দৈহিক বা মানসিক অবসাদ, সামগ্রিক বা আংশিক যাই হোক না কেন তার পিছনে কতকগুলো কারণ রয়েছে। ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি কর্ম সূচিজনিত শারীরিক চাপের কারনে সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে অবসাদ আসে। তবে আরও অনেক কারণে অবসাদ আসতে পারে। মনোবিদগণ অবসাদের কারণ সমূহকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করেছেন –
১. দৈহিক কারণ
২. মানসিক কারণ
৩. পরিবেশগত কারণ।
দৈহিক অবসাদের জন্য মাংসপেশীতে ল্যাকটিক এসিডের সৃষ্টি, দেহকোষের ক্ষয়, শরীর থেকে লবণ বের হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত অঙ্গে রক্ত চলাচল কম হওয়া ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। এবার আমরা মানসিক অবসাদ নিয়ে আলোচনা করব ।
মানসিক অবসাদের কারণ সমূহকে আমরা নিম্নলিখিত উপায়ে বিশ্লেষণ করতে পারি যেমন –
১. মানসিক প্রস্তুতির অভাব : কোনো কাজ করার আগে সে সম্পর্কে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহন করা প্রয়োজন। কর্মসূচি সম্পর্কে পূর্ব ধারণা স্পষ্ট না থাকলে তাড়াতাড়ি মানসিক অবসাদ আসে।
২. কাজে অভ্যস্ত না হয়ে ওঠা : কর্মসূচি নিয়মিতভাবে পালনকালে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে ঐ কর্মসূচিতে তাড়াতাড়ি অবসাদ আসে না। তাই অভ্যাসের অভাবের কারণে অনেক সময় অবসাদ দেখা দেয়।
৩. কর্মক্ষেত্রে প্রেষণা এবং কাজের প্রতি অনুরাগের অভাব : যে কোনো কাজের পিছনে প্রেষনা থাকলে একটানা কাজ করেও অনেক সময় অবসাদ আসে না। আবার যে কাজে প্রেষনা নেই, সেই কাজ তার কাছে বোঝাস্বরূপ। ঐ ধরনের চাপিয়ে দেওয়া কাজ সহজে মানসিক অবসাদ দেখা দেয়।
৪. মানসিক ইচ্ছার অভাব : কর্মসূচি বাস্তবায়নে যদি অনীহা থাকে তাহলে সে দ্রুতই মানসিক ভাবে অবসাদ গ্রস্ত হয়ে পড়ে। মানসিক ইচ্ছা প্রবল হলে অনেক সময় কঠিন কাজ হলেও তা করা সম্ভব হয়। তাই মানসিক ইচ্ছার অভাব অবসাদের একটি বিশেষ কারণ।
৫. পরিবেশগত কারণ : দৈহিক ও মানসিক কারণ ছাড়াও কিছু পরিবেশগত কারণেও অবসাদ আসতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অর্থাৎ সেঁতসেঁত, আলো বাতাসের অভাব এমন পরিবেশ, খুব গরম, খুব ঠান্ডা বা গুমোট আবহাওয়া কোনো কাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ নয়। এরূপ পরিবেশে সহজেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। অনুরূপ ভাবে পরিমিত আলো, বাতাস, প্রশস্ত জায়গা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ না থাকলে অল্পতেই অবসাদ এসে ভর করে।
মানসিক অবসাদ দূরকরণের উপায় : দৈহিক ও মানসিক শক্তি ক্ষয়ের ফলেই যেহেতু অবসাদের উদ্ভব হয়, তাই দেহ ও মনের সুস্থতা ও সক্রিয়তা আনয়নের মাধ্যমে অবসাদ দূর করা সম্ভব। মানসিক অবসাদ দূরকরণের জন্য আমরা নিচের বিষয় গুলো খেয়াল রাখতে পারি :
১. কর্মসূচির প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি : যদি কর্মসূচির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, তাহলে তাড়াতাড়ি অবসাদ আসে না এবং কাজ টা করতেও ভালো লাগে।
২. কর্মসূচির একঘেয়েমিতা পরিহার : বিরক্তিকর কর্মসূচির একঘেয়েমিতা অবসাদগ্রস্ত করে তোলে। অন্যদিকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম কর্মসূচিকে আনন্দপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময় করলে অবসাদ দূর করা যায়।
৩. প্রষনা : কর্মসূচিতে প্রেষনা থাকলে আনন্দের সাথে তা পালন করবে এবং শীঘ্র অবসাদ আসবে না।
৪. অতিরিক্ত চাপযুক্ত কর্মসূচি পরিহার : সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কাজ বাস্তবায়নের জন্য নিজেকে চাপ দেওয়া যাবে না।
৫. বিশ্রাম ও ঘুম : দেহের ক্ষয় পূরনের জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন। তেমনি অবসাদ দূর করার জন্য প্রয়োজন পরিমিত বিশ্রাম ও ঘুম। বিশ্রাম ও ঘুমের ফলে দেহ ও মস্তিষ্কের অবসাদ দূর হয় এবং পুনরায় নতুন উদ্যোগে কাজ করার আগ্রহ জন্ম দেয়।