ঘড়ির কাঁটা ১২টা, বাজতে চলেছে,
অপেক্ষা করতে করতে শান্ত কেমন জানি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। পাখি সেতো এত দেরি করে না। ক্লাস শেষ। তাহলে এত দেরি করছে কেন মেয়েটা। তাছাড়া রোদ্রের তাপমাত্রা আজ একটু বেশি। কপালটা একদম ঘেমে গেছে। শান্ত পকেট থেকে টিস্যু পেপার দিয়ে বের করে মাথার ঘাম মুছতে লাগল। এবার ফোনটা হাতে নিল সে। ফোন করতে লাগলো পাখিকে। কিন্তু মেয়েটা ফোনটা রিসিভ করছে না। শান্তকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। হঠাৎ পিছন থেকে কারো ডাকে অভিমানটা ভাঙ্গন রূপ নিল। শান্ত খান ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।
শান্ত: ফোনটা তো রিসিভ করতে পারতে?
এতক্ষণে তোমার আসার সময় হল। আসলে তুমি আমার প্রতি সিরিয়াস না। আমি যতটা তোমাকে গুরুত্ব দেই তুমি ঠিক তার উল্টো। তোমরা সব মেয়েরাই একই রকম।
পাখি এবার মুচকি হাসি দিয়ে উঠল, লাজুক লাজুক ভাষাতে সে শান্তকে গাছের নিচে গিয়ে বসতে বলল।
পাখি: তোমার মাথা আসলেই গরম হয়ে গিয়েছে’সনু রিকশা পাচ্ছিলাম না/তাই আসতে একটু দেরি হল/তা তোমার কথা বল।
শান্ত: আমার আবার কি কথা থাকতে পারে? প্রতিদিন একই কথা বলতে বলতে আর ভালো লাগেনা!
পাখি: শান্ত তুমি কিন্তু খুব ভালো করেই জানো আমার ন্যাকামি একদম ভালো লাগেনা। তোমার চাকরি-বাকরির কী খবর? হবে নাকি হবে না! সারাজীবন কি বেকারি থাকবা? শান্ত: পশুপাখি তুমি আবার শুরু করলে’আসলে তুমি আমার প্রতি খুব বাজে ধারণা রাখ/বিশ্বাস বুঝলে সবকিছুই বিশ্বাস বিশ্বাস থাকলে সব কিছুই হয়। আর সেই বিশ্বাসটা না থাকলে কোন কিছুই হয় না।
পাখি: শোনো বাড়ি থেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে; কোন বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দেবে না আমায়!
শান্ত: না_বাবা, এটা আবার তুমি কি বললে? পাখি: সবাই যা বলে, আমিও তাই বললাম বলেই সে খকখক করে হাসতে লাগলো।
শান্ত: আচ্ছা আপা কি জানো? তুমি হাসলে, আমার খুব খুব বেশি ভালো লাগে।
পাখি: কেন?
শান্ত: তখন তোমার ডানপাশের মাড়িতে কালো দাদ টা স্পষ্ট ফুটে ওঠে।
পাখি: শান্ত ,আমি কিন্তু খুব রাগ করছি।
শান্ত: ওকে ওকে আর বলবো না/সরি!
পাখি জানো, তুমি রাগলে মনে হয় আকাশে মেঘ করেছে। ঘন কালো কালো মেঘে ঢেকে গেছে আকাশ। মনে হয় এই বুঝি ঝমঝম করে বৃষ্টি নামবে। ভিজিয়ে দেবে আমার পুরো পৃথিবী। তবুও আমার কেমন জানি, সেই বৃষ্টিটাকে খুব আপন করে নিতে ইচ্ছা করে।
পাখি: ও’তাই বুঝি? তোমার ভিতরেও কবি কবি ভাব দেখছি, তা শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে, কাজকর্ম কিছু করতে হবে না?
