র্যাগিং! শব্দটার সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। বাংলাদেশে বহু আগে থেকেই চলে আসছে র্যাগিং প্রথা। ক্যাম্পাসের সিনিয়রদের সাথে জুনিয়রদের পরিচয় পর্ব কেই নাম দেয়া হয়েছে র্যাগিং। তবে বর্তমানে তা মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজ সবাখানেই চলছে র্যাগিং এর নামে অমানুষিক নির্যাতন। সপ্তাহের একটা দিনকে র্যাগ দেয়ার জন্য নির্ধারণ করে দেন সিনিয়র রা। সিনিয়রদের মতের বাহিরে গিয়ে কিছু করলেই নবাগত শিক্ষার্থীদের উপর সেই দিনটিতে চলে মানুষিক, শারীরিক কিংবা দুটোই এক সাথে। অনেক শিক্ষার্থী এ অমানুষিক নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যায় আবার অনেকে সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় টিসি নেয়ার। অনেকের জীবন থমকে থাকে এ র্যাগিং এর জন্য।
বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা মানুষিকভাবে এই প্রস্তুতি নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যান যে, তাদেরকে যেকোনো র্যাগিং এর শিকার হতে হবে। একজন শিক্ষার্থী যখন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হয়। তখন চারপাশের সবকিছুই তার কাছে অপরিচিত লাগে।কারণ সেখানে তার আগে চলাফেরা থাকে না। অনেকে অন্যান্য বিভাগ থেকেও আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। যার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে নিজের পরিবার ছেড়ে বাইরে থাকতে হয়। পরিবার এবং পরিচিত পরিবেশ ছাড়া একজন শিক্ষার্থী অনেক অসহায় হয়ে পরে,যা একটু মানবিক দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করলেই অনুভব করা যায়। ঠিক এরকম একটি পরিস্থিতিতে র্যাগিং একজন শিক্ষার্থীর মনে কীরূপ বাজে প্রভাব ফেলে তা যাকে র্যাগ দেয়া হয় সে ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না। র্যাগিং প্রায় সব পাবলিক ভার্সিটিতেই রয়েছে। তবে আজকাল স্কুল কলেজেও এর সক্রিয়তা দেখা যায়। কোথাও বেশি দেখা যায় আবার কোথাও কম দেখা যায়। চুল বড় থাকা, শার্টের বোতাম খোলা থাকা, সিনিয়রদের সালাম না দেওয়া সহ নানান যুক্তি দেখিয়ে দিনের পর দিন চলে আসছে এই র্যাগিং।
র্যাগিং এর সময় জুনিয়রদের সাথে যা যা করা হয়ে থাকে তা হলো কান ধরে ওঠবস করানো, রড দিয়ে পেটানো, পানিতে চুবানো, উঁচু ভবন থেকে লাফ দেওয়া, সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেওয়া, গাছে ওঠানো, ভবনের কার্নিশ দিয়ে হাঁটানো, অনেক্ষণ না থেমে দৌড়ানো ইত্যাদি। শুধু শারীরিক নির্যাতন ই না। গালিগালাজ করে, কুৎসা রটিয়ে, ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়েও নানা ধরনের মানসিক নির্যাতনও করা হয়।
র্যাগিং বন্ধের বিষয়ে হাইকোর্টে একাধিক বার বলা হয়েছে। তবে এখনও তা বন্ধ হয় নি।আইন করে এসব খুব দ্রুত বন্ধ করা উচিৎ।র্যাগিং এর কারণে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হতে পারে। এসব র্যাগিং তার জীবনে স্থায়ী কোন প্রভাব ফেলতে পারে। তাই র্যাগিং নামের অপসংস্কৃতি বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।