধার না।
– ঠিক আছে বাঁদরভাই। আমি চেষ্টা করবো
– আচ্ছা, আমি তাহলে যাই। ভালো থেকো..
– ঠিক আছে। তুমিও..
মনের মধ্যে একটু সংকোচ এবং একটু সন্দেহপ্রবণতা কাজ করছিল হাতির মনে। তবে সব কিছুকে টপকে গেছে তার সঙ্গী পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। বাঁদরের নির্দেশনা মতো অতিসত্বর সে রাজার সাথে যোগাযোগ করে…
সিংহের গুহায় উপস্থিত হয়ে হাতি কুর্নিশ করে সিংহরাজকে। অতঃপর এই বন ত্যাগের কথা জানায়। হাতির কথা শুনে সিংহরাজ একটু চিন্তিত হয়ে যায়। বলে,
– দেখো হাতি ভাই, বেশ কয়েক বছর আগে ওপার থেকে কয়েকটা স্যুট-ব্যুট পরা লোক এসে আমাদের মধ্য থেকে অনেককে তুলে নিয়ে যায়। তখন আমি ছোট ছিলাম। আমার বাবা তখন রাজা ছিলেন এ বনের। আমি প্রায় সময় ওপার থেকে আসা অস্ত্রসহ কয়েকটি লোককে দেখতাম, যারা আমার এই বনের বাসিন্দাদের কে তুলে নিয়ে যায়। তাদের ক্ষতি করে। বাবার পরে এখন সিংহাসনে বসেছি আমি। নতুন অনেক নিয়ম আমি প্রণয়ন করেছে। সেখানে অন্যতম নিয়ম যেটি, সেটি হচ্ছে – এপারের বাসিন্দারা ওপারে যাবেনা এবং ওপারের বাসিন্দারা এপারে এলে তাদেরকে বধ করে রাখা হবে..
– রাজামশাই.. আমি ছোটবেলা থেকে যখনই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি, সে কাজ আমি করেছি। আর প্রধানতঃ আমিও অন্যদের মতো আমার একটা পরিবার চাই। আমার সঙ্গী প্রয়োজন। অতএব আপনি আমাকে অনুমতি দিন।
– তুমি কি করতে চাইছো সেটা বল..
– আমি মূলত ওপারে যেতে চাইছি। আমার সঙ্গীর খোঁজে। এপারে কেউ নেই আমার।
– এক শর্তে তোমায় যেতে দিতে পারি।
– কি শর্ত বলুন।
– তোমার মৃত্যুর দায়ভার আমাদের কারো উপর দিতে পারবে না। এই গাছের ডালে সই করে দাও। তবে আমি তোমাকে যেতে দিতে পারি।
– ঠিক আছে রাজা মশাই। আপনাকে ধন্যবাদ।
অতঃপর হাতি তার লম্বা শুঁড়টি দিয়ে একটি একটি পাথর উঠিয়ে নিলো এবং সিংহরাজের দেখানো গাছটিতে একটা সই করে দিল।
বিদায় নিয়ে সে রওনা দিতে শুরু করলো। পুনঃরায় নদীর পারে চলে যায় হাতি। এমন সময় পেছন থেকে কাকেরা ডাক দেয়..
“হাতি ভাই.. হাতি ভাই.. যেও না.. যেও না.. ওরা তোমাকে আর আসতে দেবে না…”
হাতি একটু থামে, আবার চলতে থাকে। তাকে যে যেতেই হবে ওপারে। তার সঙ্গীকে তো খুঁজে বের করতে হবে। নাহয় সে কি করে পরিবার বানাবে…
নদীর ঘাটে কয়েকটি ভেলা রাখা ছিল হাতিটা একটি ভেলাতে চড়ে রওনা দিল তার গন্তব্যে…
(বাকিটুকু পরবর্তী পর্বে)
কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনাী কেমন লেগেছে। আর অপেক্ষায় থাকুন পরবর্তী পর্বের.. ধন্যবাদ 💘