আপনি কি সফল হতে চান!? এই প্রশ্নের জবাবে কোনো মানুষের উত্তর কি না হবে! পৃথিবীতে সবাই সফল হতে চাই। কিন্তু চাইলেই সবাই সফল হতে পারে না। আবার সফলতার রয়েছে নানা সংজ্ঞা; কেন আমরা সফল হতে চাই? কেন সবাই সফল হতে পারে না? সফলতা কার কাছে কেমন? সেসব নিয়েই আজকের আয়োজন। এই আর্টিকেলে এমন কিছু বিষয়ে আমি বলতে চলেছি যা হয়তো আপনি আগে কোথাও পড়েন নি!
আমরা কেন সফল হতে চাই?
সফলতা নিয়ে কথা হলে সবার প্রথমে যে প্রশ্নটা আমাদের সামনে আসে তা হলো, আমরা কেন সফল হতে চাই? আসলে আমরা অনেকেই জানি না আমরা কেন সফল হতে চাই! ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও সত্যি। অনেকে বলে জীবনে সুখ পাওয়ার জন্য সফল হতে চাই,অনেকে বলে সফলতা পাওয়ার জন্য সফল হতে চাই। মানুষের একটা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হলো সে সবসময় জিততে চায়। এই জিততে গিয়েই তার প্রয়োজন হয় সফলতার। সফলতার জন্য যা প্রয়োজন সে সব করতে রাজি। অবশ্য সবসময় জিতে গিয়েই যে সফল হওয়া যায় এমন নয়।
সফলতা হলো একটি সুখ! মানুষ সবসময়ই সুখে থাকতে চাই। সে ভাবে জীবনের সমস্ত সুখকে কব্জা করতে প্রয়োজন একটি সফল জীবন। আসলে সফলতার সাথে সুখের স্পর্শিক সম্পর্ক থাকলে ও সামগ্রিক ভাবে সফলতা মানেই সুখ নয়।
মানুষ জীবনে সফল হতে চাই স্বভাবত বৈশিষ্ট্যের কারণে এবং সুখের সন্ধান পেতে।
সফলতার সংজ্ঞাঃ
সফলতার সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম। কারো কাছে সফলতা জাগতিক আবার কারো কাছে তা অাধ্যাত্মিক। মানুষ ভেদে সফলতার ধারণার এই ভিন্নতা পৃথিবীতে যেমন বৈচিত্র্য এনেছে তেমনি মানুষের কর্মক্ষেত্রকে করেছে বিশাল।
কেউ মনে করেন জগতের টাকার পেছনে ছুটলেই সফল হওয়া যায়। আবার কেউ সত্যিকারের সুখি ব্যক্তি কেই সফল হিসেবে দেখেন। আসলে ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক সফলতা কখনো টাকার উপর নির্ভর করে না। আপনার যদি অঢেল টাকা থাকে কিন্তু আপনার মন গরিব থেকে যায় তবে আপনি প্রকৃত সফলতার ধারেকাছে ও যেতে পারেন নি। আপনি সফল ক্যারিয়ার গড়লেই সফল জীবনের মালিক হয়ে যাবেন এমনটা কিন্তু নয়। আপাতদৃষ্টিতে সফল ক্যারিয়ার,ধনদৌলত এসব জীবনযাপনের জন্য অধিক প্রয়োজনীয় মনে হলে ও। জীবনের ধারপ্রান্তে এসে এসব কিছু তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর মনে হবে। প্রকৃত সফল হতে হলে সুখি ও সুন্দর মনের অধিকারী হতে হবে।
সব মানুষের ব্যক্তিত্ব যেহেতু সমান নয় তাই মানুষ ভেদে সফলতার সংজ্ঞা ও ভিন্ন! তাই আপনার কাছে সফলতা মানে যা আমার কাছে তা নাও হতে পারে।
ইসলামে সফলতাঃ
ইসলাম কোনো ধর্মের নাম নয়,এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার নাম। তাই জীবনের প্রতিটা ধাপে ইসলাম আমাদের বলে দেয় কিভাবে কি করতে হবে। ইসলামি শরিয়ায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ই চুড়ান্ত সফলতা। আর এটাই সফলতার ধ্রুব সংজ্ঞা।
একত্ববাদীরা আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামের বাইরে কিছু করতে পারে না। আল কুরআন ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাতেই রয়েছে মুমিনের সফলতা। আখিরাতের অনন্ত জীবনের তুলনায় এ জীবন অতি ক্ষুদ্র। তাই দুনিয়াবি কল্যাণ বা সফলতা কখনো চুড়ান্ত সফলতা হতে পারে না। যদি সারা জীবন টাকার মোহ সম্মান অর্জনে ব্যয় হয়ে যায় আর আখিরাতের সম্বল না থাকে তাহলে আমরা হবো ক্ষতিগ্রস্ত। ইসলাম আমাদের এই শিক্ষায় দেয় যে, যদি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদের ওপর রাজি হয়ে যান তাহলেই আমাদের দুনিয়াতেও সফলতা আখিরাতে সফলতা। আরে