হাঁসতে নাকি জানেনা কেও, কে বলেছে ভাই এই শোন না কত হাঁসির খবর বলে যাই ।
আজকাল মানুষের মুখে তেমন একটা হাঁসি দেখাই যায় না । তাঁর উপর আবার করোনা ভাইরাসের মহামারীও কেরে নিয়েছে বহু মানুষের মুখের হাঁসি । কিন্তু আপনার হাঁসির কেন প্রয়োজন জানেনকি । তাহলে আসুন জানার চেষ্টা করি কেন আমাদের হাঁসার প্রয়োজন । আর কেনইবা হেঁসে থাকি আমরা ।
হাঁসি কিন্তু আসলে বেশ সিরিয়াস একটি বিষয় । হাঁসি সম্পর্কে যেসব বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে তা কিন্তু একেবারেই হেসে উড়িয়ে দেবার বিষয় নয় । যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটির কলেজ অব লন্ডনের অধ্যাপক, সোফিস স্কট লিখেছেন হাঁসি হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে মৌলিক আবেগের একটি যা ঠোট আর মুখের মাংসপেশিকে ঘীরে প্রকাশ পায় । হাঁসি মানুষের সবচেয়ে আদিম এবং সতস্প্রুত বহিপ্রকাশ আর এটি সার্বজনীন । অর্থাৎ পৃথিবীর সকল জাতি ভাষার মানুষ আর কিছু না হোক একে অপরের হাঁসি বুঝতে পারে । হাঁসির রয়েছে নানা ধরন । সুখে আনন্দে সাফল্যে আমরা সবাই কোন না কোনা সময় হাঁসি । হাঁসির কথা সুনলে হাঁসি, এমনকি বিব্রত কিছু ঘটলেও হাঁসি । তবে সবার সব কিছুতে হাঁসি পায় না । কোনটি হাঁসির বিষয় সেই ধারনাও সংস্কৃতি ভেদে একেক রকম । যেমন ধরুন কোন কিছু বাংলাদেশে হাঁসির হলেও পশ্চিম বিশ্বে কারো ঠোঁটের কোনে একটুও হাসিও ফুটুবে না । একেকজনের হাঁসির শব্দ ও ধরনো একেক রকম । এই যেমন ধরুন মুচকি হাঁসি, অট্ট হাঁসি, বোকা হাঁসি, লাজুক হাঁসি, বোবা হাঁসি ইত্যাদি ।
অনেক হাসাহাসি হল তাহলে এবার একটু সিরিয়াস কথায় আসি । হাঁসির সাথে আমাদের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ট । বাংলাদেস মানসীক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ডঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে মন খুলে হাসলে মানুষের শরীলে এন্ডরপিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের নিসরন বৃদ্ধি পায় এটি আমাদের মন ভালো করে দেয় । হরমন নিসরন শরীলে ব্যাথার অনুভূতি কমাতেও সাহায্য করে । অন্যদিকে কর্টিজন নামে একটি হরমন উদ্বেগ সৃষ্টির জন্য দায়ী । হাঁলে এই হরমনের নিসরন কমতে থাকে । তাঁর মানে মন খুলে হাসলে আপনার মানসিক চাপ কমে আসবে সেই সাথে কমে আসবে উচ্চ রক্ত চাপ আপনার হার্টের জন্য যা খুবই ভালো খবর । আর তাছাড়া হাঁসিলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় এমন কোন প্রমানো কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেও দিতে পারেনি । অতএব করোনা ভাইরাস সংক্রমনের উদ্বেগ দূর করতে হাঁসতে শুরু করুন । আর সবচেয়ে বড় কথা হাঁসি মানুষের শরীলে এন্টি বডি বৃদ্ধি করে যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । তাহলে এভাবেও বধোহয় বলা যায় হাঁসি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করে । যুক্তরাষ্ট্রের করা এক গবেষনায় ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বেসিটি বলছে, প্রতিদিন অতন্ত্য ১৫ মিনিট হাঁসিকে যঠেষ্ট ক্যালোরি বারানো হয় যা নাকি বছরে দুই কেজির মত ওজন কমাতে সক্ষম । অবশ্য মেকি হাঁসি নয় একেবারে সত্যিকারের হাঁসি । কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনি ওজন কমাতে সুধু হাসবেন । আর তাছাড়া বৈজ্ঞানিক গবেষনায় কিছুদিন পরপরি নতুন নতুন থিউরি আবিস্কৃত হয় তবুও চেষ্টা করে দেখতে অসুবিধা কি কারন হাঁসির যে কোন পার্শপতিকৃয়া নেই সেটি বধোহয় বলাই যায় ।
মানুষ যখন ভালো থাকে, সুখে থাকে, আনন্দে থাকে তখন সাধারনত সে প্রায় হাসে । ঢাকার মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ মোঃ ফারুক হোসেন বলেন , যারা খুবি বিষন্ন থাকে তারা প্রায়ই হাঁসতে ভুলে যায় তারা আসলে মানসিক ভাবে ভালো নেই । হয়তো সে কোন কারনে বিষন্ন কোন ব্যাথা বা যন্ত্রনায় কাতর । কেও যদি হাঁসতে না পারে যদি মনে হয় যে তিনি দিনের পর দিন চারপাশে হাঁসার জন্য কিছুই পাচ্ছেন না তাহলে সেটা কিন্তু বেশ চুশ্চিন্তার বিষয় ।
আশপাশে কোন কিছু না ঘটলেও কোন কারন ছাড়া কি জোর করে হাসা সম্ভব । কারন ছাড়া হাসলে লোকেই বা কি বলবে লোকের হাসিতে কান দেবেন না । কারন মনোবিজ্ঞানীরা বলছে মানুষ চাইলে নিজেরাই হাঁসির উপাদান তৈরি করে নিতে পারে । যেমন ধরুন একটা হাঁসির সিনেমা দেখলেন অনলাইনে নানা রকম হাঁসির বিডিও পাওয়া যায় সেগুলো খানিক্ষন দেখে নিলেন, রময় রচনা করলেন, প্রিয়জনের সাথে বসে হাসির অভজ্ঞতা বিনময় করলেন । আর সোশ্যাল নিডিয়ায় নানা রকম জোক্সের তো অভাব নেই । আর তাতেও যদি কাজ না হয় কয়েকজন মিলে নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করে জোর করে হাঁসতে পারেন দেখবেন কিছুক্ষন পর আপনি সত্যি হাঁসতে শুরু করেছেন ।
তাছাড়া বলা হয় হাঁসি নাকি সংক্রামক । ভারতে এরকম অনেক হাঁসির ক্লাব রয়েছে । যেখানে অনেক মানুষ এক সাথে হয়ে হাঁসিতে অংশ নেন । যার নাম দেওয়া হয়েছে লাফটার ইয়োগা । বেশ কিছু দিন হলো বিশ্বে এই লাফটার ইয়োগা বহু মানুষের হাঁসির যোগান দিচ্ছে । গবেষনার জন্যে ব্রিটিশ সাইন্স এসেসিয়েশন একটি লাফট ক্লাব পরিচালনা করেছিলো । সেখানে গবেষনায় অংশগ্রহনকারী অধ্যাপক রিচার্ট ওয়াজম্যান বলছে , হাঁসি সংকট মোকাবেলায় সহায়তা করে । করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির এই সংকট কালে আপনজন ও চারপাশে পরিচিত অনেকের আপদের মধ্যেও মানুষকে হাঁসতে হবে সেই পরামর্শই দিয়েছেন তিনি ।
তাহলে ভালো থাকতে , ও মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে হাঁসির ভিডিও দেখুন বা গল্প পরুন বেশি বেশি ।
ভাল থাকবেন সবাই হাঁসির মাঝে ডুবে থাকুন জীবন সুন্দর করুন ।