অল্প কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা ভুলে যাচ্ছেন। চাবি কোথায় রেখেছেন, রুম থেকে বেরিয়ে এসেছেন কিন্তু দরজা লক করেছেন কিনা মনে পড়ছে না। কি কিনতে বাজারে এসেছেন কিন্তু এসে আর মনে করতে পারছেন না। অনেকদিন আগের পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে তাকে চিনতে পরছেন কিন্তু নাম মনে পড়ছে না। একই রাস্তা দিয়ে বার বার আসা যাওয়া করছেন কিন্ত রাস্তা মনে থাকে না। এমনটা যদি আপনার সাথে বার বার ঘটে থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার ভুলে যাওয়ার প্রবনতা আছে।
আপনি যদি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে সম্পূর্ণ কনটেন্টটি আপনার জন্য। এ সমস্ত ঘটনাগুলো ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগের পূর্ব লক্ষণ। দীর্ঘদিন যাবত এভাবে চলতে থাকলে এবং তার কোনো প্রতিকার না করলে ধীরে ধীরে এটি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে পরিনত হতে পারে।
স্মৃতিশক্তি হ্রাসের কারন :
- নিয়মিত ও পরিমাণমতো ঘুমের অভাব।
- দূষিত পরিবেশে বসবাস করা।
- খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম।
- দীর্ঘদিন একাকিত্ব ও হতাশায় থাকা।
- উচ্চ রক্তচাপ।
- ধূমপান বা মাদকদ্রব্য সেবন।
- ভিটামিন-বি টুয়েলভ এর অভাব।
- পানিশূন্যতা।
- থাইরয়েডের সমস্যা।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
- বংশগত সমস্যা থাকা।
- এছাড়াও বয়স হওয়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে।
মনে রাখার উপায় :
১. নিয়মিত এবং পরিমাণমতো ঘুমাতে হবে :
স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে ঘুমের কোন বিকল্প নেই। ঘুম একদিকে যেমন মানুষের মস্তিষ্ক শীতল রেখে স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে অন্যদিকে মানষিক চাপ কমিয়ে মস্তিষ্কের ক্ষয়রোধ করে। মূলত মস্তিষ্কের কোষগুলো ঘুমের সময় স্মৃতিকে নতুন করে সাজিয়ে নেয়। এতে ঘুম থেকে ওঠার পর স্মৃতিগুলো ব্যবহার উপযোগী হয়। তাই প্রতিদিন নিয়মিত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। সন্ধার পর চা বা কফি একদমই পান করা যাবে না। ঘুমানোর অন্তত এক ঘন্টা আগে মোবাইল, ল্যাপটপ এবং টিভি দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
২. খাদ্যাভাস :
স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখতে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মস্তিষ্কের খাবার হচ্ছে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ। তাই আমাদের এমন খাবার খাওয়া উচিৎ যাতে পর্যাপ্ত পরিমান এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। খাদ্যতালিকায় ফল ও শাকসবজি বেশি রাখতে হবে। গ্রীন টি পান করা যেতে পারে। পাশাপাশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড গ্রহন করতে হবে। সামুদ্রিক মাছ এবং বাদাম এর ভালো উৎস। চিনি, কার্বোহাইড্রেট ও কোলেস্টেরযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখতে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে :
যেসকল কারণে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় তার প্রত্যেকটির সমধানে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রক্ত সংবাহন তন্ত্রের ক্রিয়াকর্ম স্বভাবিক রাখে, বিষন্নতা ও হতাশা দূর করে, দীর্ঘমেয়াদী নানা রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে, দেহের ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং পর্যাপ্ত ঘুম এনে দেয়। তাই নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমেই স্মৃতিশক্তি হ্রাস সমস্যার অর্ধেকের বেশী সমাধান করা সম্ভব।
৪. ধুমপান থেকে বিরত থাকাতে হবে :
মহামারীবিজ্ঞান বিষয়ক ’আমেরিকান জর্নাল অফ এপিডেমিওলজি’র এক গবেষনা প্রতিবেদনে কয়েকজন গবেষক তামাকজাত দ্রব্যকে ডিমনেশিয়া রোগের জন্য দয়ী করেন । তামাক সেবন কিশোর বয়সীদের স্মৃতিশক্তি ও বোধশক্তি কমিয়ে দেয় এবং মস্তিষ্ক ছোট হয়ে যেতে পারে। ধুমপান মানসিক চাপ বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জর্নাল এবং আমেরিকান কলেজ অফ নিউরোপসাইক ফার্মাকোলজি এর সরকারী প্রকাশনা ‘এসিএনপি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ধুমপান শরীরের ওজন ও ক্ষুধা হ্রাস করে । সিগারেটের ধোঁয়ায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী মিউটাজেন থাকে যা মানুষের মুখ, শ্বাসনালি,গ্রাসনালি এবং ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউ এইচ ও) ‘অন দ্যা গ্রোবাল টোবাকো এপিডেমিক ২০০৮’ নামক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, যেসমস্ত বস্তুর ব্যবহার বাদ দিলে অকাল মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস করা যায় তামাক এর মধ্যে শীর্ষে ।
৫.সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে :
বিভিন্ন কারণে আমদের সামাজিক সম্পর্কগুলো শিথিল হয়ে যায়। নিয়মিত জীবনযাপনের জন্য সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা একান্ত জরুরী। সামাজিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন একাকিত্ব জীবন হয়ে ওঠে হতাশা আর বিষন্নতায় পরিপূর্ণ যা মানব মস্তিষ্কের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। তাই স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সামাজিক সম্পর্ক ঠিক রাখতে হবে।
৬. অতিরিক্ত মানসিক চাপ কমাতে হবে:
অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক পভাব ফেলে। আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করে অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম। অতিরিক্ত মানসিক চপ অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেমের স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটায়।
অতিরিক্ত মানসিক চাপের বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো নিজেকে অপরাধী ভাবা, ক্লান্তি বোধ করা, মাথা ব্যথা, ঘুমের সমস্যা, কারণ ছাড়া হাসি বা কান্না। নিজের দোষ অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা কার। যেকোন বিষয়ের খারাপ দিক খুজে বের করা। কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, মোটা হওয়া বা শুকিয়ে যাওয়া। উচ্চ রক্তচাপ, ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেওয়া। হজম শাক্তি কমে যাওয়া প্রভৃতি। আর এ সকল কারণগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের মস্তিষ্কের ব্যপক ক্ষতি করে । তাই মানসিক চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে।