আসসালামু আলাইকুম,
প্রিয় শিক্ষার্থীরা,
আশা করি সবাই ভালো আছেন।
বরাবরের মতো এই পোস্ট এ ২০২১ সালের ৮ম শ্রেনির চারু ও কারুকলা এ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও একটি নমুনা উত্তর লিখে দিব।
নমুনা উত্তরটি হুবুহু না লিখে ধারনা নিয়ে লেখার অনুরোধ রইল।
এ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্ন –
সার্বজনীন উৎসব হিসেবে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য তোমার পরিবার/এলাকায় কি ধরণের উৎসবের আয়োজন করতে পারবে তার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন কর।
সংকেত-
১/বাংলা নববর্ষ কেন সার্বজনীন উৎসব বলতে পারি-ব্যাখা কর।
২/বাংলা নববর্ষ কিভাবে উদযাপন কর?
৩/তোমাদের এলাকায় বৈশাখি মেলা হয় কি না!হলে কি ধরণের পন্য বিক্রি করা হয়?
এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর-
০১। বাংলা নববর্ষকে কেন সার্জনীন উৎসব বলতে পারি- তার ব্যাখ্যা-
বাঙালির নববর্ষ এক অনন্য বৈশিষ্ট্যময় উৎসব। কেননা পৃথিবীতে প্রচলিত অধিকাংশ বর্ষপঞ্জির উৎপত্তি কোনাে না কোনাে ধর্মের সঙ্গে
সম্পর্কিত। কিন্তু বাংলা নববরে্ষর সঙ্গে ধর্মীয় অনুষঙ্গ নেই। মুলত কৃষিকাজ ও খাজনা সংগ্রহের ব্যবস্থাকে ঘিরে এর প্রচলন। পরে এর
সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যবসা-বাণিজোর দেনা-পাওনার হিসাব মেটানাে। দিনে দিনে পয়লা বৈশাখ হয়ে ওঠে এক সর্বজনীন সাংস্কৃতিক আনন্দ,
উৎসব।
ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে বাংলার সব মানুষের প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। কবি দাউদ হায়দার ডয়েচ ভেলের স্প্যানিশ
বিভাগের এক সাংবাদিককে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনকে বাঙালির কার্নিভাল’ বলে উল্লেখ করেন। বাঙালির এ কার্নিভালে
অসাম্প্রদায়িক দিকটি ফুটে ওঠে। বাংলাদেশ, ভারত ও প্রবাসী বাঙালির মধ্যে প্রাণ-সঞ্চারিত হয়। বেশ কিছু নতুন বিষয় সংযুক্ত হয়
পহেলা বৈশাখকে ঘিরে। সাহিত্যেও প্রভাব রয়েছে বৈশাখের বিরুপ ও বিভিন্ন উৎসব নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল থেকে হালের কবিসাহিত্যিকল বৈশাখ নিয়ে কবিতা-সাহিত্য রচনা করছেন।
বাঙালি ‘হালখাতা’ নামে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন করে হিসাৰ শুরু করে। বাংলা নববর্ষে কলকাতা বা বাংলাদেশে বেচাকেনায় ছাড় বা বাটা
দেওয়ার সংস্কৃতি আছে। কলকাতায় চৈত্র সেল’ নামে পরিচিত। তবে বাঙালির এ উৎসব অসাধারণ বৈশিষ্ট্যময়। বাংলা নববর্ষের এ
ঐতিহ্য মাটি ও মানুষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এখানে কোনাে জাতিভেদ ও ধর্মভেদ নেই। ঢাকা ও কলকাতার পাশাপাশি প্রবাসে ও
শহর-গ্রামে তরুণ-তরুণীসহ সবাই উৎসবে মেতে ওঠেন। রবীন্দ্রনাথের গানটি গেয়ে ওঠেন, এসাে হে বৈশাখ’। এজন্য বাংলা নববর্ষকে
সার্জনীন উৎসব বলতে পারি।
০২। বাংলা নববর্ষ যেভাবে উদযাপন করা হয়-
বাংলা নববর্ষ এ দেশের প্রার্চীনতম ঐতিহ্য। পহেলা বৈশাখের উৎসবের মশালিয়ে এ দেশের মানুষ এ ঐতিহ্যকে বাচিয়ে রেখেছে।
বৈশাখী মেলায় সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষের আনাগোনা। মৈত্রী-লীতির উদর মিলনক্ষেত্র। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশাের সবাই
