চাষী তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে কাজ করছিল। এমন সময় একটি সাপ তার গর্ত থেকে বেরিয়ে ছেলেটিকে ছোবল মারলো। বিষের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ছেলেটি মারা গেল। ছেলের শোকে পাগল হয়ে চাষী কুড়াল হাতে ছুটল সাপকে মারতে। কিন্তু সাপটি ততক্ষণে তার গর্তে চলে গিয়েছে। চাষী করতে সামনে এসে কুড়াল উঠিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।বেশ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর চাষী দেখল, সাপ গর্তের বাইরে মাথা বের করেছে। সাথে সাথেই সে কুড়াল দিয়ে কোপ মারলো। কিন্তু আঘাতটি সাপের না লেগে লাগলো পাথরের গায়ে। সাপটি ও সঙ্গে সঙ্গে গর্তে চলে গেল।
চাষী বুঝতে পারলো যে সাপটিকে মারা হল সহজ নয়। অপরদিকে সাপটি রেগে গেলেও মুশকিল। কোন ফাকে আবার তাকে না কামড় বসায়। তাই কৃষকটি কিছুক্ষণ চিন্তা করল এবং ভাবলো যে নিরাপদে তার কাজ করতে চাইলে সাপের সাথে শত্রুতা করে লাভ নেই। বরং সাপের সাথে বন্ধুত্ব করলে সাপটি আর তার কোনো ক্ষতি করবে না। তখন সে গর্তের কাছে গিয়ে সাপকে ডেকে বলল,”ওহে সাপ ভাই, এসো, আমরা নিজেদের ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে নিই। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন থেকে আমরা বন্ধুর মতো থাকবো।” চাষীর কথা শুনে গর্তের ভেতর থেকেই সাপ বলল,”না , তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে আমি রাজি নই। আমাদের বিবাদটা হলো রক্তের।
“সাপটি আরো বললো,”সব কিছু ভুলে গেলেও তুমি তোমার ছেলের শোক কোনদিনও ভুলতে পারবেনা। ছেলের কবর যখন তোমার চোখে পড়বে, তখন বন্ধুত্বের কথা আর তোমার মনে থাকবে না। আমাদের এই শত্রুতা শেষ হওয়ার নয়।”এই বলে সাপটি পুনরায় তাঁর গর্তে চলে গেল। চাষী কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চিন্তা করল। সে বুঝতে পারলো আসলেই তাদের শত্রুতা শেষ হবার নয়। তাই সে পরিকল্পনা করল যে সে সাপটিকে যেভাবেই হোক মেরে ফেলবে। কিছুদিনের মধ্যেই বর্ষাকাল শুরু হয়ে গেল। বৃষ্টির পানিতে নদী-নালা-খাল-বিল থৈ থৈ করে। চাষির বাড়ির উঠান অবধি পানি চলে আসার অবস্থা। সে একদিন লক্ষ্য করল যে তার বাড়ির পাশে কিছু একটি নড়াচড়া করছে।
ঝোপের মধ্যে উঁকি দিতেই সে সেই সাপটি কে দেখতে পেল। বৃষ্টির পানি আসার কারণে সাপটি তার গর্ত পরিবর্তন করেছে। চাষী ভালোভাবে গর্তের চারপাশ লক্ষ করল। সে প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে গর্তটি এবং গর্তের চারপাশ লক্ষ্য করতো। খুব শীঘ্রই সে সাপটির গর্তে বের হওয়া এবং ঢোকার সময় জানতে পারল। সে সুযোগ বুঝে একদিন গর্তে উঁকি দিল। উঁকি দেওয়ার পর সে দেখতে পেল যে গর্তে বেশ কয়েকটি ডিম রয়েছে।
সেই মুহূর্তে তার তার মৃত ছেলের কথা মনে পড়ে গেল। কিন্তু কেন যেন সে কিছু না করে সেখান থেকে চলে গেল। কৃষককে গর্তের আশেপাশে লক্ষ করাতে সব ঠিক হয়ে গেল। সাপটি তার গর্তের চারদিকে পাহারা দেওয়া শুরু করলো। কিন্তু কৃষকের অবস্থা দেখে সাপটি বুঝতে পারলো যে চাষী তাদের কোনো ক্ষতি করবে না। তাই সে তার গর্তে নিশ্চিন্তে প্রবেশ করল। একদিন সাপটি উপলব্ধি করলো যে তার গর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি প্রবেশ করেছে। সে গর্তে দুইটি বেজি দেখতে পেল। একটি বেজি তার বাচ্চাদেরকে খাওয়া শুরু করলো এবং আরেকটি তার দিকে তেড়ে আসলো।
সে তার সাথে লড়াই করল। কিন্তু সে বুঝতে পারলো তার পক্ষে পেড়ে ওঠা সম্ভব নয়। সে কোনমতে তার গর্ত থেকে বেরিয়ে আসলো। ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে বেরিয়ে আসার পর সে তার মাথার কাছে একটি কুড়াল দেখতে পেলো। সে দেখল যে কুড়াল হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই চাষী। পরবর্তীতে সে পুরো ঘটনাই বুঝতে পারল। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। চাষি তার মনের বাসনা পূরণ করতে সক্ষম হল।