শহর জীবন বলতে ই আমাদের সামনে যে চিত্র ফুটে উঠে তা হলোঃবিভিন্ন ধরনের গাড়ি, বড় বড় ইমারত, কলকারখানা, কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া ইত্যাদি।বিখ্যাত ইংরেজ কবি, উইলিয়াম কপার বলেছিলেন, ” সৃষ্টিকর্তা গ্রাম সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষ শহর বা নগর সৃষ্টি করেছেন।” সুতরাং শহর জীবনের প্রতি স্বভাবতই মানুষের একটা তিব্র আকর্ষণ রয়েছে কারণ সে সেখানে বাস করে গ্রামের তুলনায় অনেক বেশি সুযোগ -সুবিধা ভোগ করতে পারে।শহরে গ্রামের তুলনায় অনেক বেশি কাজ এবং চাকুরির সুযোগ রয়েছে।শহরে অনেক মিলস, ফেক্টরি এবং শিল্পকারখানা রয়েছে।শহরে স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বেশি।সুতরাং সেখানে শিক্ষার সুযোগও বেশি।শহরে বসবাসকারী মানুষ গ্রামে বসবাসকারী মানুষের চেয়ে বেশি ভালো চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারে।গ্রামে হাসপাতালের সংখ্যা বেশি নয়।আর যা আছে তা সুচিকিৎসার জন্য উপযোগী নয় তাই গ্রামে বসবাসকারী মানুষ ভালো চিকিৎসা সেবা পায় না।গ্রামের হাসপাতালে যথেষ্ট যন্ত্রপাতি নেই এবং যোগ্য ডাক্তারও নেই বেশি যার ফলে গ্রামের মানুষ সুচিকিৎসা পায় না এবং অনেকে সুচিকিৎসার অভাবে অকালে প্রাণ হারায়।কিন্তু শহরে৷ অনেক ভালো ভালো চিকিৎসালয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে যন্ত্রপাতি এবং যোগ্য ও অভিজ্ঞ ডাক্তার থাকায় শহরে চিকিৎসা সেবার মান গ্রামের তুলনায় অনেক ভালো। বিজ্ঞান বিশ্বের দুরত্ব কমিয়ে দিয়েছে।বিজ্ঞান যোগাযোগের অনেক নতুন নতুন আর সহজতর মাধ্যম আবিষ্কার করেছে যার ফলে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করা খুব সহজ হয়ে গেছে।মনে ই হয় না যে কেও কারো থেকে দূরে। সবাইকে নিকটে বাসকারী বলে মনে হয়।শহরের মানুষ ফ্যাক্স,টেলিফোন,মোবাইল ফোন ইত্যাদির সাহায্যে খুব কম খরচে এবং কম সময়ে অন্যদের৷ সাথে যোগাযোগ করতে পারছে কিন্তু গ্রামের মানুষ সেক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে আছে।শহরের মানুষকে পায়ে হেটে যাতায়াত করতে হয় না।শহরে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আছে যার দ্বারা মানুষ খুব কম সময়ে,কোনো সমস্যা ছাড়াই বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যেতে পারে।এতে মানুষের সময়৷,, শক্তি দুটোই কম খরচ হয়।
শহরের মানুষের পক্ষে বিভিন্ন কলা,সংস্কৃতি এবং সাহিত্যচর্চা করা অনেক সহজ।কারণ সেখানে সাংস্কৃতিক সংঘ এবং সাহিত্যিক ক্লাবের পরিমাণ অনেক বেশি।যেহেতু শহরের প্রায়৷ সকলেই শিক্ষিত সে ক্ষেত্রে শহরের মানুষ তার মেধা অনেক বেশি কাজে লাগাতে পারে।
শহরের মানুষের বিনোদনের সুযোগ অনেক বেশি কারণ শহরে অনেক সিনেমা হল,থিয়েটার, ক্লাব,পার্ক ইত্যাদি রয়েছে।শহরে গৃহস্থালির জীবন অনেক বেশি আরামদায়ক। মহিলাদের কূয়া কিংবা পুকুর থেকে পানি টেনে আনতে হয় না, আবার তাদের মাটির চুলা জ্বালিয়ে রান্নাও করতে হয় না।রাতে অন্ধকারে কিংবা হারিকেন জ্বালাতে হয় না। বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক বাতি আছে যা পুরো ঘরকে আলোকিত করে দেয়।গ্রীষ্মকালে গরমে কষ্ট করতে হয় না কারণ শীতল পরশ দেয়ার জন্য বৈদ্যুতিক পাখা আছে, এসি আছে।
শহরে বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধা পাওয়া যায় যেমন, সব নাগরিক সেবা নাগরিকের দৌড়গড়ায় পৌছে দেয়া হয়।বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির বিল ঘরে বসেই পরিশোধ করা যায়। দপ্তরে গিয়ে কিংবা দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না।
পৃথিবীতে অবিমিশ্রত কোনো কিছু ই নেই।প্রত্যেকটা বস্তুর ই কিছু সুবিধা যেমন আছে ঠিক তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে।
ঠিক সেভাবে ই শহর জীবনের কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
শহরের বায়ু অনেক দূষিত। এখানে বিভিন্নভাবে বায়ু দূষিত হয়।যেমন, কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া, আরাম আয়েশের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্র যেমন,এসি,ফ্রিজ এগুলোর ফলে সৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাসও বায়ু দূষণ ঘটায়।এখানে মানুষ বিশুদ্ধ বায়ুতে শ্বাস নিতে পারে না।
এভাবে বায়ুর মত অন্যান্য দূষণও ঘটে এখানে।নর্দমার ময়লা৷ পানি,কৃষিজমিতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত সার৷ ও রাসায়নিক পদার্থ,বিভিন্ন প্রসাধনীর বর্জ্য, অতি উচ্চ শব্দে গান শোনা, গাড়ির হর্ন ইত্যাদির ফলে পানি,শব্দ এবং মাটি দূষণও ঘটে।
শহর জীবন অনেক উচ্চমানসম্পন্ন এবং ব্যয়বহুল। মধ্যবিত্ত আয়ের পরিবারগুলো খুব কষ্ট করে সেখানে জীবিকা নির্বাহ করে।এখানে সব জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি হয়।শহরে ক্রিমিনাল এবং মাস্তান অনেক বেশি আতংক সৃষ্টি করে এবং তাদের ভয়ে মানুষ তটস্থ থাকে।এখানে ক্রিমিনালরা আইনের তোয়াক্কা করে না এবং বিভিন্ন অন্যায় করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
হাইজ্যাক, চুরি,ছিনতাই,রাহাজানি, ধর্ষণ ইত্যাদি শহর জীবনের নিত্যদিনের ঘটনা।শহর জীবনের মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।তারা সব সময়৷ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।শহরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার উপায় ও তেমন নেই বললেই চলে।শহরে মানুষ খোলা আকাশ,পাখির কলকাকলি, নদীর কুলকুল ধ্বনি শুনতে পায় না।তাছাড়া মানুষ এখানে মাটির ছোয়াও পায় না।কখনো কখনো মানুষ যানবাহনের ভীড়ে আটকে৷ পড়ে এবং তাদের গন্তব্যস্থলে পৌছাতে অনেক সময় লেগে যায়।যার ফলে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।এখানে তাজা জিনিস পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।শহরের খাবারে ভেজাল মেশানো থাকে। শহরের মানুষ সুখ শান্তির৷ চেয়ে অর্থ সম্পত্তির পিছনে বেশি ছুটে যার ফলে সেখানে আর্থিক সচ্ছলতা অনেক থাকলেও মানসিক প্রশান্তি নেই।অল্প কথাত শহর জীবনের মানুষের মাঝে কৃত্রিমতা অনেক বেশি।যার ফলে মানুষ স্বর্গীয় সুখ আনন্দ খুজে পায় না সেখানে।সারাদিন৷ রাত মেশিনের মাঝে থেকে মানুষও মেশিনের মতই অনুভূতিহীন,মানবতাহীন হয়ে পড়ছে। সর্বোপরি শহরে যেমন বিভিন্ন সুবিধা আছে তেমনি বিভিন্ন অসুবিধাও রয়েছে।এখানে একজন মানুষ সুশিক্ষিত হওয়ার অনেক বেশি সুযোগ পাচ্ছে এবং অনেক বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।কিন্তু একই সাথে অনেক সমস্যার সম্মুখীন ও হতে পারে এখানে।
কেউ একজন ঠিক ই বলেছিলেন, “তুমি যদি কিছু জেনেও না জানো তাহলে গ্রামে বাস করো আবার যদি তুমি কিছু না জেনেও অনেক কিছু জানো তাহলে শহরে বাস করো।”
9 Comments
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.
Vlo
Yes
good post
Good post
Good
Ok
Good post
বেশ ভালো লাগলো
gd