একটি সত্য অদ্ভুতুড়ে ঘটনা

আমার বাবার বয়স তখন ও অনেক কম। সে প্রাইমারি স্কুলে যাওয়া কেবল শুরু করেছিল। তার গ্রামে তার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। বাবা অনেকটাই মিশুক ছিল। কিন্তু সে ছিল একটু ভীতু। অন্যদিকে তার বন্ধু ছিল চঞ্চল, সাহসী কিন্তু সে সবার সাথে মিশতে চাইতো না। তাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব ছিল অনেক গভীর। কেউ কোন কাজ করার সময় একজন আরেকজনকে অবশ্যই নিয়ে কাজটি করার চেষ্টা করত। কেউ কাউকে একলা ফেলে চলে যেত না।

আমার বাবার পরিবার ছিল একটি কৃষক পরিবার। দাদার বেশ ভালো জমিজমা ছিল। আগের সময়ে জমিজমা থাকলেই মানুষের জীবন যে কষ্ট কম হতো না এমন নয়। আমার বাবার পরিবারের সদস্য ছিল নয় জন। বাবা ছিলেন দাদার দ্বিতীয় সন্তান। পরিবারের কাজ অনেকটা বাবার হাতেই ন্যস্ত থাকতো। অনেক কষ্টে বাবা পড়ালেখা করতেন। দাদা বাবাকে দিয়ে পড়ালেখা করানোর চাইতে খেতে কাজ করাতেই বেশি পছন্দ করত। অন্যদিকে বাবার বন্ধুর অবস্থা ছিল আরো শোচনীয়। তার পরিবার গরিব হওয়ায় তাকে ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার চিন্তা বাদ দিতে হয়।

গ্রামে কৃষি জমিতে সেচ কাজের জন্য যে মেশিন ব্যবহার করা হতো বাবার বন্ধু সেই মেশিন চালানোর এবং পাহারা দেওয়ার কাজ করতো। সেই সময়ে মেশিন চুরি হওয়ার ঘটনা খুবই সাধারন একটা ঘটনা ছিল। চোররা বেশিরভাগ সময়ই সেচ কাজে ব্যবহৃত মটর চুরি করে নিয়ে যেত। আমার বাবার বন্ধু এই ঘটনার কারণে বেশ চিন্তিত ছিল। বেশ কয়েকবার সে মেশিনটি বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিল চুরি হওয়ার হাত থেকে। কিন্তু প্রতিদিন রাত জেগে মেশিন পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। আর সেও ছিল বয়সে ছোট। যদি কোন চোর এসে তাকে মেরে মেশিনটি নিয়ে যায় তখন তার করার কিছুই থাকবে না।

আমার বাবা এবং তার বন্ধু মিলে এই বিষয়ে পরামর্শ করছিল যে কিভাবে এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়। একদিন রাতে আমার বাবা এবং তার বন্ধু মিলে রাস্তায় হাঁটতে বের হলো। আমার বাবা আর তার বন্ধু গল্প করতে করতে সেই মেশিন ঘরের দিকে গেল। মেশিন ঘরের সামনে ছিল একটি কবরস্থান, পাশেও ছিল একটি কবরস্থান । আর তার সামনে ছিল একটি বিশাল বাঁশ বাগান। মেশিন ঘরটি ছিল তিন রাস্তার মোড়ে। গ্রামের মাটির রাস্তা তিনটি মিলিত হয়েছিল ঠিক মেশিনঘরটির সামনে। বাগানের সেই রাস্তাটি ধরে একটি বৃদ্ধ আমার বাবা আর তার বন্ধুর সামনে এগিয়ে আসছিল।

আমার বাবা ভয় পেলেও বাবার বন্ধু তেমন একটা ভয় পায়নি। বাবার বন্ধু কিছু না বলেই বৃদ্ধটির দিকে এগিয়ে গেল। বাবাও তার পিছু নিল। বৃদ্ধ লোকটির কাছে যাওয়ার পর লোকটি বাবার বন্ধুকে বলল, তুমি কি এই মেশিন ঘরের পাহারাদার? সে বলল, হ্যাঁ, আমি এই মেশিনঘর পাহারা দেই। বৃদ্ধটি তখন তাকে বলল, তোমার সমস্যা আমি সমাধান করতে পারবো যদি তুমি আমার কাজ করে দাও। আমার বাবা অবাক হয়ে গেল যে এই লোকটি কিভাবে জানতে পারলো যে আমরা সমস্যার মধ্যে আছি। আর এই লোকটি যে এই গ্রামের না তা তারা প্রথমেই দেখে বুঝতে পেরেছে।

আমার বাবার বন্ধু কোন কথা না বাড়িয়ে তাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করল, কি করতে হবে? লোকটি তখন বলল তোমাদের গ্রামের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় থেকে আমাকে কয়েকটি জিনিস এনে দিতে হবে। আমি ঠিক যেভাবে বলল সেভাবে তোমার কাজগুলো করতে হবে। তবেই আমি তোমার সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবো। আমার বাবার বন্ধু রাজি হয়ে গেল। লোকটি তাকে জায়গা গুলোর কথা বলে দিল। আমার বাবা ও তার বন্ধুকে ছাড়ার জন্য প্রস্তুত নয়।

তাই দুজনে রাতের অন্ধকারে একসাথে গেল জিনিসগুলো আনার জন্য। মোট তিনটি জায়গার কথা বলা ছিল। তিনটে জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন জিনিস থাকবে। প্রথম জায়গায় পাওয়া গেল কয়েকটি পাখির পালক, দ্বিতীয় জায়গায় পাওয়া গেল একটি প্রাণীর চামড়া, সেটা দেখে কেউ বুঝতে পারল না যে সেটা কিসের চামড়া ছিল। শেষ জায়গায় গিয়ে তারা একটি প্রাণীর মাথার খুলি পেল। মনে হচ্ছিল খুলিটি বিড়ালের মাথা অথবা ওই জাতীয় কোন ছোট প্রাণীর।

কোন সময়ই আমার বাবা জিনিস গুলো তে হাত দেয় নি। বাবার বন্ধুই সবগুলো জিনিস সংগ্রহ করেছিল। খুলিতে নেওয়ার সময় সে একটা বিশ্রী গন্ধ পেয়েছিল। তারা দুজনই জিনিসগুলো নিয়ে ওই বৃদ্ধ লোকের কাছে হাজির হলো। লোকটি আবার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করল তুমি কি এই তিনটি জিনিস আনার সময় কোন বিশ্রী গন্ধ পেয়েছিলে? উত্তরে সে বলল হ্যাঁ আমি পেয়েছিলাম। তখন লোকটি বলল সমস্যা নেই, জিনিস গুলো আমার হাতে দাও।

লোকটি জিনিসগুলো নিয়ে তাকে একটি থলে দিল এবং বলল এটিকে নিয়ে মেশিন ঘরের মাটিতে পুঁতে রাখতে। আর তাকে বলল তোমার ওই গন্ধ পাওয়ার কারণে তুমি কখনো মোটা হবে না। এই বলে লোকটি সেই স্থান থেকে চলে গেল। আমার বাবা আর তার বন্ধু মিলে সেই দেওয়া কাপড়ের থলেটি মেশিন ঘরের মাটির নিচে পুঁতে রাখলো। তারপর থেকে সেখানে চুরি হওয়ার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আজ আমার বাবা অনেক বয়স্ক। কিন্তু তার বন্ধুকে দেখলে এখনো বেশ কম বয়সি মনে হয় এবং সে এখন পর্যন্ত মোটা হয়নি।

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন