গ্রাম হলো একটি ছোট গুষ্ঠি অথবা কতগুলো বাড়ির সমষ্টি।নির্দিষ্ট এলাকার নির্দিষ্ট আয়তনের মধ্যে গ্রামের অবস্থান হওয়ায় গ্রামে বসবাসকারী সকলে সকলকে চেনে।গ্রামে কিছু ঘটলে মুহূর্তেই গ্রামের সকলে সেটা সম্পর্কে অবহিত হতে পারে।গ্রামবাসীর মুখে মুখেই তা গ্রামের সর্বত্র প্রচার হয়ে যায়।গ্রামের যেকারো সমস্যায় যেকেও সহজেই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে পারে।বিশ্বগ্রাম হলো প্রযুক্তি নির্ভর এমন একটি বিশ্ব যেখানে বিশ্বের সব দেশ সব জাতি একটি গ্রামের মতো সুবিধা পায়।প্রতিটি দেশে ই গ্রামের অস্তিত্ব রয়েছে।কয়েকটি গ্রামের সমন্বয়ে শহর,কতগুলো শহরের সমন্বয়ে জেলা আর কতগুলো জেলার সমন্বয়ে জেলা গড়ে উঠে দেশ।আর অসংখ্য দেশের সম্মিলনে বিশ্ব।বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের সব দেশের সকল মানুষ একটি গ্রামের মতো পরস্পরের পাশাপাশি অবস্থান করে একে অপরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য, সহযোগিতা করছে।তাছাড়া প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের পরিধি আজ ছোট হয়ে এসেছে। এই বৃহৎ প্রেক্ষাপটে সে হিসেব অনুযায়ী সারা বিশ্ব একটি একক গ্রামে পরিনত হয়েছে। বিশ্বগ্রাম বলতে এমন একটি ধারণাকে বুঝানো হয় যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সহজেই পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।ইন্টারনেট, কম্পিউটার, গণমাধ্যম ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে সহজে ই। বিভিন্ন প্রযুক্তি মানুষকে এতটাই কাছে নিয়ে এসেছে তারা যে পরস্পর থেকে৷ অনেক দূরে অবস্থিত তা মনে ই হয় না।ইন্টারনেট, কম্পিউটার বিশ্বের মানুষের মাঝের ব্যবধান কমিয়ে দিয়েছে।বিশ্বগ্রামের ফলে বিশ্বের একপ্রান্তের মানুষ অন্যপ্রান্তের মানুষের উপর বিভিন্ন বিষয়ে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রবক্তা হলেন কানাডিয়ান দার্শনিক ও লেখক হারবার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান। তিনি ১৯৬২ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে প্রথম বিশ্বগ্রাম শব্দটি উল্লেখ করেন।তিনি তার বইয়ে বর্ণনা করেন কিভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি ও তথ্যের বিচরণ দ্বারা বিশ্ব একটি গ্রামে রূপ লাভ করেছে।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন এখন বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
বিশ্বগ্রামের সংজ্ঞাঃ “বিশ্বগ্রাম এমন একটি ধারণা যেখানে মানুষ সহজ যাতায়াত,গণমাধ্যমের দ্বারা পরস্পরের সাথে যুক্ত এবং মনে হয় যেনো সবাই সবার পাশাপাশি অবস্থান করে।”
বিশ্বগ্রামের সুবিধাসমূহঃ
১. মুহুর্তের মধ্যে বিশ্বের যেকোনো দেশের যেকোনো মানুষের সাথে যোগাযোগ করা যায়
২. ভৌগোলিক দূরত্ব কমে যায়।
৩. ব্যবস্থাপনা খরচ কমে।
৪. অনলাইনে যেকোনো লাইব্রেরি থেকে যত ইচ্ছে বই পড়া যায় এবং ঘরে বসেই নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা লাভ করা যায়।
৫. বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
৬. ঘরে বসে ই ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায়।
৭. ঘরে বসেই বাইরের দেশের বিভিন্ন কাজ করে অর্থ উপার্জন করা যায়।
প্রত্যেকটা বস্তুর যেমন কিছু সুবিধা থাকে তেমনি কিছু অসুবিধাও থাকে।চল এবার এই বিশ্বগ্রামের কিছু অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
বিশ্বগ্রামের অসুবিধাসমূহঃ
১. ইন্টারনেট হ্যাকিং করে তথ্য চুরি হয় এবং তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গ হয়।
২. জনগণ কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে ই ভুল ধারনা নিয়ে বসে থাকে।
৩. ভার্চুয়াল জগতে বেশি সময় ব্যয় করার ফলে সত্তিকার বন্ধুর চেয়ে ভার্চুয়াল বন্ধুর সংখ্যা বাড়ে।ফলে মানুষের মাঝে দূরত্ব বাড়ে।এবং মানুষ বাস্তব জীবনের চেয়ে ভার্চুয়াল জগতের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ে যার৷ ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
৪. সাইবার আক্রমণ সংঘটিত হয়।
৫. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরি হতে পারে।
৬. পর্নোগ্রাফির ফলে সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি হয়।
৭. সহজে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ফলে একটি দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির বিলুপ্তি ঘটে।
৮. প্রযুক্তির বেশি ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
৯. বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বগ্রামের উপাদানগুলো হলোঃ হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ইন্টারনেট সংযুক্ততা,উপাত্ত ও মানুষের জ্ঞান ইত্যাদি।
আবার বিশ্বগ্রাম ধারণার সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদানগুলো হলোঃ যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা,চিকিৎসা সেবা,গবেষণা, অফিস, বাসস্থান,, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংবাদ, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ, ও সাংস্কৃতিক বিনিময়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের জীবনে নানা রকম প্রভাব ফেলেছে। যেমন আগের যুগে যদি কেউ মারা যেতো তাহলে চিঠি লিখে...