হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আজকে আমরা জানবো বিনিয়োগ সম্পর্কে। বিনিয়োগ কি? বিনিয়োগ কাকে বলে ? বিনিয়োগের ঝুঁকি কেমন? বিনিয়োগের সময়সীমা পদ্ধতি কেমন? কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করা যায়? কোথাকার বিনিয়োগের ঝুঁকি কেমন?আপনি কতটুকু ঝুকি গ্রহন করতে পারবেন? ইত্যাদি সম্পর্কে।।
প্রথমেই আমরা আসি বিনিয়োগ কি, বিনিয়োগ কাকে বলে ?
বিনিয়োগ বলতে আমরা বুঝছি নির্দিষ্ট পরিমাণ ঝুঁকি গ্রহণের মাধ্যমে মুনাফা প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে নিজ তত্ত্বাবধানে কিংবা অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ কাজে লাগানো কে বিনিয়োগ বলে। সহজ ভাষায় বললে লাভের আশায় সঞ্চয়ের টাকা কোথাও ব্যবহার বা লগ্নি করাকে সাধারণভাবে বিনিয়োগ বলা যায়। বিনিয়োগের জন্য কিছু মূল বিষয় জানতে হবে। সেগুলো হলঃ
প্রথমত বিনিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। অর্থের পাশাপাশি আমরা নিজেরা নিজেদের শ্রম বা মেধা কেউ বিনিয়োগ করতে পারে।বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হতে হবে নির্দিষ্ট সময় শেষে সম্পদের বৃদ্ধি। বিনিয়োগে বিভিন্ন পরিমাণে ঝুকি রয়েছে সেই ঝুঁকির সঙ্গে সম্পদ বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। বিনিয়োগের বিভিন্ন ধরনের উপায় বা মাধ্যম রয়েছে। বিনিয়োগকৃত অর্থের ব্যবস্থাপনা আপনি নিজে যেমন করতে পারবেন তেমনি অন্যের ব্যবস্থাপনাতেও আপনি অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন। ঝুকিহীন বিনিয়োগকে নিরাপদ বিনিয়োগ বলা হয়।
এখন আমরা জানবো মেয়াদের বিবেচনায় বিনিয়োগ কয় রকমের হয়?
মেয়াদের বিবেচনায় বিনিয়োগ তিন রকমের হয়। যথা
১। স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগ। যা এক বছর বা তার কম সময়ের জন্য প্রযোজ্য।
২। মধ্য মেয়াদী বিনিয়োগ। যা দুই বছর বা তিন বছর সময়ের জন্য প্রযোজ্য।
৩। দীর্ঘমেয়াদীবী নিয়োগ যা চার থেকে ছয় বছরের জন্য প্রযোজ্য।
মুনাফা ও ঝুঁকির মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর
সব ধরনের বিনিয়োগের ঝুঁকি একই নয়। খুবই সাধারণভাবে যেই বিনিয়োগে ঝুকি যত বেশি সেই বিনিয়োগে মুনাফা বেশি। ঝুঁকি গ্রহণের সামর্থের উপর একজন বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ সক্ষমতা নির্ধারিত হয়। বিনিয়োগের মাধ্যমে সবাই লাভবান হতে চায় কিন্তু সবাই কি একই পরিমান ঝুকি গ্রহণ করতে? পারে না।
১/ কিছু বিনিয়োগকারী রয়েছেন যারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজের অর্থকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বৃদ্ধি করতে বদ্ধপরিকর। যদি এ কাজে তার অর্থ লোকশান হয় তাহলেও তিনি মেনে নিতে রাজি। এ ধরনের মানুষের সুখী গ্রহণের সক্ষমতা বেশি।
২/ আরেকদল বিনিয়োগকারী রয়েছেন যারা তাদের বিনিয়োগ থেকে মোটামুটি মুনাফা চান। তার বিপরীতে তিনি বা তারা কিছু নির্দিষ্ট ঝুঁকি গ্রহণ করতে রাজি থাকেন। এ ধরনের নিয়োগ কারীদের ছুটি গ্রহণের সক্ষমতা মোটামুটি।
৩/ কেউ কেউ এমন ভাবে গচ্ছিত বা সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করতে চান যেন তিনি নির্দিষ্ট সময় পরে প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকৃত অর্থের কিছু অর্থ পাওয়া যায় কিন্তু মূল টাকা যেন সংরক্ষিত থাকে। এ ধরনের বিনিয়োগকারীদের সুখী গ্রহণের সামর্থ্য বা সক্ষমতা প্রায় শূন্য।
এখন আমরা জানবো এই ঝুঁকি গ্রহণের সক্ষমতা কোন জিনিসের উপর নির্ভর করে।
১/ সম্পদ বৃদ্ধির আকাঙ্খা রূপ নির্ভর করে
২/ সম্পদের উপর ব্যক্তির নির্ভরশীলতার উপর নির্ভর করে
৩/ বিনিয়োগকারীর বয়সের উপর নির্ভর করে