আসে মেলায়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিকিকিনির জালা আর বিনােদনের টান। কৃষিক্ষেত্রে বৈশাখ মাসের গুরুত্ব অনেক।
মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। সমাট আকবর সিমেনন আন্ধেনের সময় (১৯৬৩ হিজরি) ফসলি সন’ নামে
যে সন প্রবর্তন করেন, তা কাগমে বাংলা সন নামে পরিচি। তখন হিজরি সনের ভিত্তিতে এ দেশে হয় গণনা
মতো। হিজরি বছর সৌর বছর থেকে ১৯ দিন ছোট হওয়ায় কৃষির হিসাব-নিকাশ এলােমেলাে হয়ে যেত। এতে কৃষকদের ফসলি
শসন পালনায় সমস্যা তৈরি হয়। ফলে কৃষকের কাছ থেকে জমিদারের খাজনা আদায় করতে সমস্যা দেখা দেয়। জমিদার ও
কৃষকদের সুবিধার্তে এ সমস্যা ভুল করতে মূলত বাংলা সনের প্রবর্তন করা হয়। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ কৃষিপ্রধান দেশ। তাই
বাংলা নববর্ষের উৎসবের আমেজটা কৃষকের কাছে বেশিই থাকে।
বৈশাখের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শােভাযাত্রা শুম্ভ হয়। বৈশাখী সাজে নানা
বাহারি মুখােশ, শােলার পাখি চাপা পুতুল হাতে হাতে নিয়ে চাক-থাল-বাশি বাধিয়ে ছারাে মানুষ অংশ নেন মঙ্গল
শােভাযাত্রায়। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে এ মঙ্গল
শােভাযাত্রার আয়ােজন শুরু হয়। ১৯১১ সালে চারুকলার শােভাযাত্রা জনপ্রিয়তায় নতুন মাত্রা লাভ করে। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০
নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে’ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে এ সাক্ষনীন শােভাযাত্রা।
ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে সব পেশার, সব শ্রেণির মানুষ শামিল হন মঙ্গল শােভাযাত্রায়। পহেলা বৈশাখ
উদযাপনে অংশ নিতে আসা নারীদের মাথায় শোভা পায় ফুল, মুখে মুখে আনাে, তরুণদের হাতে পতাকাসহ বিভিন্ন আয়ােজন।
০৩। আমার এলাকায় বাংলা নববর্ষে যে ভাবে পালন করা হয়-
বাংলা নববর্ষ খুবই আনন্দমুখর উৎসব। স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ, লােকশিল্পজাত পণ, কুটির শিল্পজাত ইতাদি পণ্য এই
মেলা দেখা যায়। শিশু-কিশােরদের মেললা মহিলাদের সাজ-সজ্জা এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদদ্রব্য ও নেন। চিড়া, মুভি, খৈ, বাতাসা ইত্যাদি এই মেলার বিশেষ
আকর্ষণ। মেলা নাঠে বিশাল পরিসরে ছোটদের হাতে রিরি বিভিন্ন মৃৎশিল্পের সামগ্রী এবং বিভিন্নি ধানের খই, মুড়ি,
তিলুয়া, কনা, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টি রকম খাদ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসতেন ব্যবসায়ীরা। পাওয়া যেত কাক
বাঁশের তৈরি গৃরুস্থালি জিনিসপত্র থেকে শুরু করে প্রসাধনসামগ্রী পর্যন্ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে ঐত্যি হারাচ্ছে এসব গ্রামীণমেলা।
এ ছাড়া রয়েছে হরেক রকমের কুটিরশিল্প আর হস্তশিন্ত্রের ব্যাক্তি প্রদর্শনী। দেখা মেলে বাংলার ঐতিহ্য মাটির তৈরি বিভিন্ন
পাত্র। এ মেলা বাঙালির আনন্দঘন এলাকায়ত সংস্কৃতির বাংলা ও বাংলাদেশের প্রতিমূর্তি। সময়ের প্রবাহে
মােগল প্রবর্তিত বাংলা নবষয়ে উদযাপন-আয়োজনে এসেছে পরিবর্তন।