শিক্ষার মাধ্যমে একজন মুমিন ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারেন। মৃত্যুর পর যদি নেক আমল সঙ্গে করেন না নেওয়া হয় তাহলে যে ক্ষতি হবে তা থেকে ফিরে আসার পথ নেই। তাই আখিরাতে সফলতা লাভের জন্য আমাদের দুনিয়া থেকে পাথেয় সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে হবে। এভাবেই কোরআন ও সুন্নায় চূড়ান্ত সফলতার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যাতে একজন মুমিন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে।
কিভাবে সফল হবঃ
সফলতার সংজ্ঞা যেহেতু একেক জনের কাছে একেক রকম তাই সফল হওয়ার উপায় একেকজনের কাছে একেক রকম। দুনিয়ার ভোগ বিলাসে মত্ত থাকা একজন ব্যক্তির কাছে দুনিয়াবী ধন-সম্পদ আর সম্মান অর্জন ই সফলতা। কিন্তু একজন মুমিন ব্যক্তির কাছে সফলতা মানে হলো তার রবের সন্তুষ্টি। সফল হওয়ার উপায় নিয়ে অনেকের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু কতগুলো কমন বিষয় মেনে না চললে কখনোই সফল হওয়া সম্ভব না। সফল হওয়ার উপায় নিয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মত পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু ইসলাম যেহেতু আমাদের জন্য একমাত্র মনোনীত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা সেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে সফল হওয়ার উপায় গুলোই অনুকরণীয়।
♦ কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে জীবন গড়তে হবে।
♦ সফলতা দান এর মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা তাই আমাদের সর্ব অবস্থায় আল্লাহতালার উপর ভরসা রাখতে হবে এবং তাঁর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে।
♦ প্রকৃতপক্ষে একজন মুমিন কখনোই হতাশ হয় না তাই মন থেকে হতাশাকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে।
♦ সময় ব্যবস্থাপনা বা টাইম ম্যানেজমেন্ট সঠিকভাবে করতে হবে।
♦লক্ষ্য ঠিক রেখে সুদৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
♦ব্যর্থতাকে মেনে নিতে শিখুন।
♦সব সময় অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা বাদ দিতে হবে কারণ তুলনা হল এমন এক প্রকার রোগ যা আমাদেরকে সামনে আগাতে বাধা দেয়।
♦সফলদের জীবন কাহিনী পড়ে অনুপ্রেরণা নেওয়ার চেয়ে ব্যর্থদের জীবন কাহিনী থেকে তাদের ব্যর্থ হওয়ার কারণ গুলো থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত।
♦কখনোই হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না।
♦অন্যের সমালোচনায় কান না দিয়ে নিজের কাজ নিজে করে যেতে হবে। তবে গঠনমূলক সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
♦সর্বোপরি সৎ থাকতে হবে। বলা হয়ে থাকে “সততা সফলতার চাবিকাঠি”
পরিশেষে বলতে চাই অনন্ত জীবনের মহাসাফল্য অর্জন ই ব্যক্তিমাত্র সকলের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এই ঠুনকো জীবনের শ্যাওলার মতো ভেসে বেড়ানো জীবনটাতে তথাকথিত সাফল্যের পেছনে না দৌড়ে সত্যিকারের সাফল্যের সন্ধান করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সফলতার অসংখ্য পথ থেকে আপনাকে বেছে নিতে হবে আপনি কোন পথে যাবেন। যে পথেই যান না কেন অবশ্যই আপনাকে ধৈর্যের সাথে পথ পাড়ি দিতে হবে এবং লেগে থাকতে হবে সৎ ভাবে।
সর্বশেষ কুরআনের আয়াত দিয়েই শেষ করতে চায়।
قَدْ أَفْلَحَ ٱلْمُؤْمِنُونَ
ٱلَّذِينَ هُمْ فِى صَلَاتِهِمْ خَٰشِعُونَ
অর্থঃ মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে,যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র;
(সূরা আল মু’মিনূন ১-২)