৪/ এবং বিনিয়োগের মেয়াদের উপর নির্ভর করে
বিভিন্ন রকমের বিনিয়োগ সম্পর্কে ধারণা
১/ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিনিয়োগ
প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ব্যক্তি নিজ দায়িত্বে বিনিয়োগ করেন বিনিয়োগকৃত অর্থের পাশাপাশি তিনি নিজের শ্রম মেধা ও সময় কাজে লাগান এতে ঝুঁকির পুরোটাই তার নিজের এবং লাভ তার নিজের।
পরোক্ষ বিনিয়োগে যিনি অর্থ বিনিয়োগ করেন তিনি ওই অর্থের ব্যবহার সঙ্গে নিয়োজিত থাকেন না। অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন ব্যক্তি উক্ত অর্থের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকে এবং অর্জিত মুনাফার একটি অংশ বিনিয়োগকারী পেয়ে থাকেন। পরোক্ষ বিনিয়োগে মূলত তিন ধরনের বিনিয়োগ পণ্য ব্যবহার করা হয়।
২/ ঋণ পণ্য
এখন কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এই শর্ত গ্রহণ করে যে একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে ওই অর্থের ওপর নির্ধারিত হারে মুনাফা প্রদান করবে এবং মেয়াদ শেষে মুনাফা ও আসল পরিষদে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকবে তখন তাকে ঋণ পণ্য বলা হয়। এই ধরনের স্থানে বিনিয়োগকারী কোন রকমের ঝুঁকি গ্রহণ করেন না। ব্যাংকের মেয়াদী আমানত, সরকারি সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি ঋণ পণ্যের উদাহরণ।
৩/ মূলধনী পণ্য
স্টক এক্সচেঞ্জ নিবন্ধিত কোন কোম্পানির শেয়ার হল ইকুইটি ইন্সট্রুমেন্ট বা মূলধনী পণ্য । বিনিয়োগে কোম্পানির লভ্যাংশ প্রাপ্তির পাশাপাশি ঝুকিও বহন করতে হয়। প্রতিবছর লভ্যাংশ প্রাপ্তি নিশ্চিত নয় । তবে সময়ের সাথে সাথে ইকুইটি ইন্সট্রুমেন্ট বা মূলধনী পণ্যের বাজার মূল্য পরিবর্তন হয়।
৪/ এরপর আমরা আসছি ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায় মূলধনী বিনিয়োগ
যখন কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগও বিশ্বাসের ভিত্তিতে ব্যবসায় অর্থ লগ্নী বা বিনিয়োগ করা হয় তখন তাকে ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায় মূলধনী বিনিয়োগ বা প্রাইভেট ইকুইটি বলা হয় এ ধরনের বিনিয়োগে মুনাফা সম্পূর্ণভাবে বিনিয়োগের চুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং একটি চুক্তির সঙ্গে আরেকটি চুক্তির মিল থাকে না। এ ধরনের বিনিয়োগ বিপক্ষীয় হয় ফলে বিদ্যমান ঝুঁকি পরিমাণ অনেক বেশি।
*** এছাড়াও আরো অনেক রকমের বিনিয়োগ করা যায় অন্যতম হলো স্থাবর সম্পদে বিনিয়োগ যেমন স্বর্ণ জমি ফ্ল্যাট পণ্য ইত্যাদি।। এ ধরনের বিনিয়োগে সার্বিকভাবে নিজের অনুমান ও বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করতে হয় এবং বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে সজাগ থাকতে হয় আবার এ ধরনের বিনিয়োগের আগে আসল নকল ভালো-মন্দ যাচাই করতে হয়। তাই দ্রব্য বা পণ্য নিয়ে ব্যবসা করার আগে এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা অর্জন করতে হবে অন্যের কথার উপর নির্ভর করে এ ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ
আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার বিনিয়োগ ঝুঁকি গ্রহণের সক্ষমতা কতটুকু?
প্রথমত যদি আপনার বয়স কম হয় এবং বিনিয়োগকৃত অর্থ আপনার শেষ সম্বল না হয় তাহলে আপনি ঝুকি গ্রহণ করতে পারেন। আর বিনিয়োগকৃত অর্থ যদি আপনার শেষ সম্বল হয় তাহলে আপনার ঝুকি গ্রহণ না করাই ভালো।
ধন্যবাদ সবাইকে এবং এই পোস্টটি পড়ার পর অবশ্যই সম্পর্কে একটি কমেন্ট করবেন। কমেন্ট পড়ার মাধ্যমে আমি আমার ভুলগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করব। সবাইকে আবারো ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।