চলো এখন উঠা যায়, দুপুর হয়ে গেছে। বাসায় যেতে হবে না। দেরি হলে মা বকবে।
শান্ত শুকনো গলায়, রিক্সা নিয়ে যাবে? নাকি কোলে করে নিয়ে যাব।
পাখি: শোনো আমি পঙ্গু 9332 নয় যেজন্যই যে আমাকে তোমার কোলে করে নিয়ে যেতে হবে। আমি একাই চলে যেতে পারবো। আর শোনো খুব তাড়াতাড়ি একটি চাকরি ঠিক করো। নইলে তোমার সারাজীবন রবীন্দ্র সংগীত শুনতে হবে! ভালো থেকো কাল দেখা হবে।
শান্ত কোন কথা বাড়ালো না। সে চলে যাবার রাস্তাটির দিকে চেয়ে রইল।
পাখি, মেয়েটা খুব চঞ্চল একটি মেয়ে।খুব বেশি সুন্দর না হলেও ছিমছাম তার দৈহিক গড়ন। শান্তকে সে মুগ্ধ করে রেখেছে। আজ অনেকদিন হলো দুজন দুজনার পরিচিত। পরিচয় থেকে প্রনয়ের দিকে তারা খুব তাড়াতাড়ি এগিয়েছে। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব একটু একটু ভাল লাগা, তারপর জন্ম নিয়েছে একটু একটু ভালোবাসা। শান্ত ঠিক কতক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল যতক্ষণ তাকে দেখা যায়,। তারপর একটা সময় রিকশা দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল।
মেয়েটা যতক্ষণ তার পাশে থাকে পৃথিবীর সব কিছু সে কেমন করে যেন ভুলে যায়। একটু পরেই তার সবকিছু মনে আসে। মামার বাসায় যেতে হবে। কি যেন একটা কাজে মামা ডেকেছে, অবশ্যই তাকে যেতে হবে। মনে হতেই শান্ত রওনা হল মামার বাসার দিকে।
শান্তর মামা একজন বিশিষ্ট উকিল। শহরে খুব নামডাক তার। মাঝে মাঝে শান্তকে কি সব কাজ দেয়। সান্তনা বুঝি এসব কাজগুলো করে যায়। আর বিশেষ কোন কাজ হলেই, শান্ত ছুটে যায় মামার বাসায়।
পাখি মেয়েটি একই শহরের বাসিন্দা।
শান্তর মামার বাসার ঠিক পরের গলিতেই পাখিদের বাসা। পাখির বাবা একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। শহরে তিনটে জুয়েলারি দোকান আছে ওদের। একদম সচ্ছল পরিবার। ব্যবসায়ী মানুষ হিসেবে পাখির বাবা খুব সচেতন। মেয়ের জন্য তার সুপ্রতিষ্ঠিত জামাই দরকার। এক কথার মানুষ বেচারা। কিন্তু একটু রাগী হলেও মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসে। পাখিতা ভালোভাবেই বোঝে। বিষয়টি পাখি তার বাবার দুর্বলতা হিসেবে বিবেচনা করে।
দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেল,
শান্তর মামা রফিক সাহেব শান্তকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলেন। কি কি করতে হবে। শান্ত সবকিছু বিশ্বাসের সাথে কি করে। মামা খুব একটা বেশি চিন্তা করেন না কাজের বিষয়।এই জন্যই সে যখনই কোনো কাজ এসে পড়ে সে নির্দ্বিধায় শান্তকে দিয়েই সেগুলো করায়।
মামার সেইগুলো সে কাজগুলো শেষ করতে সাতদিনের জন্য অন্য শহরে থাকতে হবে তাকে।আর এই জন্যই হয়তো এ কদিন পাখিরসাথ এসে যোগাযোগ করতে পারেনি। সম্ভব হয়নি বিষয়টি সিরিয়াস ছিল। সব সময় ফোন বন্ধ করে রাখতে হয়েছিল তাকে। তাই কোন প্রকার যোগাযোগ এই কদিন তাদের ভিতর হয়নি। সপ্তাহখানেক পরে শান্ত ফিরে এলো।
আজ অনেকদিন পর শান্ত ফোনটা রিসিভ করল। ফোনের ও প্রান্ত থেকে,
পাখি: কি ব্যাপার তোমার, তুমি কি ঈদের চাঁদ হয়ে গেলে সাহেব? কয়েকদিন হয়ে গেল তোমার কোন খবর নেই. ফোনটা তো একবার রিসিভ করতে পারতে/ছাড়া তোমার ফোনটা অনেকবার বন্ধ পেলাম/তুমি কি আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারো? এতদিন তুমি কই ছিলা?
