এই শিকল পরা চল মোদেরি
শিকল পরা চল
এই শিকল পরি শিকল তোদের
করবো রে বিকল।
বিখ্যাত আলোকচিত্রগ্রাহী শহিদুল আলম যখন গ্রেফতার হলেন তারপরে প্রথম আলোতে আসার এই মন্তব্যটি একজন পাঠক করেছিলে। শহিদুল আলম সম্পর্কে কে কিছু বলার আগে আসলে আমি একজন ক্ষুদ্র জ্ঞানের মানুষ তা সম্পর্কে বলার আমি কেউ নই।
তারপরেও খুব ছোট করে স্বল্প করে আমি আপনাদের মাঝে একটু পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। যারা ক্যামেরার পিছনে থাকেন ক্যামেরার পেছনে এই মানুষগুলোর সাথে শহিদুল আলমকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নাই। আর যারা জানে না তাদের জন্য তার জীবনী একটু তুলে ধরতে চাই তবে আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যে তিনি একজন বড় মাপের মানুষ ,আকাশসম একজন মানুষ, প্রতিষ্ঠানতুল্য একজন মানুষ বাংলাদেশের গর্ব।
ডাক্টর শহিদুল আলম ১৯৮৯ সালে ড্রিক ফটোগ্রাফী প্রতিষ্ঠা করেন। তারি হাত ধরে পাঠশালা প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৯৮ সালে। বাংলাদেশে যে ছবি মেলা আয়োজন করা হয় এই ছবি মেলায় তিনি একজন পরিচালক।
নেডারল্যান্ড আয়োজিত “ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো” এর বিচারক হিসেবে তিনি প্রথমে এশিয় হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিৃটেনে রয়েল ফটোগ্রাফী সোসাইটি তিনি সম্মানজনক উপাধি পান ২০০১ সালে,জার্মান ভিত্তিক দ্যা বক্স অওয়ার্ড বিচারক মন্ডলীর তিনি একজন সদস্য ছিলেন। বিশ্ববিখ্যাত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার তিনি ফটো তুলেছিলেন এবং ম্যান্ডেলার ফাউন্ডেশনের সেই ছবিটি আজো রয়েছে এমনিকি সেই ছবিটি নেলসন ম্যান্ডেলা হিসেবে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।
গত ৫ই আগষ্ট রোজ রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।তার গ্রেফতার ছিল অত্যন্ত চমৎকার এবং নাটকীয় অনেকটা সিনেমাটিক স্টাইল । তার বাড়িতে অনেকগুলো গাড়ি আছে এবং ৩০ থেকে ৩৫ জন লোক বাড়িতে ঢুকতে চেষ্টা করে এক পর্যায়ে দারোয়ান এসে বাধা দেয়। কিন্তু তারা দারোয়ান কে আটকে রেখে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে এবং চোখ,মুখ বেঁধে শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করা হয়।
সেসময় সিসি টিভির যে ভিডিও ফুটেজ ছিলো সেগুলো তারা ওখান থেকে হার্ডডিক্স বের করে নিয়ে আসে শহিদুল আলমকে নিয়ে যায়। সারারাত নিখোঁজ থাকার পর পরের দিন ডিবি পুলিশ স্বীকার করেন যে সরকারের নির্দেশে তারা শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করেছেন।
শহিদুল সরকারের বিরূদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন,তিনি ফেসবুকে এবং একটি বিদেশী চ্যানেলকে সাক্ষাতকার দিয়েছেন এই অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এরপর টেঁনে হিঁচড়ে তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় তার পায়ে জুতাও ছিলনা। আদালত থেকে ফেরার সময় তিনি বলেন,তাকে শারীরিক আঘাত করা হয়েছে,তার রক্তমাখা জামা ধুয়ে আবার তাকে পড়তে দেয়া হয়েছে।
ডাঃ শহিদুল্লার একটি কথা মনে পড়ে ‘যে দেশে গুনী মানুষের কদর নাই সে দেশে গুনী মানুষ জন্মায় না। এই গুনী মানুষটিকে এভাবে নিয্যাতন না করলে কি হতোনা? তাকে এভাবে আঘাত না করে,রক্তাক্ত না করে কি বিচার করা যেতনা?
একজন শিল্পীর সাথে একজন সাধারন মানুষের পার্থক্য কোথায়?
একজন সাধারন মানুষের কাজ আরেকজন সাধারন মানুষ করতে পারে কিন্তু একজন শিল্পী সাধারন মানুষের কাজ করতে পারলেও একজন সাধারন মানুষ কনোদিন শিল্পীর কাজ করতে পারেনা।
এখানেই শিল্পীর সার্থকতা বা শিল্পীর শ্রেষ্টত্ব।
হুমায়ূন আজাদ জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতা ব্যখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন,জীবনানন্দ দাশ অতি সাধারন একজন মানুষ ছিলেন,তার বাড়ি,গাড়ি ছিলনা,৫তলা বল্ডিং ছিলনা। তার টাকা পয়সা কিছুই ছিলনা। তিনি খুব সাধারন একজন মানুষ ছিলেন। তো জীবনানন্দ দাশ কেন জীবনানন্দ দাশ?
কারন জীবনানন্দ দাশ যে কবিতাটি লিখতে পারেন সারা পৃথিবীর অন্য কেউ সেই কবিতাটি লিখতে পারতেননা।
অনুরূপভাবে শহিদুল আলম একজন শহিদুল আলম। শহিদুল আলম ঘরে ঘরে ক্ষনে ক্ষনে জন্ম নেয়না।
আমাদের যারা রাজনৈতিক নেতা আসেন,পুলিশ আসেন,মন্ত্রী আসেন,সচিব আসেন এদেরকে হয়তো আমরা রদবদল কিংবা নতুন কেউ আনতে পারবো। একজনের জায়গায় আরেকজন বসাতে পারবো হয়তো একজন যদি উনিশ হন আরেকজন হবে বিশ শতভাগ না হলেও তার কাছাকাছি একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে।
শহিদুল আলমের মত মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল।
সুতরাং এই গুনী মানুষদেরকে আমরা যদি মূল্যায়ন করতে না পারি আমরা জাতিগতভাবে সংস্কৃতি দিক থেকে কতটা পিছিয়ে পড়ছি সেটা হয়তো আমরা এই মূহুর্তে বুঝতে পারছিনা অথবা উপলব্দি করেও করতে পারতেছিনা।
সবশেষে আমি এটাই প্রত্যশা করবো শহিদুল আলম সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে অসুক এবং ক্যামেরা হাতে আলোকিত ছড়াক বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে।