আপনি কি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন?
কেমন হবে যদি আপনি আপনার এই পছন্দের কাজটি থেকে আয় করতে পারেন? না না, আপনাকে বই লিখে আয়ের কথা বলছি না।
ইন্টারনেটের এই যুগে অনলাইনে কাজ করে আয় করা সম্পর্কে তো আমরা অনেকেই শুনেছি। অনলাইনে কাজ করে আয় করার এমনই একটি মাধ্যম হলো ‘কন্টেন্ট রাইটিং’। কন্টেন্ট রাইটিং ডিজিটাল মার্কেটিং-এর একটি অংশ। কন্টেন্ট রাইটিং-এর সংজ্ঞা বিভিন্ন রকম হতে পারে। কোনো বিষয়ে, গবেষনা করে, স্টাডি করে, বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সেই বিষয়ে পূর্ন ও বিস্তারিত কিছু অন্য ব্যক্তির কাছে ইলেক্ট্রনিক লিখনের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া বা পাবলিশ করাটাকেই আটিক্যাল বা কনটেন্ট রাইটিং বলে। আর যারা কন্টেন্ট রাইটিং করে তাঁদের কন্টেন্ট রাইটার বলে।
ঘরে বসে অনলাইনে লেখালেখি করে আয় করার জন্য সৃজনশীল এবং দারুণ একটি পেশা হচ্ছে কন্টেন্ট রাইটিং। দক্ষতার পাশাপাশি নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে কন্টেন্ট রাইটিং করে সুযোগ রয়েছে দারুণ একটি ক্যারিয়ার গড়ার।
চাইলেই যে কেউ কন্টেন্ট রাইটিং দক্ষতা অর্জন করার মাধ্যমে প্রফিটেবল ক্যারিয়ার গঠন করতে পারে। আর কন্টেন্ট রাইটিং থেকে লাইফটাইম প্যাসিভ ইনকাম করার উপায় রয়েছে। তাছাড়া একজন কন্টেন্ট রাইটারের ভালো জব অপরচুনিটি রয়েছে। কন্টেন্ট রাইটাররা শুধুমাত্র কন্টেন্ট রাইটিং জব করেও মাস শেষে মোটা অংকের টাকা আয় করে থাকেন। তবে তার জন্য একজন দক্ষ কন্টেন্ট রাইটার হতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো কন্টেন্ট লিখে আয় করবেন কিভাবে?
➤ নিজের ব্লগসাইট তৈরি করে –
কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করার জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হলো ব্লগ লিখে আয়। এর জন্য সর্বপ্রথম একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। ডোমেইন না কিনেও গুগোলের ব্লগার ও ওয়ার্ডপ্রেস এর সহজলভ্য ওয়েব সাইট সাজানোর সুবিধা গ্রহণ করে সাইট তৈরী করতে পারেন। অত:পর সেখানে আপনার কনটেন্ট, লিখা আর্টিক্যাল বা তথ্য শেয়ার করে ভিজিটর নিয়ে আসতে পারেন আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ পেইজে।
তারপর গুগল এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট বা ব্লগ পেইজ মনেটাইজ করে এডভার্টাইজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভালো অংকের টাকা আয় করতে পারেন।
➤ ইনফরমেটিভ আর্টিকেল লিখেঃ
ইনফরমেটিভ আর্টিকেল মানে বুঝতেই পারছেন এমন একটি আর্টিকেল যেটিতে কোন বিষয় নিয়ে ইনফরমেশন দেওয়া হয়। যেমন আপনি একটি আর্টিকেল লিখবেন আইফোন ১২ নিয়ে। তাহলে প্রথমেই আপনাকে আইফোন ১২ নিয়ে বিস্তারিত জানতে হবে যেমন- কখন বাজারে এসেছে, প্রসেসর কত জিবি র্যাম, নতুন কি কি ফিচার আছে, জনপ্রিয়তা কেমন ইত্যাদি।
এভাবে কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে তথ্য দিয়ে ইনফরমেটিভ আর্টিকেল লেখা হয়। এ ধরণের আর্টিকেলের মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষ যেন এই আর্টিকেল পড়ে কোন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পায়।
➤ নিউজ আর্টিকেল লিখে –
আমরা সবাই কম-বেশি পত্রিকা পড়ি। পত্রিকায় অনেক বিষয়ে ছোট ছোট আর্টিকেল থাকে যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার বর্ণনা থাকে। এগুলোকেই নিউজ আর্টিকেল বলে। বর্তমানে অনলাইন নিউজ পোর্টালে মানুষ বেশি খবর পড়ে। তাই পত্রিকার আর্টিকেলগুলো তারা এখন ওয়েবসাইটেও পাবলিশ করে।