শান্ত: সে অনেক কথা। বিকেলে একটু বটতলায় আসতে পারবে? সব কথা বলবো তোমাকে।
পাখি: কিছুক্ষণ নীরব থাকবার পরে; ওকে।
বাড়িতে তেমন কেউ নেই শান্তর। শুধু পৃথিবীতে একমাত্র মা আছেন তার। বাবা বছর পাঁচেক আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তবে একমাত্র ছেলের জন্য রেখে গেছেন শুধু পাঁচ তলা একটি বাড়ি। বেশ বড়সড় বাড়ি। 1tala তে মা-ছেলে থাকেন। আরন্য তলাগুলো ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। ভারত টাকা দিয়েই তাদের সংসারটা চলে। যে খারাপ চলে তা নয় বেশ ভালোভাবেই চলে তারা। ছোট্ট সংসার। তবুও তারা খুব সুখী।
মা: মা হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন কিরে শান্ত কোথায় যাচ্ছিস?
প্রতিউত্তরে তেমন কোথাও না।
মা: পাখি কি আজ আসবে রে?
শান্ত: তুমি যে কি বল না মা/আসবে না কেন বল?
আমি জানি ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।
মা: তবুও একটু ভাবনা হয়, দেখিস বাবা”পাখি যেন আবার উড়াল দিয়ে চলে না যায়। সে তোমার ভাবতে হবে না মা!
খাঁচার পাখি খাঁচায় থাকতে চায় না, ও যে আমার বড় পোষা পাখি মা,। খুবই যত্ন করে রেখেছি। উড়াল দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।
আজ খুব ফুরফুরে মেজাজে আছে শান্ত। গোসল সেরে, পেট ভরে খেয়ে বিছানায় গড়াগড়ি করছে সে। কিছুক্ষণ পর ওয়ারড্রব খুলে, নীল কালারের টিশার্ট বের করল সে।
কালার টা খুব পছন্দ পাখির। তাই এই শার্টটা পড়ে যাবার কথাই ভাবল সে। এ কাজের জন্য সে অবশ্য কি গিফট নিয়ে এসেছে। যাবার সময় গিফটি সাথে করে নিয়ে গেল সে। রিক্সা খেতে একটু দেরি হয়ে যাওয়ায়, শান্তর পৌঁছাতে একটু লেট হল। দূরে থেকেই সে বুঝতে পারল পাখি নিশ্চয়ই খুব রাগ করে আছে।অবশ্য রেগেমেগে আগুন হবার অবস্থাটা এসে তৈরি করেছে। তবুও সাহস করে এগিয়ে যায় শান্ত।
কেমন আছো?
কথার কোন উত্তর পাওয়া যায় না, শান্ত পাখির ঠিক ডান পাশে বসে পরল। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই তার দিকে ফিরে তাকাতে চাইছে না। কিছুক্ষণ এভাবে বসে রইল তারা। একটু পর দুজন দুজনার মুখের দিকে চেয়ে রইল! । কেউ কোনো কথা বলছে না।শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল দুজন দুজনার দিকে।
একটু পর স্বর ভাঙ্গা কন্ঠে পাখি,
শান্তর হাতের সেই গিফট প্যাকেট দেখে, প্রশ্ন করল, ওটা কি?
শান্ত: গিফট/শান্ত খুব আস্তে জবাবটি দিল/তোমার জন্য এনেছি!
পাখি: কি আছে এতে?
শান্ত: খুলে দেখো!
নীল প্যাঁকেটে মোড়ানো গিফটটা পাখি আর খুলে দেখল না। সে বলল বাসায় গিয়ে খুলে দেখব।
এখন বলো এতদিন তুমি কি করলে,?
ফোনটা বন্ধ ছিল তোমার। কোথায় ছিলেন আপনি?
শান্ত: সে অনেক কথা/একটি সিক্রেট কাজে গিয়েছিলাম। আমার কাজ নয় মামার কাজে। বোঝোই তো ওকালতি প্যাচের ব্যাপার। আর সেই কাজগুলো একটু গোপনে করতে হয়। যাক সেসব কথা বাদ দাও। তোমার কথা বল। একদম পাল্টে গেছে দেখছি,,,
আমিতো খেয়ালই করিনি তুমি অনেক পাল্টে গেছো পাখি। আগের চেয়ে তোমাকে এখন আরো বেশি সুন্দর লাগছে। কথাগুলো বলতে বলতে হেসে ফেলল শান্ত।
: পাখি: আচ্ছা এভাবে আর কতদিন চলবে শান্ত? শান্ত কথাটির দিকে তেমন গুরুত্ব দিলো না/আমাদের এভাবে লুকোচুরি খেলা গুলো আর কতদিন,? ওদিকে বাবা আমার জন্য পাত্র খুঁজছে। আমার বড় ভয় হয় শান্ত”/কখন যে তোমাকে হারিয়ে ফেলি। কথাগুলো বলতে বলতে পাখির দুচোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা সস্তা পানি বেরিয়ে এলো। কম্পসে পানিগুলো গড়িয়ে টপটপ করে পড়তে লাগলো। শান্ত পাখির চোখের পানিগুলো মুছতে লাগল। আস্তে আস্তে সে জিজ্ঞেস করল?
তুমি কি কিছু খাবে?
পাখি: কোন কিছুই বলল না,
শান্ত: বুঝেছি কিছু খাবে.
পাখি: কি করে বুঝতে পারলে?
শান্ত: তোমার ন্যাকা কান্না দেখে!
পাখি: তুমি কোনদিনও কোন জিনিস সিরিয়াসলি নাওনা. যেদিন আমাকে পাবেনা সেদিন বুঝতে পারবে। কিছুতেই তোমার একদম হেয়ালিপনা।
চলো আর বসবো না, এখন উঠ। শান্ত বলল ,দাঁড়াও একটু বস আমি আইসক্রিম নিয়ে আসি।
পাখি: এতকিছু থাকতে আইসক্রিম নিয়ে আসবে কেন?
শান্ত: তোমার মাথাটা ঠান্ডা করব তাই! বলেই সে হো হো করে হেসে উঠলো।
কিছুক্ষণ পর একটি রিকশা দাঁড় করালো,
পাখি রিকশায় উঠে বসলো,
তুমি যাবে শান্ত?
না তুমি যাও,
পাখি: তাহলে তুমি কি করবে এখানে?
শান্ত: আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো তোমার এই চলে যাওয়ার দৃশ্য!
পাখি: তাই বুঝি!
ওকে তুমি তাহলে দেখতে থাকো।
রিক্সা চলতে শুরু করলো, সত্যি সত্যি শান্ত দাঁড়িয়ে রইলো মূর্তির মত। কিছুদুর যাবার পর সেটি পাখি ও বুঝতে পারল। ছেলেটা একদম পাগল! কখনো সে পাল্টাবে না’। শান্তর মনটা সবসময় পাগলামি তেই ভরে থাকে। সেকথা পাখির চাইতে ভালো জানার কথা আর কারো নয়।
বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল পাখির। বাসায় ঢুকতেই ছোট খালা মনি কাছে এসে মাথায় হাত বুলাতে লাগল। একি আমাদের পাখি এত বড় হয়ে গেছে! আমিতো অবাক হয়ে যাচ্ছি/সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম রে তোকে। তা তুই কোথা থেকে এলি মা এখন? ওখালা মনে একটু বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলাম/একা একা বাড়িতে ভালো লাগেনা।
পাখি: তুমি তো জানো খালা, মা মারা যাবার পর আমি একদম একা/তুমিও চলে গেলে দেশের বাইরে/ও কথা আর বলিস না রে মা!
