বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বাংলাদেশে বসবাসরত কৃষকেরা গ্রাম অঞ্চলের দিকই বেশী বসবাস করে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের মতে বর্তমানে ক্যান্সারের আক্রান্ত রোগীদের ভেতর অধিকাংশই দরিদ্র কৃষক।
এছাড়াও বর্তমানে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যত পুরুষ রোগী ভর্তি হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই পেশায় কৃষক। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের মতে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের উপর জরিপ করেছেন এবং ২০১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী হাসপাতালে যত পুরুষ রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন তাদের ভেতর ৬৪ শতাংশ রোগী কোন ভাবে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত এবং অন্যান্য নারী পুরুষসহ ৩৪ শতাংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ক্যান্সার ইনিষ্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে হাসপাতালে ভর্তি পুরুষ রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং পেশায় সবাই কৃষি কাজে নিয়োজিত।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া রোগীর অধিকাংশই কৃষক এবং কেন কৃষকেরা এত বেশী ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন?
বাংলাদেশ সরকারের জাতয়ি ক্যান্সার ইনিষ্টিটিউটের মতে এই বিষয়ে সঠিক কোন গবেষণা এখন পর্যন্ত নেই। তবে কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও দারিদ্রতার কারণেই ক্যান্সার দেরীতে শনাক্ত হয়। এছাড়াও চাষাবাদ করার সময় কৃষকেরা অনেক কিছুই অমান্য করে চলে যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
কৃষকেরা জমিতে খালি পায়ে, খালি গায়ে, হাত লাগিয়ে ও ভরা পানির ভেতর কাজ করে থাকে। পানিতে কৃষি জমির কীটনাশক সম্পূর্ণভাবে মিশে যায় এবং পরবর্তীতে হাতের সংস্পর্শে আসলে শরীরের মারাত্বক ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। এ থেকেই ধীরে ধীরে ক্যান্সারের দিকে বিষয়টি চলে যায়। এছাড়াও পানিতে ইন্ডাস্ট্রিজ রাসায়নিক কেমিক্যাল মিশে পানি দূষিত হয়ে যায়। শহরে অনেক কৃষি জমিতে বিষিয়টি লক্ষ করা গেছে।
কৃষি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ এবং কীটনাশকের সাথে ক্যান্সারের সম্পৃক্ততা কতটুকু?
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের মতে কৃষি জমির পানিতে কীটনাশক প্রয়োগে শরীরে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা আছে। বেশ কিছু কীটনাশক ও আগাছানাশক কৃষি জমিতে ব্যবহার করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং মারাত্বক হয়ে ক্যান্সারে রুপ নিতে পারে। কৃষি বিষয়ক সংস্থা উবিনীগ এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার বলেছেন যে বাংলাদেশের কৃষি জমিতে েএমন বেশ কিছু কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহার করা হয় যার সংস্পর্শে শরীরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি বৃদ্ধি করে। কীটনাশক ও আগাছানাশকের ভেতর আছে ‘এলড্রিন’, ‘ডাউএড্রিন’, ‘ডিডিটি’, ‘এনড্রিন’ ইত্যাদি। এসকল কীটনাশক ও আগাছানাশক শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ সকল কীটনাশক ও আগাছানাশক প্রয়োগের মাধ্যমে কিডনি, লিভার ও স্তনের ক্যান্সারের আশংকা বৃদ্ধি পায়।
কৃষি কাজে ও চাষাবাদযোগ্য জমিতে কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহারে সচেতনতা ও সাবধানতা কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুকি কমিয়ে আনবে।
সূত্র: বিবিসি