নিউজ আর্টিকেল লেখার জন্য আপনাকে বিভিন্ন ঘটনার সঠিক তথ্য বিভিন্ন সোর্স থেকে সংগ্রহ করতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো নানা মিথ্যে তথ্য দিয়ে আর্টিকেল লিখছে যার ফলে হারাচ্ছে পাঠকদের আস্থা। তাই নিউজ আর্টিকেল লেখার জন্য একজন লেখককে সবসময় ভুল তথ্য প্রকাশ না হওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
➤ রিভিউ আর্টিকেল লিখেঃ
বর্তমান যুগে রিভিউ আর্টিকেল খুব জনপ্রিয়। রিভিউ আর্টিকেল মানে হলো পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কিত এমন একটি লেখা যেটিতে ওই পণ্যের ভালো-খারাপ দিক তুলে ধরা হয়। রিভিউ আর্টিকেলের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে পণ্য বা সার্ভিসের ভালো-খারাপ দিকগুলো আলোচনা করে ক্রেতাকে পণ্য ক্রয় বা সার্ভিস গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা।
এইক্ষেত্রে আপনি যদি ওই পণ্য বা সার্ভিস ব্যবহার করে থাকেন তাহলে লেখার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। আর যদি নাও ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনাকে খুঁটি-নাটি বিষয়সহ সবকিছু নিয়ে বিস্তারিত জেনে তারপর লিখতে হবে।
➤ গেস্ট পোস্টিং করে আয়ঃ
এমন অনেক ব্লগার আছেন যারা নিজেদের সাইটে লেখালেখি করার সময় পান না।তাই তারা তাঁদের সাইটে অন্যদের দিয়ে লেখায় যার প্রতি আর্টিকেল যত আয় হয় ৫০% এডমিনের এবং ৫০% রাইটার পেয়ে থাকেন।
এছাড়া আরো অনেক সাইট আছে যেখানে বিভিন্ন বিষয় যেমন- সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা, জ্ঞান-বিজ্ঞান,স্বাস্থ্য বিষয়ক, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন ভাষায় লেখালেখি করে আয় করা যায়। প্রতিটি আর্টিকেলের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দেয়া হয়। আপনি যদি ইংরেজিতে পারদর্শী হন তবে ইংরেজিতে আর্টিকেল লেখার সাইটগুলোতে লেখালেখি করতে পারেন। যদি ইংরেজিতে পারদর্শী না হন তবে আপনি বাংলা সাইটগুলোতে লেখালেখি করতে পারবেন।
➤ কপি রাইটিংঃ
যেকোনো পণ্য বিক্রয়ের জন্য কন্টেন্ট রাইটিং একটি বড় মাধ্যম। কন্টেন্ট লেখার মধ্যে যেকোনো পণ্য প্রচার করে তা বিক্রয় করা হয় এবং কন্টেন্ট একটি সহযোগী মাধ্যম যেকোনো পণ্য প্রচারের জন্য।
এই ধরণের কন্টেন্ট লেখার পেছনে বড় উদ্দেশ্য হলো পণ্যের বিক্রয়, ব্র্যান্ডিং, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিক্রয় বৃদ্ধি। বর্তমানে এই অনলাইনের যুগে একজন কপি রাইট ফ্রিল্যান্সারের চাহিদা অনেক বেশি।
➤ ই-বুক লিখে আয়ঃ
লেখকরা যেমন বই লিখে আয় করে আপনিও তেমনি ই-বুক লিখে আয় করতে পারবেন। যেহেতু মানুষ এখন বই থেকেও ই-বুক পড়তে পছন্দ করে তাই আপনি ই-বুক লিখে বিশ্বের বড় বড় ই-বুক সাইটগুলোতে আপলোড দিতে পারেন।
আপনি যদি আপনার ই-বুকের সঠিক মার্কেটিং করতে পারেন তবে সেটিও অনেক ভালো দামে বিক্রি করে আয় করতে পারবেন। তবে ই-বুক লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে পারদর্শী হতে হবে এবং কোনো একটি বিষয়ে দক্ষ হতে হবে।
ইন্টারনেট বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ে চলেছে কন্টেন্ট রাইটিং এর চাহিদা। আর বাড়বেই না কেন! যেকোনো ধরনের ডিজিটাল উপস্থিতি অথবা ইন্টারনেটের উপস্থিতি নিশ্চিত করণের পূর্বেই প্রয়োজন পড়ে কন্টেন্টের।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় থাকা বিল গেটস ১৯৯৬ সালের এক বক্তব্যে বলেন,❝কন্টেন্ট ইজ কিং❞ । বিষয়টি হয়তো এমনই রয়ে যাবে। কারণ নানা ধরনের কাজে রোবট বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা গেলেও লেখালেখির ক্ষেত্রে তা এখনও অসম্ভবই রয়ে গেছে। আর ভবিষ্যতেও হবে কিনা এ ব্যাপারে এখনও সন্দেহ রয়েছে।