তোর কথা সব সময় দুলাভাইয়ের সাথে আলাপ হয়। এবার আর যাব না দেশেই থেকে যাব।
পাখি: তাহলে তো খুবই ভালো কথা খালামণি। তুমি দেশে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হব আমি। আমার যে কি ভালো লাগছে সেটা তোমাকে আমি বুঝাতে পারব না।
সবুজ ভাইয়া কে দেখছি না যে খালামণি?
খালা: ওতো আসতে পারিনি যে মা/আগামী মাসে আসবে বলেছে! তোর জন্য একটা গিফট পাঠিয়েছে!
গিফটের কথা শুনেই পাখির শান্তর কথা মনে পড়ে গেল। একই দিনে দু দুটো গিফট। ভাবতেই পাখির মনের ভিতর অজানা এক উৎসবমুখর পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। শান্ত যে গিফটটি দিয়েছ সেটি নীল প্যাঁকেটে মোড়ানো।আসবার সময় সেটি মনে করে নিয়ে এসেছে কিনা সেটি দেখার জন্য সে বারবার ব্যাগে হাত বুলাচ্ছিল। শান্তর পাগলামিতে সে ভুলেই যেতে বসেছিল। ভাগ্যিস খালামণি মনে করিয়ে দিল। খালামণি বিশাল একটি প্যাকেট পাখির হাতে দিল।”এই নে তোর জন্য পাঠিয়েছে! ঘরে নিয়ে খুলিস/ঠিক আছে তুমি ফ্রেশ হও অনেক গল্প করব আমরা।
রাত্রি এখন অনেক গভীর। সবাই ঘুমের রাজ্যে চলে গেলেও ঘুম নেই শুধু পাখির চোখে। বিছানার ওপর গিফটের দু-দুটো বক্স। কোনটি সে আগে খুলে দেখবে সেটা নিয়ে সে ভাবছে। অবশেষে সবুজ ভাইয়ের পাঠানো বক্সটি হাতে নিল পাখি। বক্সটি খুব বড়। একটানে বক্সটি খুলে ফেললো সে, বক্সটি খুলেই সে অবাক হয়ে গেল! বক্সের ভিতরে দামি এক্সেপ্ট ডায়মন্ডের গয়না!
বড় অদ্ভুত সেই গয়নার সৌন্দর্য। চোখ মেলে তাকাতেই চকচক করে উঠলো গয়নাগুলো। পাখি নেড়েচেড়ে দেখে গয়নাগুলো। ভারি সুন্দর তো! সবুজ ভাইয়ের পছন্দ আছে। কিছুক্ষণ ভাবনার গভীরতা এসে চলে গেল। তারপর হঠাৎ চোখে পড়ল শান্তর দেওয়া নীল বক্সটির উপর। বক্সটি খুব হালকা, বলতে গেলে একদমই হালকা। বক্সের প্যাকেটটি হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলো পাখি। মনে মনে অনেক কৌতুহল তার। কি হতে পারে? তারপর আস্তে আস্তে অনেক যত্ন নিয়ে সে প্যাকেটটি খুলতে লাগল। বক্সের ভিতরে বিশেষ কিছু নেই। শুধু একটি নীল খাম। খামটি খোলার পর দেখা গেল হলুদ কাগজে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা একটি চিঠি। চিঠিটি পেয়ে খুব অবাক হয়ে গেল সে। চিঠিটি কে বারবার সে হাত বুলাতে লাগলো। এখন পাখির কৌতূহল আরো বেড়ে গেল। সে আর অপেক্ষা করতে পারল না। এবার সে জানালার কাছে গিয়ে চিঠিটি পড়তে লাগলো। অবশ্য চিঠি পড়ার আগে একবার মনে হল ওকে একবার ফোন করা দরকার। আবার মনে হলো না পরে ফোন দিবো। চিঠিটির প্রথম দিকেই খুব সহজ ভাষায় খুব সহজ কিছু লেখা রয়েছে, সর্বপ্রথম থেকে শুরু করলো সে।
শান্ত লিখেছে, চিঠিটি যখন তুমি পড়বে তখন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে,
হয়তো আর কোনদিন তোমার সাথে দেখা হবে কিনা জানিনা,
তবে তুমি সব সময় আমার মনের ভিতরই থাকবে,
তুমি ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করাও যে পাপ।
এতোটুকু লেখা পড়তে পাখির মনের ভিতর একটু মোচড় দিয়ে উঠলো!
হাত পা গুলো কেমন জানি ঠান্ডা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
তবুও বড় বড় চোখে সে চিঠির দিকেই তাকিয়ে আছে,
তারপর,,,,,, জানি তুমি অনেক শান্ত ও বুদ্ধিমতী একটি মেয়ে। তুমি নিজেকে ঠিকই সামলিয়ে নিতে পারবে। জানো তোমায় নিয়ে আমার স্বপ্ন আর আশা আমার জীবনের চেয়েও বিশাল ছিল, যদি বিধাতা আমায় স্পেশাল কোন ক্ষমতা দিতেন,তাহলে আমার স্পেশাল ক্ষমতা দিয়ে আমি আমার পাখিকে নিয়ে আকাশের মেঘের উপর বাসা বানিয়ে সেখানে সংসার সাজিয়ে নিতাম। মেঘের সেই বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে, তুমি মেঘের খেলা দেখতে, কখনো বা সাদা কখনো বা কালো কালো মেঘ। কখনো কখনো মেঘের বিশুদ্ধ বৃষ্টিতে তুমি ভিজে যেতে।
আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতাম,
তোমার সেই অপরূপ দৃশ্য,
তুমি আমাকে শাসাতে আর আমি প্রান খুলে হাস তাম।
কখনো কখনো বয়ে আসছে দমকা হাওয়া,
সেই হাওয়ায় উড়ে যেত তোমার চুল,
আমি চুলগুলো সরিয়ে দিতাম আমার নিজ হাতে,
কিন্তু জানো কি পাখি?
স্বপ্ন সে তো স্বপ্নই হয়। বাস্তবতার নিষ্ঠুর ভাগ্যের লিখনে, কিছু ভালোবাসার শেষ পরিনতি এমনই হয়।
সবই ভাগ্যের লিখন, কারো কোন কিছুই করার নেই।জানো এই সাত দিন কতবার নিজের শরীরের পরীক্ষা করিয়েছি।
সব ডাক্তারি বলেছে, আমি ক্যান্সার পজিটিভ। আইউ হয়তো ক্ষণিকের কিছুকাল মাত্র। তাই তোমাকে ঠকানো আমার কাছে পাপ ছাড়া আর কিছু নয়। তাইতো পলায়নের এই পথই আমার কাছে সঠিক বলে মনে হল।আমি জানি চিঠিটা পড়ার শেষ হলে তুমি আমাকে ফোন করার বৃথা চেষ্টা করবে।
হয়তো বা প্রয়োজন মনে নাও হতে পারে,
একটিমাত্র শুধু শেষ ইচ্ছা আমার, শেষ চাইবার আছে তোমার কাছে,
কখনো অভিশাপ দিও না।
ভালো থেকো সুখে থেকো,
আমি ঠিকই দুরে বহু দূর থেকে দেখব তোমার সেই সুখে থাকবার দৃশ্য,,
সেই রাত্রিবেলার পাখি একবার নয় হাজারবার ফোন করেছিল শান্তর কাছে। কিন্তু নিয়তি ও ভাগ্যের পরিহাস’ এর কাছে সেই ফোন কল কখনো পৌঁছাতে পারেনি। পাখি আর কোনোদিনই শান্তর কোনো খোঁজ পায়নি। হয়তো শান্ত পৌঁছে গেছে, তার যেখানে পৌঁছাবার কথা। পাখি ও হয়তো নিয়তির কাছে হার মেনে নিয়েছে, নিজের অজান্তেই। হয়তো পাখির মনের ভিতরে এখনো জ্বলছে ,সেই একটু একটু আশা আর বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা। “
মমিন সাগর”