আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি সাহারা, এই গ্রহের সবচেয়ে উষ্ণতম স্থান। কয়েক কোটি বছর আগে এই মরুভূমির স্থানে ছিল ‘টেথিস সাগর’ একটি সাগর কি করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মরুভূমিতে পরিনত হল’ তাই আজকে জানার চেষ্টা করবো আমারা।
পৃথিবীর মাঝবরবর একটা বিশাল অংশ মরুভূমি। চায়নার ‘গবি মরুভূমি থেকে অ্যামেরিকার চিহুয়াহান মরুভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত এই অঞ্চলকে বলা হয় ডেজার্ট বেল্ট, এই ডেজার্ট বেল্টেই অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি সাহারা। এটি আয়তনে সমগ্র ভারত বর্ষের প্রায় তিন গুন বড়। সাহারা মরুভূমি ১২ টি দেশ জুরে বৃস্তিত, দেশ গুলো হল’ মিশর, মরক্কো, লিবিয়া, মালি, মৌরিতানিয়া, আলজেরিয়া, চাঁদ, ইরিত্রিয়া, নাইজার, সুদান, তিউনিশিয়া এবং পশ্চিম সাহারা। সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশ পৃথিবীর একটি টেকটনিক প্লেটের উপর অবস্থিত। অতীতে আফ্রিকা ও ইউরোপের মাঝে ছিল টেথিস সাগর। ৪ কোটি বছর আগে টেকটনিক প্লেটের গতিশীলতার ফলে’ তা উত্তরের দিকে সরে এসে আফ্রিকা ও ইউরোপকে একসাথে মিলিয়ে দেয়। ফলে আফ্রিকার উত্তরাংশ সংকোচিত হয়ে, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অনেক উপরে উঠে যায়। এর ফলে ধীরে ধীরে জনশুন্য হয়ে এই এলাকা মরুভুমিতে পরিনত হয়। মিশরের রাজধানী কাইরো থেকে মাত্র দেড়শ কিলোমিটার দুরে সাহারা মরুভূমির একটি অংশের নাম, ওয়াদি-আল- হিতান, আরবি ভাষায় ওয়াদি –আল- হিতান এর অর্থ তিমির উপত্যকা।
প্রায় ৩৬ লক্ষ্য বছর আগে বিলুপ্ত দোরাডান তিমির জীবাশ্ম এখানে পাওয়া গেছে। সাহারা মগুভূমি যে একসময় সমুদ্র ছিল তার সবচেয়ে বড় প্রামান এই ওয়াদি-আল- হিতান। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম পাওয়া গেছে এখানে। সাহারা মরুভূমিকে দেখলে মনে হবে যেন প্রকৃতি থেকে সবুজ রঙ মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সমুদ্র থেকে মরুভূমিতে পরিনত হবার পরেও বহুবার সাহারা মরুভূমি সজিব হয়ে উঠেছে। প্রতি ২০ হাজার বছর পর পর সাহারা মরুভূমি জলাভূমি ও তৃনভুমিতে পরিনত হয়। এর কারন হল পৃথিবী তার নিজ অক্ষ পথে প্রতি ২০ হাজার বছর পর পর সামান্য উত্তর দিকে কাত হয়ে যায়। এর ফলে পৃথিবীর মৌসুমি বায়ুর গতি পথ পরিবর্তিত হয়। আর ঠিক সে সময়কালে সাহারা মহুভুমিতে প্রচুর পরিমান বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে -এ অঞ্চল সবুজে পরিনত হয়। সর্বশেষ ৫ থেকে ৭ হাজার বছর আগে সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে মানুষ ও পশুপাখির বসবাস ছিল। ধারনা করা হয় ১৫ হাজার বছর পর সাহারা মরুভূমি আবারো সবুজ হয়ে উঠবে। সাহারা মরুভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বালির স্তুপ। এ মরুভূমির বালি দিয়ে সমস্ত পৃথিবিকে ৮ ইঞ্চি করে ঢেকে ফেলা যাবে। সেখানে একবার বালি ঝড় শুরু হলে তা টানা ৪ দিন পর্যন্ত চলতে পারে। এই বালি ঝড়ের সাথে বয়ে আসা প্রচুর বালি তৈরি করে ছোট ছোট বালির পাহাড়। এসব বালির পাহাড় প্রায় ১৫ তলা বাড়ির সমান উচ্চু হতে পারে। মরু ঝড়ের ফলে সৃষ্ট বালির পাহাড়গুলো স্থায়ি নয়, এগুলো বছরে প্রায় ৫০ ফুট পর্যন্ত স্থানান্তরিত হয়। লিবিয়ার অন্তর্গত সাহারা মরুভূমির আল-আজেজিয়ায় এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বচ্চ তাপমাত্রা ৫৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম এ জায়গায় বসবাস করা যেমন কষ্টসাধ্য ঠিক তেমনি আমাদের গ্রহের সবচেয়ে শীতলতম স্থান এন্টারটিকাতেও কোন মানুষের পক্ষে স্থায়ী ভাবে বসবাস করা সম্ভব নয় ।
পরবর্তি লেখায় আমরা জানতে চেষ্টা করব রহস্যময় এই এন্টারটিকা মহাদেশ সপর্কে। ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।